মিজান লিটন-
নিজেদের বাড়ির ভাড়াটিয়ার ফুটফুটে শিশু সনত্দান নাবিল রহমান ইমন (৬)কে গলাটিপে হত্যা করেছে সোহাগ (২২)। হত্যা করে সে একেবারেই স্বাভাবিক থেকেছে এবং অনেক নাটকীয়তার আশ্রয় নিয়েছে। কিন্তু বিধিবাম ! চৌকস পুলিশ অফিসার চাঁদপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলামের জালে সে আটকা পড়েছে। ঘাতক সোহাগ রেহাই পেলো না। ঘটনার ১৩ দিনের দিন গত রোববার তাকে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের নির্দেশে আটক করে। এর আগেই পুলিশ তাকে সন্দেহের চোখে রেখে পর্যবেৰণ করছিল। এরপর নিশ্চিত হয়ে তাকে আটক করা হয়। আটকের পর সে খুনের পুরো ঘটনা পুলিশের কাছে বলে এবং তার দেখানো জায়গা থেকে শিশু ইমনের স্কুল ব্যাগ উদ্ধার করা হয়।
ফরিদগঞ্জের চান্দ্রা শিশু কিশোর কিন্ডারগার্টেনের পেস্ন গ্রুপের ছাত্র নাবিল রহমান ইমন (৬) গত ১ অক্টোবর মঙ্গলবার স্কুল থেকে বাড়ি ফেরার পথে নিখোঁজ হয়। নিখোঁজ হওয়ার কিছুৰণ পর ইমনের মা রাশেদা বেগমের মোবাইলে ইমনের মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা দাবি করা হয়। কিন্তু এরপরই সে মোবাইলটি বন্ধ পাওয়া যায়। সেদিন সম্ভাব্য অনেক জায়গায় ইমনকে খোঁজাখুঁজি করে না পেয়ে তার বিদেশ ফেরৎ বাবা মিজানুর রহমান ২ অক্টোবর বুধবার ফরিদগঞ্জ থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০ (সংশোধনী/২০০৩)-এর ৭/৮/৩০ ধারায় মামলা (নং- ৩) করেন।
মামলা দায়েরের পর তদনত্দকারী কর্মকর্তা ফরিদগঞ্জ থানার এসআই মোঃ আখতার হোসেন ৩ অক্টোবর বৃহস্পতিবার রাতে মানিক ও হারুন নামে দুই জনকে সন্দেহভাজন হিসেবে আটক করেন। পরে মফিজ নামে আরেকজনকে আটক করা হয়। এরা বর্তমানে জেল হাজতে রয়েছে। এদিকে অপহরণের চার দিনের দিন ৪ অক্টোবর শুক্রবার দুপুরে চান্দ্রা বাজারের ডাস্টবিনে বসত্দাবন্দী অবস্থায় শিশু ইমনের গলিত লাশ পাওয়া যায়। এরপর পুলিশ আরো তৎপর হয় খুনিকে ধরতে। তারা নানা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার করে। এরই মধ্যে নিহত ইমনের পরিবার চান্দ্রা বাজার এলাকায় যে বাড়িতে ভাড়া থাকতো সে বাড়ির মালিক সোলায়মানের ছেলে সোহাগকে সন্দেহ হয় পুলিশের। নানা বিচার বিশেস্নষণ এবং গোপন সূত্রে নিশ্চিত হয়ে গত রোববার বিকেলে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ঘাতক সোহাগকে তাদের বাসা থেকে আটক করে থানায় নিয়ে আসে। ওই রাতে সে জিজ্ঞাসাবাদে পুলিশের কাছে ইমনকে খুন করার বিষয়টি স্বীকার করে।
এ বিষয়ে বিসত্দারিত জানানোর জন্যে গতকাল সোমবার সকাল ১১টায় পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর তাঁর কার্যালয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন। এ সময় তিনি সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ঘটনাটি লোমহর্ষক এবং অত্যনত্দ সংবেদনশীল হওয়ায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলামকে এর রহস্য উন্মোচনসহ তদনত্দ কাজ তদারকির দায়িত্ব দেয়া হয়। তিনি মামলার তদনত্দকারী কর্মকর্তা এবং জেলা গোয়েন্দা শাখার অফিসারদের সমন্বয়ে মামলার রহস্য উন্মোচনে নিবিড়ভাবে কাজ করেন।
পুলিশ সুপার বলেন, মামলার তদনত্দকালে আমাদের গোয়েন্দা কার্যক্রম, গোপন সূত্র ও তথ্য প্রযুক্তি বিশেস্নষণসহ অন্যান্য কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা গত ১৩ অক্টোবর রোববার বিকেলে আসামী সোহাগ (২২), পিতা সোলায়মানকে চান্দ্রা বাজারস্থ তাদের বাসা থেকে গ্রেফতার করি। এরপর তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে সে ইমনকে খুন করেছে বলে স্বীকার করে। খুনের ঘটনা সম্পর্কে ঘাতক সোহাগ পুলিশকে জানায়, টাকার জন্যই সে ইমনকে হত্যা করেছে। ঘটনার দিন সে চান্দ্রা বাজারে অপেৰায় থাকে। ইমন স্কুল থেকে যখন বাড়ি ফিরছিল তখন সে তাকে কোলে নিয়ে তার দোকানের ভেতর ঢুকিয়ে সার্টার বন্ধ করে দেয়। এরপর সে ইমনকে একটি চিপস কিনে দেয়। এরই মধ্যে সে তার ব্যবহৃত মোবাইলে অন্য সীম ঢুকিয়ে কণ্ঠ বিকৃত করে ইমনের মায়ের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ১০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। এর কিছুৰণ পরে সে ইমনকে গলা টিপে হত্যা করে। হত্যার পর সে ইমনের নিথর দেহ দোকানের ভেতর রেখে দোকান বন্ধ করে চলে যায় এবং ইমনের মায়ের সাথে খোঁজাখুজি করে। এরপর রাত ১০টায় বিদু্যৎ চলে গেলে সে ইমনের লাশ বসত্দায় বেঁধে বাজারে ময়লার স্তূপে ফেলে দেয়। পুলিশ সুপার জানান, সোহাগকে গ্রেফতারের পর পুলিশ তার দেখানো মতে তার দোকানের পেছন থেকে ইমনের স্কুল ব্যাগ, দোকানের ভেতর একটি ঘড়ির বাঙ্ হতে চাঁদা চাওয়ার ব্যবহৃত সীম কার্ড উদ্ধার করে।
প্রেস ব্রিফিংকালে উপস্থিত ছিলেন অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ কামরুল ইসলাম, এএসপি হেড কোয়ার্টার শচীন চাকমা, এএসপি সদর সার্কেল সৈকত শাহীন, ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হক, চাঁদপুর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মাহবুব মোরশেদ, মামলার তদনত্দকারী কর্মকর্তা এসআই মোঃ আখতার হোসেন প্রমুখ। আটক সোহাগকে গতকাল আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়।