চাঁদপুর: মেঘনা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনে বিলীন হয়ে যাচ্ছে চাঁদপুর-শরিয়তপুর ফেরি নৌ-রুটের চাঁদপুরস্থ হরিণা ঘাট। গতকাল শুক্রবার দুপুর থেকে আবারও আকস্মিক ভাঙ্গনে ফেরি ঘাটের ৫০ থেকে ৬০ মিটার এলাকা নদী গর্ভে চলে গেছে। ভাঙ্গনের ব্যাপকতায় ফেরি ও পন্টুন সংযোগ র্যাম গতকালও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। বিকেল ৪টার পর থেকে ফেরি ঘাটে ভিড়তে ও ছেড়ে যেতে দেখেনি ঘাটের লোকজন। দোকানিরা জানায়, শুক্রবার দুপুরের পর হরিণা ঘাটে কোনো ফেরি আসেনি।
ভাঙ্গন কবলিত এলাকার বিল্লাল শেখ (৫৫) জানান, দুপুরে ফেরি ঘাটে বড় বড় মাটির চাক ফাটল ধরে আস্তে আস্তে তলিয়ে যেতে শুরু করে। বিকেল চারটার পর ভাঙ্গন পরিস্থিতি ভয়াবহ রূপ নেয়। র্যাম সরে গিয়ে রাস্তা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই পরিস্থিতিতে আবারও ভাঙ্গন আতঙ্কে দিশেহারা হয়ে পড়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার হরিণা ও গোবিন্দিয়া গ্রামের পরিবারগুলো। ভাঙ্গনের মুখে ৮-১০টি দোকান ঘর ভেঙ্গে ফেলতে হয়েছে। এখন হরিণা ফেরি ঘাট জামে মসজিদ ও মাদ্রাসাটি যে কোনো সময় নদীতে বিলীন হয়ে যাবে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত চাঁদপুর শরিয়তপুর নৌ-রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ ছিল। বিকেল থেকে বিআইডাব্লিউটিএ চাঁদপুর অফিসের একজন উপ-সহকারী প্রকৌশলী ভাঙ্গন স্থানে অবস্থান নিয়ে সার্বক্ষণিক দেখাশোনা করেন এবং ঘাট পুনঃসংযোগ স্থাপনের জন্যে ৮-১০ জন দিয়ে কাজ চালিয়ে যান। ওই প্রকৌশলীর নাম মোঃ ফয়েজ উল্যাহ। তিনি চাঁদপুর কণ্ঠকে জানান, ভাঙ্গন পরিস্থিতির কারণে সার্বক্ষণিক হরিণা ঘাটে তাদেরকে অবস্থান নিতে হচ্ছে। শুক্রবার জুমার নামাজ শেষে হরিণা ঘাটের নতুনভাবে অ্যাপ্রোচ রাস্তার কাজ করার জন্য তিনি লোকজন নিয়ে সেখানে যান। বিকেল ৪টার পর থেকে ফাটল ধরা মাটির চাক নদীতে ভেঙ্গে পড়তে থাকে। ফেরির জন্য রাস্তা কেটে যেটুকু প্রস্তুত করা হয়, ভাঙ্গনে সেটুকু নদীতে চলে যায়। প্রয়োজনে সারারাত কাজ করবেন, যাতে ফেরি যাতায়াত এবং গাড়ি লোড-আনলোডিং বন্ধ না থাকে। তিনি আরো জানান, কাজ চলা অবস্থায় ঘাটে কোনো ফেরি ছিল না। একটি ফেরি গাড়ি নিয়ে এ পাড় থেকে ওপাড় আসা-যাওয়ায় ৬ ঘণ্টা সময় লাগে। এ জন্য ফেরি পাওয়া যায় না।
এদিকে ঘাট সূত্রে জানা যায়, নদী ভাঙ্গন ও ফেরি পারাপারে ৩ ঘণ্টা করে ৬ ঘণ্টা সময় নেয়ায় দুই পাড়ে দুই শতাধিক গাড়ি আটকে রয়েছে। ঘাটে আসা গাড়ি চালক, হেলপারসহ দক্ষিণ পশ্চিম অঞ্চলের যাত্রী সাধারণ চরম দূর্ভোগের শিকার হচ্ছে। ফেরিতে উঠা-নামায় অ্যাপ্রোচ সড়কের অংশ এ নিয়ে ৭বার নদী ভাঙ্গনের শিকার হয়। প্রতিবারেই র্যাম সরিয়ে রাস্তা কেটে বসানো হয়। হরিণা ঘাট ভেঙ্গে গেলেও ভাঙ্গন রোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড বা সরকার কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। এ নিয়ে হানারচর ইউনিয়নবাসীর মাঝে চরম হতাশা ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে বিআইডব্লিউটিসির ঘাট ম্যানেজার এমরান হোসেন রোহান জানান, সর্বক্ষণই ভাঙছে। যে কোনো সময় রাস্তা থেকে র্যাম সরে গিয়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।