চাঁদপুর শহরে হাস্যকর বিদ্যুতের বকেয়া বিল নিয়ে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে সাধারণ গ্রাহকরা। মাত্র একটাকা বকেয়ার জন্যে বন্ধ রাখা হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। এতে ফুঁসে উঠছে সাধারণ মানুষ। অবশ্য বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, সরকারি রাজস্ব আদায় করতেই এমন সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
জানা গেছে, চাঁদপুরে মাত্র একটাকার জন্যে গ্রাহকের অজান্তেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। বর্তমান প্রিপেইড মিটারের যুগে এসেও এমন ভোগান্তিতে মানুষ অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে। শহরের নাজিরপাড়ার বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম, গুয়াখোলার তানভির, মজিবর রহমান, সিদ্দিকুর রহমানসহ এমন শত শত গ্রাহক ১-১০০ টাকার নিচে বিল নিয়ে ধর্ণা দিচ্ছেন বিদ্যুৎ অফিস, কম্পিউটারের দোকান আর ব্যাংকে। এ নিয়ে ক্ষোভে ফুঁসে উঠছে সাধারণ গ্রাহকরা। আরো জঘন্য বিষয় হচ্ছে, ২০১৮ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে বকেয়া বিল পরিশোধ করে প্রিপেইড মিটার নিয়ে ব্যবহার করার পর হঠাৎ করে এ মাসে বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয়া হয়। বিদ্যুৎ অফিসে এসে জানা যায়, সামান্য কিছু টাকা বকেয়া রয়েছে। সাধারণ মানুষের দাবি, একটাকার জন্যে খরচ হচ্ছে কয়েকশ’ টাকা। আর ভোগান্তিরতো অন্ত নেই। দীর্ঘদিন ধরেই এমন ভোগান্তি হচ্ছে।
এনালগ মিটারের দিন শেষ। ডিজিটাল মিটারেরও দিন ফুরিয়েছে। এখন চলছে প্রিপেইড মিটারের ব্যবহার। টাকা শেষ হলেই রিচার্জ করে নিতে হয়। তবুও বিদ্যুৎ অফিস থেকে কোনো নোটিস না দিয়েই হঠাৎ করে মিটার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। মাত্র একটাকা বকেয়া পড়লেই গ্রাহকের অজান্তেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে বিদ্যুৎ সরবরাহ। এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছে হাজার হাজার গ্রাহক। প্রতিদিন ১ টাকা বিল দিতে বাড়তি খরচ করতে হচ্ছে কয়েকশ’ টাকা। সময় নষ্ট হচ্ছে ঘণ্টার পর ঘণ্টা।
খোঁজ নিলে যে তথ্য জানা যায়, তাতে চোখ কপালে উঠারই মতো। কারো ১ টাকা বকেয়া, কারো বা ২ টাকা। তাতেই বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে মিটার। বকেয়া পরিশোধের জন্যে দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে তা পরিশোধ করতে হয়। এতে গ্রাহকদের ভোগান্তির নতুন মাত্রা যোগ হয়েছে। অবশ্য বিদ্যুৎ অফিস থেকে বলা হচ্ছে একটাকা ব্যাংকে জমা নেবে না তাই সেটা ১০টাকা করে দিচ্ছেন।
রাব্বানি, মিরাজুল ইসলাম, রুবি বেগম নামে কয়েকজন গ্রাহক অভিযোগ করে বলেন, ১টাকা থেকে বিভিন্ন অংকের বিলের অজুহাত দেখিয়ে আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হচ্ছে। অথচ পূর্বে বিষয়টি আমাদের জানানো হয়েনি। এমনকি নোটিসও করা হচ্ছে না। আমরা যখন বিদ্যুতের মিটারে টাকা লোড করতে যাই তখন বলা হচ্ছে মিটার লক করে দেয়া হয়েছে। বাধ্য হয়ে ছুটে আসতে হয় বিদ্যুৎ অফিসে। এখানে এসে জানা যায়, এক টাকা কারো দুই টাকার জন্যে এমন হয়রানি করা হচ্ছে।
আবার কেউ কেউ অভিযোগ করে বলেন, দেড় বছর আগের সামান্য বিলের জন্যে মিটার লক করে রাখা হয়েছে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই বকেয়ার পরিমাণ হয় ৫০ টাকার নিচে। অথচ এমন ছোট ছোট বকেয়া থেকেই থাকে, তবে টাকা লোড করার সময়ইতো কেটে নিতে পারে। কতো টাকাইতো কেটে নেয়, সাধারণ মানুষ কি সেখবর রাখে। অযথা কেন আমাদের হয়রানি করে সময় নষ্ট ও আর্থিক ক্ষতি করা হচ্ছে?
জাতীয় বিদ্যুৎ শ্রমিকলীগ চাঁদপুর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মোঃ শাহ আলম জানান, বিষয়টি নিয়ে ঊর্ধ্বতনদের সাথে কথা বলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। আমরা আগেই বিষয়টি জেনেছি। তবে সাধারণ মানুষের ভোগান্তি হোক তা আমরা কখনোই চাই না।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড চাঁদপুরের সহকারী প্রকৌশলী মোঃ শাহাদাত হোসেন জানান, এক টাকা হলেও সরকারি রাজস্ব আমাদের আদায় করতে হবে। তবে আগে বড় অংকের টাকা আদায় করা হয়েছে। এখন ধাপে ধাপে ছোট অংকের বকেয়া আদায় করা হচ্ছে। ভোগান্তি হলেও কিছুই করার নাই।
চাঁদপুর বিদ্যুৎ বিভাগের তথ্য মতে, চাঁদপুর শহরের নতুন বাজার এলাকায় ৫৪ হাজার গ্রাহক রয়েছে। বৈদ্যুতিক লাইন রয়েছে ২ হাজার ৯০ কিলোমিটার। এর মধ্যে প্রায় ৪৫ হাজার গ্রাহক প্রিপেইড মিটারের আওতায় চলে এসেছে।