বড় সখের স্বপ্ন ছিলো চাঁদপুর শহরে এসে নিজস্ব একটি বাসস্থান তৈরি করা। সেই স্বপ্ন সত্যি হলেও স্থানীয়দের রোষানলে পরে এখন জেল খাটছেন প্রফেসর পাড়ার জসীম হাজী। বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়, মহামায়া হাজী বাড়ির আরশাদ হাজীর বড় ছেলে জসীম হাজী (৪০)। দীর্ঘ অনেক বছর বিদেশে ছিলো। বিদেশ থেকে দেশে ফিরে বিয়ে করে চাঁদপুর প্রফেসর পাড়াস্থ মাঝি বাড়ির কুদ্দুস মাঝির মেয়ে মুন্নিকে। বিয়ের পরই শ্বশুড় বাড়ির পাশে একখন্ড জমি কিনে সেখানে বাসস্থান নির্মাণ করে ভাড়া দেয় এবং নিজে চলার জন্য বাড়ির পাশেই একটি দোকান দেয়। সব কিছু ভালো চললেও স্থানীয়দের রোষানলে পড়ে যায় জসীম হাজী। এলাকার কিছু লোকের একই মন্তব্য, মহামায়া থেকে কুদ্দুস মাঝি একটা জামাই আইনা সবার রিজিক বন্ধ কইরা দিতাছে। শুরু হয় জসীম হাজীকে উচ্ছেদের পায়তারা। আবুল খায়ের নামের এক রিক্সাওয়ালা ভাড়া নেয় জসীম হাজীর বাড়ি। দুই সন্তান আর স্ত্রী রুনা বেগম নিয়ে তার সংসার। প্রতিদিন সকালে আবুল খায়ের রিক্সা নিয়ে বেরিয়ে পড়ে এবং স্ত্রী রুনা মানুষের বাড়িতে ঝিয়ের কাজ করে। জসীম হাজির দোকান থেকে বাকিতে সদাই নিতো। দেই দিচ্ছি করে ১৯ হাজার পর্যন্ত টাকা বাকি পরে। এর সাথে ৭ মাসের ঘরভাড়াও বাকী। জিজ্ঞাসা করলে, কিস্তি তুলে ভাড়া পরিশোধ করে দিবো বলে সময় নেয়। যেহেতু অনেক টাকা বাকি তাই অযথা কোন অপচয় করলে সব বাড়িওয়ালাই ডাক দেয়। গত ৫ জানুয়ারি ঘরের লাইট ছিলো সকাল ১০টা পর্যন্ত জ্বালানো। সেই লাইট নিভাতে গিয়েই যত বিপত্তি। শুরু হয় ঘরে থাকা লাভনীর সাথে ঝগড়া। তারপর ঘরে আসে জসীম হাজীর স্ত্রী মুন্নি। সেও স্বামীর পক্ষ নিয়ে ঝগড়া করে। ঝগড়াকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসীর সহায়তায় আবুল খায়ের বাড়ি থেকে অন্যত্র বাসা নিয়ে চলে যায়। বিষয়টি নিয়ে এলাকার কিছু লোকের ইন্ধনে গত ১৮ জানুয়ারি জসীম হাজির বিরুদ্ধে চাঁদপুর মডেল থানায় ধর্ষণ মামলার অভিযোগ দেয় আবুল খায়েরের স্ত্রী রুনা। রাতেই জসীম হাজিকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। পরের দিন কোর্টে চালান দেয়া হয়। কোর্ট থেকে জামিন না মঞ্জুর করে আসামীকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়। ভিকটিম লাভনীকে মেডিকেল চেকআপ করানোর রিপোর্ট এখন পর্যন্ত আদালতে আসেনি। মামলার বাদিনী ডাঃ ফাতেমা খাতুন থেকে একটি প্রেসক্রিপশন নিয়ে আদালতে দাখিল করে। সেই থেকে আসামী জসীম হাজী জেল হাজতে।
এ বিষয়ে ডাঃ ফাতেমা খাতুনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমার কাছে যখন তারা এসেছে, আমি তাদের মৌখিক তথ্য অনুযায়ী লাভনীকে ঔষুধ দিয়েছি। একটি অবিবাহিত মেয়ের বিভিন্ন জটিলতায় রক্তক্ষরণ হয়ে থাকে। আমার কাছে সে রক্তক্ষরণ ও ব্যাথার কথা বলেছে, আমি ওষুধ দিয়েছি। আমিতো আর দেখিনি। আর এ মেয়েকে দেখে মনে হয়নি সে ধর্ষণ হয়েছে। হয়তো কেউ কাউকে ফাঁসানোর জন্য এরকম করে থাকতে পারে। আর আমার লিখিত প্রেসক্রিপশন ডকুমেন্ট হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। এই প্রেসক্রিপশনে কাউকে প্রতারিত না হওয়ার জন্য অনুরোধ করা গেলো।
জসীম হাজীর মা, বাবা সহজ সরল। তাই ছেলে হিসেবে জসীম হাজীও সহজ সরল। তার অতীত ইতিহাস ঘাটতে গেলে এরকম কোনো ঘটনা কখনো পাওয়া যায়নি। এ বিষয়ে জানতে চাইলে, তার ছেলে নির্দোষ। এলাকাবাসীর রোষানলের শিকার এই বলে তিনি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ব্যক্তি জানায়, সম্পূর্ণ ঘটনাই পূর্ব পরিকল্পিত। এলাকার কিছুলোক রুনা বেগমকে টাকা পয়সা দিবে বলে ফুসলিয়ে এ মামলা করিয়েছে। আসলে বিষয়টি তেমন জটিল কিছু না। ঝগড়া হয়েছে কিন্তু এরকম কিছু ঘটেনি। আর আমাদের জানামতে জসীম হাজী এ ধরণের চরিত্রের নয়। জানা গেছে, এ বিষয়ে সমাধান করার জন্য একটি পক্ষ জসীম হাজীর পরিবারদের কাছ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করে। তবে এ ব্যাপারে শ্বশুর হিসেবে কুদ্দুস মাঝি তেমন কোন ভূমিকা রাখেনি। এটাই দুঃখ জনক ব্যাপার। সামান্য রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে ইভটিজিং হলেই আমরা ইভটিজিংকারীকে গণধোলাই দেই। আর এত বড় একটি ধর্ষণের ঘটনা ঘটে গেলো। তাও আবার কেউ কেউ নাকি দেখেছে তাহলে তাদের সামনে দিয়ে স্বাভাবিক ভাবে আসামী জসীম হাজী আবার দোকানে ফিরে যায় কিভাবে? কেউ কি প্রতিবাদ করার মতো নাই? আসলে এরকম কিছুই ঘটেনি তাই তাৎক্ষণিক কেউ এ বিষয়ে বলার মতো সুযোগ ছিলো না। এক বছর ধরে তারা বসবাস করে। প্রতিদিনই তারা স্বামী স্ত্রী কাজে যায়। জসীম হাজী ওই চরিত্রের হলেতো আরো আগেই মেয়েটিকে ধর্ষণের চেষ্টা করতে পারতো। কিন্তু তা করেনি কিংবা এরকম কোন তথ্য ও নেই। এলাকার কিছু লোক এ বিষয়টিতে তাদের স্বার্থ উদ্ধারের চেষ্টা করছে। তাদের কারণে অনেকেই ভয়ে মুখ খুলছে না।
ঘটনাটি সুষ্ঠুভাবে তদন্ত করে জসীম হাজীকে মুক্তিদানের জন্য প্রশাসনের কাছে আকুল মিনতি জানিয়েছে জসীম হাজীর বাবা ও মা।
শিরোনাম:
সোমবার , ৯ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২৫ ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।