মতলব উত্তর: সরকারের নিয়মনীতিকে তোয়াক্কা না করে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতার মধ্য দিয়ে চলছে চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার বিল্লাল স্যারের গাজীপুর কেএল উচ্চ বিদ্যালয়। তার বিরুদ্ধে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ, এসএসসি’র টেষ্ট পরীক্ষায় ৬/৭ বিষয়ে ফেল করাদের থেকে অতিরিক্ত হারে টাকা নিয়ে এসএসসি’র চুড়ান্ত পরীক্ষার জন্য মনোনীত করা, এসএসসি ও জেএসসি পরীক্ষার কেন্দ্র ফি’র নামে অতিরিক্ত হারে টাকা উত্তোলন, স্কুলের পরীক্ষাতেও প্রতি শ্রেনীতেই মাত্রাতিরিক্ত হারে ফি উত্তোলনসহ স্কুলের আভ্যন্তরীণ বিভিন্ন পর্যায়ে টাকা আত্মসাতেরও অভিযোগ রয়েছে। এছাড়াও স্কুলের কাজে কুমিল্লা শিক্ষাবোর্ড, জেলা শিক্ষা অফিস, উপজেলা শিক্ষা অফিস ও স্কুল পরিচালনা কমিটির সভাপতির স্বাক্ষর নিতে ঢাকা যেতে হবে নাম প্রায়ই স্কুলে অনুপস্থিত থাকেন।
১৯৭০সালে প্রতিষ্ঠিত এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজিং কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে অদ্যবদি সরকারের কোন নিয়মনীতিই অনুসরন করা হয়নি। এমনকি এখানে কখনোই অভিভাবক শ্রেনীতে নির্বাচন করা হয়নি এবং যারা অভিভাবক শ্রেনীর সদস্য হয়ে অবৈধ কমিটিতে আসছেন তাদের কারোই ছেলে-মেয়ে এই স্কুলে পড়ে না। স্বপরিবারে শহরে বসবাস করেন এমনরাই বেশীরভাগ সময়ের জন্য অভিভাবক শ্রেণীর সদস্যের দায়িত্ব পালন করে আসছেন। স্কুল প্রতিষ্ঠার গত ৪৩ বছরেও এই স্কুলে পরিচালনা কমিটির কোন নির্বাচন হয়নি। স্থানীয় সচেতন অভিভাবকরা স্কুল ম্যানেজিং কমিটির অভিভাবক শ্রেণীতে নির্বাচনের দাবী করে আসলেও স্থানীয় লোকদের উপেক্ষা করা হচ্ছে বরাবরই। সকল কাজেরই কাজী নামে পরিচিত এই প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেন। তিনি ২০০৬ সালে এই স্কুলে যোগদানের পর থেকে প্রতিবারই বিভিন্ন কৌসল ও সরকারের নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করে দুর্নীতি করার জন্য নিজের পছন্দমতো লোকদের দিয়ে ম্যানেজিং কমিটি গঠন করে তা বোর্ডে জমাদিয়ে তিনি তার স্বার্থ হাছিল করে আসছেন। এরই প্রেক্ষিতে, গত ১২জুন স্থানীয় অভিভাবকদের পক্ষে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিমালা-২০০৯ এর ধারা লংঘন করে গোপনে অবৈধ নির্বাচনের উদ্দেশ্যে প্রধান স্বচ্ছ নির্বাচনের দাবীতে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন।
অনুসন্ধানে জানা যায়, স্কুলের আবেদনের প্রেক্ষিতে এই গাজীপুর কেএল উচ্চ বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের জন্য উপজেলার ৩৫৯ নং স্মারকে গত ৩০ মে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা সহকারী মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আশ্রাফুল আলমকে প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ করেন। তফসিল অনুযায়ী প্রার্থী হিসাবে আবেদনপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ধার্য্য ছিল ৬জুন, আবেদনপত্র বাছাইয়ের শেষ তারিখ ৮জুন, প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১১জুন এবং নির্বাচনের তারিখ ধার্য্য ছিল ২৬জুন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তার হীন স্বার্থ চারিতার্থ করার জন্য স্থানীয় ভাবে কোন রকমের প্রচার না করে এই স্কুলে যাদের সন্তান পড়ে না কিন্তু নিজের পছন্দনীয় এমন ৫জনকে অভিভাবক শ্রেণীতেসহ অন্যান্য শ্রেনীর সদস্যের জন্য প্রার্থী হিসাবে আবেদন জমা দেন এবং যা বৈধ বলে বিবেচিত হওয়ায় গত ১১জুন তাদেরকেই বিনা প্রতিদ্বন্ধীতায় নির্বাচিত বলে ঘোষনা করা হয়। অভিভাবক শ্রেনীতে অবৈধভাবে নির্বাচিতরা হলেন, আরিফ আহমেদ (স্বপরিবারে ঢাকায় থাকেন) , ব্যাংকে চাকুরী করেন সেলিম জাহাঙ্গীর (স্বপরিবারে চাঁদপুরে থাকেন) , অলিউল্যাহ কাজী, নিজাম উদ্দিন আহমেদ এবং সংরক্ষিত মহিলা সদস্যা জাকিয়া সুলতানা। এর মধ্যে ২০১১-১২ ইং সালের অবৈধভাবে গঠিত ম্যানেজিং কমিটিতে (নিজের কোন সন্তান এই স্কুলে না পড়লেও এই সেলিম জাহাঙ্গীর, অলি উল্যাহ কাজী ও জাকিয়া সুলতানা ছিলেন। প্রধান শিক্ষক বিলাল হোসেনের অনিয়ম, দুর্নীতি ও চরম স্বেচ্ছাচারিতা স্থানীয় সাধারন অভিভাবকরা মারাত্বকভাবে খুব্ধ।
অবৈধ নির্বাচনের ব্যপারে সকল অনিয়মের কাজের কাজী প্রধান শিক্ষক বিল্লাল হোসেনের সাথে কথা হলে তিনি প্রথমে ২০১৩ সালের অবৈধ নির্বাচনের ব্যাপারে সম্পূর্নই অস্বীকার করেন। কিন্তু তাৎক্ষনিক প্রমাণ সাপেক্ষে অবৈধ কমিটির ব্যপারে বলা হলে তখন তিনি সবই স্বীকার করেন এবং বলেন, স্কুল প্রতিষ্ঠাতা পরিবার আমাকে যেভাবে বলেন আমি সেভাবেই দায়িত্ব পালন করে আসছি। এভাবে সরকারের নিয়মনীতিকে উপেক্ষা করার করার কথা বলা হলে তিনি বলেন আমি কি করবো বলেন ?
এদিকে অবৈধ কমিটি ঠেকাতে স্থানীয় এক অভিভাবক ২ শতাধিক অভিভাবকের স্বাক্ষর নিয়ে অবৈধ কমিটি স্থগিত রাখার জন্য কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানের বরাবরে একটি অভিযোগপত্র দাখিল করেন।
অবৈধ কমিটির শিক্ষক প্রতিনিধি দীপংকর স্যারের সাথে কথা হলে তিনি ২০১৩ সালের স্কুল কমিটির ব্যপারে কিছুই জানেন না বলে জানান।
অবৈধ কমিটির ব্যাপারে প্রিজাইডিং অফিসার ও সহকারী মাধ্যমিক অফিসার আশ্রাফুল আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, বিধি মোতাবেক আমি প্রিজাইডিং অফিসার হিসাবে নিয়োগ পাবার পর স্কুলকে মনোনয়নের জন্য চিঠি দেই এবং প্রধান শিক্ষক সঠিক সময়ে মনোনয়নগুলো আমার কাছে জমা দেন। কোন পদেই অতিরিক্ত প্রার্থী না পাওয়ায়, বাছাইতে সবগুলো বৈধ থাকায় এবং নির্দিষ্ট সময়ে কেউ প্রত্যাহার না করায় আমি সে মোতাবেক ফলাফল ঘোষনা করি।
এ ব্যাপারে মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, অভিযুক্ত স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের ব্যাপারে একটি লিখিত অভিযোগ আসার পর আমি তা দেখার জন্য একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে দিয়েছি।