হাজীগঞ্জের বাকিলা বাজারে আগুনে পুড়লো তিন যুবকের ভাগ্য। সেই সাথে এই তিন বন্ধুর ভবিষ্যতও পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। শত্রুতা উদ্ধারে একদল চিহ্নিত দুর্বৃত্ত রাতের অাঁধারে ওই তিন যুবকের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দিয়েছে। এতে করে যুবকদের কমপক্ষে ৩০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়ে গেছে। ঘটনাটি ঘটে গত বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক পৌনে ১টার দিকে। এ ঘটনায় প্রশাসন ও রাজনৈতিক ব্যক্তিবর্গ ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। ক্ষতিগ্রস্তদের একজন নাজমুল আহসান নয়ন এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিয়েছেন।
জানা যায়, বাকিলা এলাকার নাজমুল আহসান নয়ন, শামীমুর রহমান বাবু ও জসিম উদ্দিন যৌথভাবে ওয়ালটনের এক্সক্লুসিভ পণ্যের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান দেন। প্রতিষ্ঠানটি ভালো পণ্য বিক্রিতে ইতিমধ্যে এলাকায় বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। কিন্তু বুধবার দিবাগত রাত আনুমানিক পৌনে একটার দিকে একদল দুর্বৃত্ত শো-রুমের পূর্ব পাশের দেয়ালে থাকা একটি এডজস্ট ফ্যানের ফাঁকা জায়গা দিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে আগুন ধরিয়ে দেয়।
আগুনের লেলিহান শিখার প্রত্যক্ষদর্শী এবং ওই শো-রুমের সম্পত্তির মালিক রফিকুল ইসলাম পাটোয়ারী বলেন, রাতে বিভিন্ন লোকজনের ডাকচিৎকারের শব্দ শুনে বাজারে এসে দেখি দোকানের ভেতর থেকে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। এর পরেই তালা ভেঙ্গে সামনের সাটার খুলে অবস্থা দেখে উপস্থিত সকলে হতভম্ব হয়ে পড়ি ও আগুন নেভানোর চেষ্টা করি। ঘটনার প্রায় আধা ঘন্টা পরে রাত আনুমানিক দুইটার দিকে দমকল বাহিনী এসে আগুন নেভায়।
উক্ত শো-রুমের মালিকগণের মধ্যে শামীম বলেন, ঈদকে সামনে রেখে গত ২৩ আগস্ট মোকাম করি। যার মধ্যে সকল মালামাল অর্থাৎ ২৫টি ফ্রিজ, ডিপ ফ্রিজ ৫টি, এলইডি টিভি ১৭টি, ইস্ত্রি ১৫টি, সিসি টিভি ১৫টি, রাইস কুকার ১০টি, মোবাইল সেট ১০টি, ইউপিএস ১৫টি, অজন্তা ঘটি প্রায় ২০, হেয়ার ড্রায়ার, বেস্নন্ডার ৫টি, চার্জার ফ্যান ছোট-বড় মিলিয়ে প্রায় ১৫টি, ইলেকট্রিক চুলা ৫টি ও নগদ প্রায় ২৭ হাজার টাকা মিলিয়ে প্রায় ৩০ লাখ টাকার মালামাল পুড়ে গেছে।
ওয়ালটন এক্সক্লুসিভের মালিকগণের ১ জন নাজমুল আহসান নয়ন কান্নাজড়িত কণ্ঠে জানান, রাতে খবর পেয়ে এসে দেখি মালামাল সব পুড়ে গেছে। সাথে আমাদের ভাগ্যও পুড়ে গেছে। এলাকার একটি চিহ্নিত দুষ্ট চক্র পরিকল্পিতভাবে এই আগুন লাগিয়েছে। শো-রুমের বিদ্যুৎ বোর্ড পুরোপুরি ঠিক আছে। শো-রুমের পূর্ব পাশের দেয়ালের সাথে একটি এডজস্ট ফ্যান ছিলো। দেয়ালের বাইরে থাকা একটি ভ্যানগাড়ির উপর দাড়িয়ে এডজস্টের ভেতর দিয়ে শো-রুমে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। এর আগে মাস দুয়েক পূর্বে পাশের শো-রুমে চুরির ঘটনা ঘটে। নয়ন আরো বলেন, পরিকল্পিতভাবে লাগানো আগুনে আমার যে ক্ষতি হয়েছে তা কোনো দিন ফেরৎ পাবো না। আমার মতো আর অন্য কোনো ব্যাবসায়ীর কপাল যেনো এভাবে না পুড়ে তাই মামলা দায়ের করেছি। সঠিক তদন্তের পর প্রকৃত দোষীরা আইনের আওতায় আসুক এটাই আমার প্রত্যাশা।
গতকাল সকালে বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন হাজীগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুর রশিদ মজুমদার, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গাজী মাইনুদ্দিন, উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এমএ তাহের, বাকিলা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান ইউসুফ পাটোয়ারী, সাবেক চেয়ারম্যান মিজানুর রহমান মিলন, থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম, উপজেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আবু তালেব লিটন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক বিল্লাল হোসেন মজুমদার।
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ শাহ আলম বলেন, আমি সকালেই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। আর এ বিষয়ে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে নমুনা ও মালের সিজার লিস্ট তৈরি করার জন্যে একজন উপ-পরিদর্শককে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এ মামলাটি আমরা গুরুত্বসহকারে দেখবো।