ফেব্রুয়ারি মাসের ৪ তারিখ বিশ্বক্যান্সার দিবস। ১৯৩৩ সাল থেকে দিবসটি পালিত হয়ে আসছে। জাতিসংঘ, বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থা, বিভিন্ন স্বাস্থ্য সংগঠন এবং বিভিন্ন দেশ সরকারিভাবে দিবসটি পালন করে। বর্তমানে ‘‘ইউনিয়ন অব ইন্টারন্যাশনাল ক্যান্সার কনট্রোল (UICC)’’-এর তত্ত্বাবধানে বিশ্বব্যাপী দিবসটি পালিত হয়। ১২০ দেশের ৪০০ সংস্থা ইউআইসিসি-এর সদস্য। এ বছর বিশ্ব ক্যান্সার দিবসের প্রতিপাদ্য বিষয় ‘‘ Cancer Did you know?’’
ক্যান্সার সম্পর্কে যে সব কাল্পনিক কথা প্রচলিত তা হল, প্রথম: ক্যান্সার নিছক স্বাস্থ্য সমস্যা, (দুই) ক্যান্সার ধনী, বৃদ্ধ এবং উন্নত দেশের রোগ (তিন) ক্যান্সার মৃত্যুর পরোয়ানা (চার) ক্যান্সার নিয়তির রোগ। এসব কল্পকথার মাঝে ক্যান্সার নিয়ে নানা কুসংস্কার প্রচলিত। তাই ক্যান্সার সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা সব সমাজে ছড়িয়ে দেয়া প্রয়োজন। ক্যান্সার সৃষ্টির বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা, ঝুঁকি লক্ষণ, কারণ বিশ্লেষণ, লক্ষণ মূল্যায়ন, রোগ নির্ণয়ে প্রযুক্তিগত ব্যবহার এবং আধুনিক চিকিৎসা পদ্ধতি এবং তার সফলতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করাই এবারের ক্যান্সার দিবসের মূল বিষয়।
ক্যান্সার মুক্ত জীবনের জন্য যা প্রয়োজন
ক্যান্সারের সুনির্দিষ্ট কারণ এখনও পুরোপুরি জানা সম্ভব হয়নি। তবে চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে ক্যান্সারের সাথে জীবনযাত্রার যোগসূত্র রয়েছে। আপনার খাবার, পানীয়, বায়ু গ্রহণ এবং ধূমপানের মত অভ্যাসের সাথে রয়েছে ক্যান্সারের নিবিড় সম্পর্ক এবং আপনার প্রতিদিনের জীবনযাত্রার পরিকল্পনাই আপনাকে ক্যান্সার মুক্ত জীবনের সুসংবাদ দিতে পারে, যদি আপনি আপনার জীবনকে ঢেলে সাজাতে পারেন এভাবে :-
(১) অধিক হারে টাটকা শাকসবজি খাওয়ার অভ্যাস করুন :
বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষায় দেখা গেছে সবুজ, হলুদ এবং পাতা জাতীয় শাকসবজি অন্ত্র, পায়ুপথ, প্রোস্টেট, পাকস্থলী, শ্বাসযন্ত্র, স্তন এবং জরায়ুর মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে। এ জন্য বাধাকপি ও ফুলকপি বেশি উপকারী।
(২) অধিক আশজাতীয় খাবার গ্রহণ করুন :
অধিক আশজাতীয় খাবার অন্ত্র পায়ুপথ ক্যান্সার প্রতিরোধ করে। এ জন্য লাল আটা, গম, চাল, শস্যদানা, ভুট্টা, গোলআলু, মটরশুটি, কিসমিস, আপেল, কমলা, টমেটো ইত্যাদি জাতীয় খাবার অধিক গ্রহণে ক্যান্সার প্রতিরোধ হতে পারে।
(৩) ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় খাবার বেশি গ্রহণ করুন :
মুখ, অন্ননালী, শ্বাসনালী, পাকস্থলী, অন্ত্র, পায়ুপথ, প্রস্রাবথলি এবং জরায়ুর মুখের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে ভিটামিন ‘এ’ জাতীয় খাবার, যেমন : ডিমের কুসুম, দুগ্ধজাতীয় খাবার, মাছ, কলিজা, টাটকা ফলফলাদি এবং সবুজ শাকসবজিতে প্রচুর ভিটামিন ‘এ’ পাওয়া যায়। মনে রাখবেন ভিটামিন ‘এ’ ক্যাপসুল খাওয়ার চেয়ে ভিটামিন ‘এ’ সমৃদ্ধ খাবার গ্রহণ অধিক উত্তম।
(৪) ভিটামিন সি জাতীয় খাবার অধিক গ্রহণ করুন :
ভিটামিন সি যেসব অঙ্গের ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে পারে তার মধ্যে রয়েছে মুখ, অন্ননালী, অন্ত্র, পাকস্থলী পায়ুপথ এবং জরায়ুর মুখ। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারের মধ্যে রয়েছে আমলকি, আমড়া, আম, পেয়ারা, ফুলকপি, কমলা, লেবু, কাঁচামরিচ, পেঁপে, টমেটো ইত্যাদি।
(৫) শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করুন :
মোটা মানুষের অন্ত্র, জরায়ু, পিত্তথলি এবং স্তনের ক্যান্সার হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে। এ জন্য নিয়মিত ব্যায়াম (হাটার অভ্যাস বেশ উপকারী) এবং অধিক ক্যালরীযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন।
প্রতিদিনের জীবন থেকে পরিহার করুন :
(১) উচ্চ চর্বিযুক্ত খাবার গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন। চর্বিযুক্ত খাবার স্তন, অন্ত্র এবং প্রোস্টেটের ক্যান্সার সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়া চিনি ও মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিহার করুন।
(২) ধূমপান থেকে বিরত থাকুন : ধূমপানে সর্বাধিক ক্যান্সার সৃষ্টি হয়। ফুসফুস এবং মুত্রথলির ক্যান্সারের প্রধান কারণ ধূমপান।
(৩) পান, জর্দা, তামাক সেবন বন্ধ করুন : মুখ মাড়ি এবং গলনালী ক্যান্সার প্রতিরোধে পান, জর্দা, তামাক সেবন বন্ধ করুন।
(৪) মদ পানে বিরত থাকুন : লিভার ক্যান্সার এবং সিরোসিসের প্রতিরোধে অবশ্যই মদ পান থেকে বিরত থাকুন।
(৫) আচার, কাসন্দ, শুঁটকি এবং লবণ দেয়া মাছ গ্রহণ থেকে বিরত থাকুন : কারণ এর দ্বারা অন্ননালী এবং পাকস্থলির ক্যান্সার সৃষ্টি হতে পারে।
ক্যান্সারের ৭টি সতর্ক লক্ষণ :
(১) পায়খানা প্রস্রাবের অভ্যাসের পরিবর্তন
(২) কোন ক্ষত না শুকানোর প্রবণতা
(৩) অস্বাভাবিক রক্তক্ষরণ
(৪) স্তনে কোন শক্ত দলা অথবা শরীরের অন্য কোন জায়গায় শক্ত পিন্ড বর্তমান থাকা
(৫) পেটের অজীর্ণতা কিংবা ঢোক গিলতে অসুবিধা
(৬) অাঁচিল বা তিলের অস্বাভাবিক কোন পরিবর্তন
(৭) বিরক্তিকর অবিরত কাশি কিংবা গলা বসে যাওয়ার প্রবণতা।
নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ করুন :
ক্যান্সার নির্ণয়ে নিয়মিত মেডিকেল চেকআপ জরুরি। বছরে অন্তত একবার মেডিকেল চেকআপ হওয়া আবশ্যক। কোন কারণে ক্যান্সার বিষয়ে প্রশ্ন দেখা দিলে নিকটস্থ কোন ক্যান্সার বিশেষজ্ঞের পরামর্শ গ্রহণ করুন।
ক্যান্সার প্রতিরোধে করণীয়
১. শরীরের ওজন নিয়ন্ত্রণ করা, ২. প্রতিদিন ব্যায়াম করা কিংবা এক ঘণ্টা হাঁটার অভ্যাস, ৩. কোলাপানীয় ও চিনিসমৃদ্ধ পানীয় বর্জন করা, ৪. লাল গোশত (গরু, ছাগল, মহিষ) এবং কৃত্রিমভাবে সংরক্ষিত খাবার পরিহার করা, ৫. উদ্ভিজ্জ খাবার ও ফলফলাদি বেশি বেশি খাওয়া, ৬. মদ্যপান বর্জন করা, ৭. ধূমপান, তামাক-জর্দা সাদা পাতা ইত্যাদি তামাকজাতীয় দ্রব্য পরিহার করা, ৮. মানসিক চাপমুক্ত থাকা, ৯. আগুনে ঝলসানো মাছ, গোশত, গ্রিল, শিক কাবাব এড়িয়ে চলা, ১০. ইতিবাচক চিন্তা করা, ১১. ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলা, ১২. সমাজের উপকারী কাজ বেশি বেশি করা, (১৩) বেশি বেশি ঔষধ সেবন সম্পর্কে সতর্ক থাকা, ১৪. রং মিশ্রিত খাবার পরিহার করা ১৫. নিয়মিত মধু সেবন করা।
****************************************************
ডাঃ এস.জামান পলাশ
জামান হোমিও হল
01711-943435
ওয়েব সাইট –www.zamanhomeo.com
ব্লগ– https://zamanhomeo.com/blog/?cat=18
ফেসবুক–https://www.facebook.com/ZamanHomeoHall