ফরিদগঞ্জ: বাংলায় প্রচলিত একটি প্রবাদ আছে, কাজীর গরু কাগজে আছে, কিন্তু গোয়ালে নেই। শিক্ষকরা হচ্ছেন মানুষ গড়ার কারিগর; জাতির বিবেক। প্রচলিত আছে মানুষকে ভূতে ধরলে তা তাড়ানোর জন্য সরিষার প্রয়োজন। কিন্তু সরিষার ভেতর যদি ভূত ঢুকে যায়, তবে তা তাড়াবে কে?
ফরিদগঞ্জ উপজেলার তথাকথিত একটি বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকরা সরকারি চাকুরির জন্য যে সকল অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণ করেছেন!
ছাত্রের নাম রাকিব, পিতা আব্দুল কাদের, মজুমদার বাড়ি, গ্রামঃ ত্রিদোনা, উপজেলা ফরিদগঞ্জ, জেলাঃ চাঁদপুর। সে ২০১০ সালের ত্রিদোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রথম শ্রেণীর ছাত্র। যা বিদ্যালয়রে ২০১০ সালের ভর্তি রেজিষ্ট্রার খাতায় উল্ল্যেখ রয়েছে। কিন্তু সরেজমিনে গিয়ে ওই বিদ্যালয়ে এই নামে কোন ছাত্র পাওয়া যায়নি। ২০০৯ ও ২০১০ সালের ভর্তি রেজিস্টারের মধ্যে আরো কয়েকশ’ ছাত্র-ছাত্রীর নাম উল্লেখ আছে। কিন্তু অনুসন্ধানে দেখা যায় ভর্তি রেজিঃ শতভাগ এন্ট্রি করা নামই ভূয়া। ২০০৯ সালে যাদের প্রথম শ্রেণীতে উত্তীর্ন দেখানো হয়েছে ২য় শ্রেণীতে ওঠার পর তাদের পিতা মাতার নাম পাল্টে গেছে। পাল্টে গেছে বাড়ির নাম।
বর্তমানে বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটি ১৯৯৪ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত ১৮ বছরে বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষা সমাপনী পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করেছে এমন কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। কিন্তু তারা দাবি করছে, দীর্ঘদিন থেকে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করে আসছে।
২০০২ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত বিদ্যালয়ে কোন কার্যক্রম চলমান না থাকলেও বিদ্যালয়ের ভর্তি রেজিষ্ট্রার খাতা ও মাসিক সভার কার্যবিবরণীতে রয়েছে বিগত দিনের বিদ্যালয়ের কার্যক্রম পরিচালিত হয়েছে মর্মে রেজুলেশেন খাতা। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, এই ১১ বছরের রেজুলেশন খাতা বিদ্যালয়ে লেখা হয়নি। এই খাতা লেখার দায়িত্বে ছিলেন চাঁদপুর জেলা শিক্ষা অফিসের এক কর্মকর্তা। সভায় যে সকল ব্যক্তির উপস্থিতির স্বাক্ষর রয়েছে তার কথা উল্লেখিত ব্যক্তিদ্বয়ের অনেকেই জানেন না। কয়েকজনের সাথে মোবাইল ফোনে কথা বললে তারা তাদের স্বাক্ষরটিও জাল করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন। তারা স্বাক্ষর জালজালিয়তির জন্য আইনের আশ্রয় নিবেন বলে জানান। তাদের বিরুদ্ধে তৎকালীন উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার ও ৫নং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যানের স্বাক্ষর জাল করার অভিযোগ রয়েছে।
এছাড়া বর্তমানে তথাকথিত ওই বিদ্যালয়ে কর্মরত কয়েকজন শিক্ষকের নিয়োগ আবেদনপত্রের কোন স্থানে সরকারারি/বেসরকারি আবার কোথাও রেজিঃ প্রাথমিক বিদ্যালয়ে নিয়োগের প্রসঙ্গ উল্লেখ আছে। যাতে একাধিক স্থানে কাটাকাটি ভুলে ভরা।
তৎকালীন জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ২০১২ সালের জুন মাসের তিন তারিখে বিদ্যালয়টি স্থায়ী রেজিষ্ট্রেশনের আবেদনের নিমিত্তে বিদ্যালয়ের কার্যক্রম সরেজমিনে পরিদর্শন করেন। তখন ২৫২ জন ছাত্র-ছাত্রীর মধ্যে ৫ম শ্রেণীতে ৩০ জনের মধ্যে ৪ জন, ৪র্থ শ্রেণীতে ৪৫ জনের মধ্যে ৫জন, তৃতীয় শ্রেণীতে ৫৯ জনের মধ্যে ৫জন, ২য় শ্রেণীতে ৫৮ জনের মধ্যে ১১জন ও প্রথম শ্রেণীতে ২০ জন ছাত্র-ছাত্রীর উপস্থিতিতি দেখতে পায়। ৫টি শ্রেণী মিলে হাজিরা খাতায় ২৫২ জনের নাম থাকলেও সর্বমোট ৪৫জন ছাত্র-ছাত্রী উপস্থিত ছিল। এসময় ২০১১ সালের বার্ষিক পরীক্ষার কোনো উত্তরপত্র পাওয়া যায়নি। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ পূর্বের বই বিতরণ রেজিস্টার দেখাতেও ব্যর্থ হন। এমনকি ছাত্রহাজিরা রেজিঃ, ভর্তি রেজিঃ এবং ফলাফল রেজিস্টারে শিক্ষার্থীদের তথ্য হালফিল পাওয়া যায়নি।
উপজেলা পরিসংখ্যান অফিস সূত্রে জানা যায়, ওই গ্রামে একটি এবতেদায়ী মদ্রাসা রয়েছে। কিন্তু কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। সরেজমিনে গিয়ে ত্রিদোনা এবতেদায়ী মাদ্রাসায় পরিচালিত তথাকথিত বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণীতে উপস্থিত শিক্ষর্থীদের সাথে কথা বললে তারা, জানান পূর্বে এই স্থানে বিদ্যালয় না থাকাতে তারা পার্শ্ববর্তী নূরানী মাদ্রাসা ও প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়াশোনা করত। এই স্থানে পূর্বে শিক্ষা কার্যক্রম ছিল না বলে জানান তারা।
এলাকাবাসীসহ সকলের দাবি কতিপয় ব্যক্তির নিজ স্বার্থ চিন্তুা বাদ দিয়ে শিক্ষাক্ষেত্রে অনগ্রসর ফরিদগঞ্জ ত্রিদোনা গ্রামে সরকারের প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত প্রাথমিক বিদ্যালয়ে যথাযথভাবে শিক্ষাকার্যক্রম শুরু করা হোক। তা না হলে বর্তমানে বঙ্গবন্ধু কন্যা জননেত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষাক্ষেত্রে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রাথমিক শিক্ষার উন্নয়নের জন্য যে অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তা বিফলে যাবে। বাংলার প্রচলিত প্রবাদ কাজীর গরুর মত তথাকথিত ত্রিদোনা বেসরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অনিয়ম আর জালজালিয়াতি তদন্ত স্বাপেক্ষে দোষীদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়ার দাবি সংশ্লিষ্ট সকলের।
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ৭ ডিসেম্বর, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ২৩ অগ্রহায়ণ, ১৪৩০ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।