0 স্পিকারের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ চার হাজার ৪৩৫ শতাংশ
0 সংসদ উপনেতা চিফ হুইপ ও হুইপদের আয় বেড়েছে তিন হাজার ৭১ শতাংশ
0 মন্ত্রীদের ২৪৩ প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪ শতাংশ আয় বেড়েছে
0 মন্ত্রীদের ‘মৎস্য চাষ’ সংবিধান লংঘন- ড. শাহদীন মালিক
স্টাফ রিপোর্টার : একতরফা পাতানো নির্বাচনে মহাজোট সরকারের প্রার্থীদের বেশুমার সম্পদ অর্জনে পিলে চমকানো অবস্থা। রাজনৈতিক মহল থেকে শুরু করে সুশীল সমাজ এ সম্পদ বিবরণীর নিয়ে জোর সমালোচনা শুরু করেছেন। এরই মধ্যে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) আয়োজিত এক সাংবাদিক সম্মেলনে জানানো হয়েছে, দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী প্রজাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে নিয়োজিত ৪৮ জন প্রার্থীর আয় গড়ে ৫৮২ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে স্পিকারের আয় বেড়েছে সর্বোচ্চ চার হাজার ৪৩৫ শতাংশ। সংসদ উপনেতা, চিফ হুইপ ও হুইপদের আয় বেড়েছে গড়ে তিন হাজার ৭১ শতাংশ। মন্ত্রীদের আয় ২৪৩ ও প্রতিমন্ত্রীদের ৪৬৪ শতাংশ বেড়েছে। প্রধানমন্ত্রীর আয় বেড়েছে ১৩৬ শতাংশ।
গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটে সুজন এ সাংবাদিক সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়। সাংবাদিক সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য উপস্থাপন করেন সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার। এ বিষয়ে আইনী ব্যাখ্যা তুলে ধরেন সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক। এসময়ে সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য রেজোয়ানা হাসান ও সমন্বয়কারী দীলিপ কুমার সরকার উপস্থিত ছিলেন।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, মহাজোট সরকারের প্রধানমন্ত্রীসহ মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পিকার, উপনেতা চিফ হুইপ ও হুইপ হিসেবে দায়িত্ব পালনকারী অনেকেই দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। ২০০৮ সাল থেকে ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশনে তাদের দেয়া তথ্যে আয়-ব্যয়ের বিভিন্ন তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অনেকের অনেক তথ্যই আমাদের বিস্মিত করেছে।
বদিউল আলম মজুমদার বলেন, নির্বাচনের আগে কেউ কেউ অনেক প্রতিশ্রুতি দিলেও এমপি-মন্ত্রী হয়ে ভুলে যান। অনেকে মনে হয় আলাদিনের চেরাগ হাতে পেয়ে যান। তাই ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে জেনে, শুনে ও বুঝে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে হবে।
আইনবিদ ড. শাহদীন মালিক বলেন, সরকারের মন্ত্রী, উপমন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রী থাকা অবস্থায় যারা ‘মৎস্য চাষের’ মাধ্যমে আয় করেছেন তারা সংবিধান লংঘন করেছেন।
তিনি বলেন, সংবিধান অনুসারে প্রজাতন্ত্রের আট পদে আসীন ব্যক্তিরা তাদের সরকারি বেতন ভাতা ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসা বা কোম্পানি থেকে আয় করতে পারবেন না। যারা মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী থাকা অবস্থায় মৎস্য চাষের মাধ্যমে আয় করেছেন তারা সংবিধানের ১৪৭ অনুচ্ছেদ লংঘন করেছেন।
শাহদীন মালিক বলেন, সংবিধান অনুসারে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রী-উপমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার, মহাহিসাব রক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, নির্বাচন কমিশনার এবং সরকারি কর্মকমিশনের সদস্যরা তাদের বেতন-ভাতা ছাড়া অন্য কোনো লাভ জনক পদে আসীন হতে পারবেন না। কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে মুনাফা বা আয় করতে পারবেন না। তাদের বেতন- ভাতা সংসদে আইন দ্বারা নির্ধারিত হয়।
তিনি বলেন, ওই আট পদের ব্যক্তিদের ক্ষেত্রে বেতন-ভাতার বাইরে আয়, সংবিধানে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। তবে কোনো ব্যক্তির যদি পূর্বে অন্য কোনো লাভ জনক প্রতিষ্ঠান থেকে থাকে এক্ষেত্রে ওই প্রতিষ্ঠান নিজে না করে অন্য কাউকে দিয়ে পরিচালনা করতে হবে।
তিনি বলেন, সংবিধানের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ ১২(কে) অনুসারে নির্বাচিত কোনো এমপি সরকারের সাথে ব্যবসা করতে পারবে না। আপাতত দৃষ্টিতে কোনো আইনজীবী এমপি সরকারের হয়ে কোনো মামলা পরিচালনা করে অর্থ নিতে পারবেন না। তা করা হলে সংবিধান লঙ্ঘন হবে। ভবিষ্যতে যারা মন্ত্রী ও এমপি হবেন তাদেরকে সংবিধানের ওই সকল ধারা জেনে শপথ নেয়ার আহ্বান জানিয়ে ড. শাহদীন মালিক বলেন, তা না হলে ওই মন্ত্রী বা প্রতিমন্ত্রী ও উপমন্ত্রী সংবিধানের ৭(৩/ক) অনুচ্ছেদ লংঘনের মাধ্যমে দেশদ্রোহীতার শামিল হবেন।