প্রায় তিন মাসের হরতাল-অবরোধে শিক্ষাসূচি লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে। এখনো পুরোপুরি ক্লাস শুরু করতে পারেনি অনেক স্কুল। বেশির ভাগ স্কুলই শুক্র-শনিবার সাপ্তাহিক ছুটির দিন ক্লাস চালালেও সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পক্ষে তা সম্ভব হয়নি। কারণ অনেক স্কুলেই ছিল এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র। আর শুক্র-শনিবারেই হয়েছে এবারের সব পরীক্ষা। তবে শিক্ষার এই ক্ষতি পুষিতে নিতে বিশেষ ব্যবস্থা নিয়েছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের সঙ্গে আলোচনা করে ১০টি প্রস্তাব পাওয়া গেছে। এর মধ্যে গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল ও রোজার ছুটি কমানোর চিন্তাভাবনা রয়েছে। হরতাল-অবরোধে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নামি-দামি স্কুলগুলোই। শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, ক্ষতি পুষিয়ে নিতে গত সপ্তাহ থেকেই সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা হয়েছে। শিক্ষা কর্মকর্তা, শিক্ষাবিদ ও শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধানরাও মতামত জানিয়েছেন। এর ভিত্তিতে ১০টি প্রস্তাব প্রাথমিকভাবে গ্রহণ করা হয়েছে। আগামী ১৪ থেকে ২৮ মে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গ্রীষ্মকালীন ছুটি। আর ১৮ জুন থেকে ২১ জুলাই পর্যন্ত রমজান ও ঈদুল ফিতরের বন্ধ থাকার কথা রয়েছে। এই ছুটি বাতিল ও কাটছাঁট করার প্রক্রিয়া চলছে। জানতে চাইলে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (মাধ্যমিক-২) এ কে এম জাকির হোসেন ভূঞা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘শিক্ষার ক্ষতি কিভাবে পুষিয়ে নেওয়া যায় সে ব্যাপারে আমরা আলাপ-আলোচনা করেছি। বেশ কিছু মতামত পাওয়া গেছে। গ্রীষ্মের ছুটি বাতিলসহ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে ক্লাস নেওয়ার ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে। তবে এখনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি। মন্ত্রী এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবেন।’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে আসা প্রস্তাবগুলো হলো গ্রীষ্মকালীন ছুটি বাতিল, রোজার ছুটি কমিয়ে আনা, ক্লাসের সময় বাড়িয়ে যত দূর সম্ভব সিলেবাস শেষ করা, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস গ্রহণ, বাসায় সিলেবাস শেষ করাতে অভিভাবকদের তাগিদ, ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলগুলোতে ওয়েবসাইটে হোমওয়ার্ক প্রদান, অন্যান্য ছুটি কমিয়ে বিশেষ ক্লাস ও মডেল টেস্ট নেওয়া, হরতাল-অবরোধ শেষেও সাপ্তাহিক ছুটির দিনে প্রয়োজনে ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া, শিক্ষার্থীদের নিজ উদ্যোগে ওয়ার্কশিট ও হ্যান্ডআউট সংগ্রহ করা এবং ভবিষ্যতে হরতাল-অবরোধেও ক্লাস চালিয়ে যাওয়া। শিগগির এসব প্রস্তাব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানদের জানিয়ে দেওয়া হবে বলে মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হরতাল-অবরোধে সবচেয়ে সংকটে পড়ে নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো। কারণ পাড়া-মহল্লা বা একটু আশপাশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে হরতাল-অবরোধের মধ্যেও কম-বেশি ক্লাস হয়। কিন্তু বড় স্কুলগুলো তা পারেনি। রাজধানীর আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, মতিঝিল, ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়, মতিঝিল মডেল স্কুল অ্যান্ড কলেজসহ বেশ কিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হরতালে অঘোষিত বন্ধ থাকে। স্কুল খোলা থাকলেও শিক্ষার্থীরা খুব একটা আসে না। তবে উত্তরার রাজউক মডেল কলেজ, মিরপুরের মনিপুর স্কুল অ্যান্ড কলেজে কম-বেশি ক্লাস হয়েছে। জানতে চাইলে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমরা মনে হয় গত বুধবার এ বছরের প্রথম পূর্ণাঙ্গ ক্লাস করালাম। হরতালে সাধারণত শিক্ষার্থীরা আসে না। আমরা শিক্ষার্থীদের বলে দিয়েছি, আগামী রবিবার থেকে পুরোদমে ক্লাস হবে। নতুন কোনো ছুটির চিন্তাভাবনা নেই। সামার ভ্যাকেশন থাকবে না। সঙ্গে সাপ্তাহিক ছুটির দিন শনিবারও ক্লাস হবে। এভাবে আমরা সিলেবাস শেষ করার চিন্তা করছি।’ উদয়ন উচ্চ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের অধ্যক্ষ ড. উম্মে সালেমা বেগম বলেন, ‘রবিবার থেকে আমরা স্কুল খুলে দেব। এভাবে আর চলতে পারে না। জীবনই তো চলছে ঝুঁকির মধ্যে। গ্রীষ্মের ছুটিও থাকবে না। তবে শিক্ষকদের জন্য একটু সমস্যা হয়ে গেল। কারণ হরতাল-অবরোধেও তাঁরা নিয়মিত এসেছেন। এই তিন মাসে শিক্ষার যে ক্ষতি হয়ে গেল তা পূরণ হওয়ার নয়।’ বছরের প্রথম দিনই চার কোটি ৪৪ লাখ শিক্ষার্থীকে প্রায় ৩৩ কোটি বই বিতরণের মধ্য দিয়ে শুরু হয়েছিল এবারের শিক্ষাবর্ষ। বই উৎসবের আমেজ কাটতে না কাটতেই ৬ জানুয়ারি থেকে শুরু হয় বিএনপি জোটের অবরোধ। অধিকাংশ স্কুলেই ৭-৮ জানুয়ারি থেকে ক্লাস শুরু হওয়ার কথা ছিল। এর কিছুদিন পর হরতালেরও ডাক দেওয়া হয়। প্রায় দুই মাস ধরে প্রতি কর্মদিবসেই চলছে হরতাল। এই অবস্থায় ২ ফেব্রুয়ারি থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু হওয়ার কথা থাকলেও তা হয়নি। এসএসসির সব পরীক্ষাই নেওয়া হয়েছে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে। স্কুলগুলো ছিল অঘোষিত
শিরোনাম:
রবিবার , ২৫ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১১ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।