ফাহিম শাহরিন কৌশিক খান
এক সময়ে চাঁদপুর শহরে আকবরী হোটেলের নামে খ্যাতি ও সুনাম থাকলেও বর্তমানে এ আকবরী হোটেলে দেহ ব্যবসা, মাদক ব্যবসা এবং জোরপূর্বক মেয়েদেরকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে আটকিয়ে রেখে সিসি ক্যামেরা ও হ্যান্ডি ক্যামেরা দিয়ে তাদের নগ্ন ছবি ধারণ করে, তা প্রিন্ট ও সিডি আকারে রাইট করে অন্যত্র বিক্রি করার অসংখ্য অভিযোগ উঠেছে। বহুল আলোচিত আকবরী হোটেলের মালিকের মৃত্যুর পর তার একমাত্র ছেলে কাজী আলী এলিন এ হোটেলটিকে ঘিরে সকল অপকর্মের গডফাদারের ভূমিকা পালন করছেন। যদিও বর্তমানে হোটেলটির মালিকানার অংশীদার এলিনের সকল বোনরা তাদের অংশ বিক্রি করলেও কাজী আলী এলিনের অংশটিকে পুঁজি করে সমাজের সর্বোচ্চ ঘৃনিত এবং জঘন্য অপরাধমূলক কাজগুলো সম্পন্ন করে আইনের কাছে পার পেয়ে যাচ্ছে। অথচ, সামান্য অপরাধ করলেও আইনের মারপ্যাঁচে অনেকের জেল, ফাঁসি, এমনকি যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ভোগ করতে হচ্ছে। কিন্তু লেডী কিলার কাজী আলী এলিন তার ভগ্নিপতির দাপটে সকল অপকর্ম করার পরও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কিছুই করতে পারছে না। এ লেডী কিলার কাজী আলী এলিন চাঁদপুর শহরের একসময়ের রাজনৈতিক নেতা ও প্রখ্যাত আইনজীবি অ্যাডঃ মাহবুবুর রহমান পাটওয়ারীর বড় মেয়ে বিলকিছ ফারজানা বিলুর নাটকীয়ভাবে ভিডিও ধারণ করে তার নগ্ন ছবি তুলে তা প্রচার চালিয়ে যাবে এমন অজুহাত ও ভয় দেখিয়ে এবং মানুষিক চাপ সৃষ্টি করে জোরপূর্বক বিয়ে করে। বিয়ের পর থেকেই সে সময়ে চাঁদপুর শহরের সুন্দরী মেয়ে হিসেবে খ্যাত বিলকিছ ফারজানা বিলু’র সাথে অমানুষিক আচরণ করতে থাকে।
২০০২ সালে ১৪ জানুয়ারি আকবরী হোটেলের নিচতলায় বসবাসকারী কাজী আলী এলিন তার স্ত্রী বিলকিছ ফারজানা বিলু-কে বাসার সকল দরজা-জানালা বন্ধ করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে দেয়। পরমুহুর্তে সে-ই অপপ্রচার চালায়, তার স্ত্রী অভিমান করে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন ধরিয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেয়। এমনকি নিজেও যৎসামান্য কেরোসিন ঢেঁলে এবং কিছু অংশে আগুন দিয়ে নাটক সাঁজায়। দীর্ঘ ৬ দিন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ে অবশেষে ২০০২ সালের ২০ জানুয়ারি হাসপাতালে চিকিৎসারত অবস্থায় বিলকিছ ফারজানা বিলু মৃত্যুবরণ করেন। এ ঘটনায় কাজী আলী এলিন আটক হলেও কিন্তু তার প্রভাবশালী ভগ্নিপতির টাকার কাছে সে যাত্রায় পার পেয়ে যায়।
চাঁদপুর সরকারি কলেজের সামনে থাকা আকবরী হোটেলের বর্তমানে ৭৫ ভাগ অংশের মালিক চাঁদপুরের প্রভাবশালী রাজনীতিবিদ ও শিল্পপতি হলেও ২৫ ভাগ মালিক তার শ্যালক কাজী আলী এলিন। একাংশের মালিক হওয়ার কারণে এলিন তার হোটেলের পুরো অংশ এবং নিচতলায় সকল ভাড়াটিয়াদের দেখা-শুনার দায়িত্ব তার। গত ৬ দিন যাবৎ আকবরী হোটেলে চতুর্থ তলার একটি কক্ষে কাজী আলী এলিন লক্ষ্মীপুর জেলার মধ্যবাঞ্চা নগরের যুবতী মেয়ে রুনা আক্তার মরিয়ম (২৮)-কে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ওই গোপনীয় কক্ষে আটকিয়ে রেখে দিনে-রাতে নির্যাতন চালায়। গত ১৬ আগস্ট শনিবার রাত ১২টায় ওই নির্যাতিতা যুবতীকে পুলিশ উদ্ধারের জন্যে আসার কারণে সুকৌশলে ওই কক্ষ থেকে বের করে দেয় এবং পুলিশ যাওয়ার সাথে সাথে তার অনুগত লোক দিয়ে পুনরায় মেয়েটিকে জোর করে এনে আবারো অন্য এক কক্ষে আটকিয়ে রাখে।
এর পূর্বে খবর পেয়ে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কামরুল ইসলামের নির্দেশে মডেল থানার উপ-পরিদর্শক আবু সাইদ সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে উপস্থিত হন। কিন্তু পুলিশ আসার সংবাদ শুনে আকবরী হোটেলের একাংশের মালিক কাজী আলী এলিন তার ভগ্নিপতিকে মুঠোফোনে বাঁচাতে অনুরোধ জানায়। ওই ফোন দেয়ার পর পুলিশি অভিযান থমকে যায়। একপর্যায়ে পুলিশ সদস্যরা আকবরী হোটেলের সামনে থেকে চলে আসে। ওই এলাকায় বসবাসকারী মানুষজন জানায়, যুবতীকে এভাবে ৫দিন আটকে রেখে ধর্ষন ও নির্যাতনের ঘটনা চাঁদপুরে এটাই প্রথম। হোটেল মালিক কাজী আলী এলিন অপরাধ করার পরেও পুলিশ তাকে আটক করছেনা। তাহলে সে কি আইনের ঊর্ধ্বে? সরেজমিনে আকবরী হোটেলে গিয়ে দেখা যায়, হোটেলের ৪র্থ তলায় মালিক এলিনের পার্সোনাল একটি কক্ষে লক্ষ্মীপুর মধ্য বাঞ্চানগর ৩নং ওয়ার্ডের বাইন্না বাড়ির মৃত কালু বাইন্নার মেয়ে রুনা আক্তার মরিয়ম (২৮)-কে আটকে রাখা হয়েছে। হোটেল মালিক কাজী আলী এলিন তাকে পতিতা ও নারী পাচারকারী অপবাদ দিয়ে হোটেলে আটকে রেখেছে বলে সাংবাদিকদের জানায়। ওই কক্ষে বিছানার উপরে ও মেঝেতে ৪০/৫০টি মেয়ে এবং ছেলেদের উলঙ্গ ও নোংরা দৃশ্যের ছবি পরে রয়েছে। এসময় নির্যাতিত রুনা আক্তার মরিয়ম জানায়, ছদ্মবেশী নরপশু এলিন আমাকে ৫দিন ধরে আটকে রেখে নির্যাতন চালিয়েছে। সে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে আমাকে এনে একাধিকবার অসামাজিক কার্যকলাপ করেছে। এই নরপশুর হাত থেকে আমাকে রক্ষাকরেন। সে এসিড নিয়ে এসেছে আমার মুখ ঝলসে দিয়ে হত্যা করবে। লক্ষ্মীপুর কিলার সাকিলকে ভাড়া করে এনেছে আমাকে মারার জন্য। নরপশু কাজী আলী এলিন বিয়ের কথা বলে কিছুদিন পূর্বে আমার ছোট বোন সুইটি ও সৎমাকে এই হোটেলে এনে সে সবাইকে আটকে রেখে নির্যাতন করে ছেড়ে দিয়েছে। সে আরো জানায়, লক্ষ্মীপুরের বিউটি পার্লারের দোকানে আমি চাকুরি করা অবস্থায় তার প্রকৃত নাম গোপন রেখে নিজেকে সুমন পরিচয় দিয়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলে। ঢাকা মোহাম্মদপুরে আখিঁ বিউটি পার্লার দোকানে কাজ করার জন্য আমাকে নিয়ে যায়। বিউটি পার্লারে আসা মেয়েদেরকে নরপশু এলিন জোরপূর্বক ধর্ষণ করে সিসি ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও ফুটেজ রেখে প্রতারণা করে। এভাবেই সে শতাধিক মেয়ের নোংরা দৃশ্য ধারন করে প্রতারণা করে আসছে। একটি সূত্র জানায়, হোটেল আকবরীতে প্রতিদিন পতিতা রেখে রমরমা দেহ ব্যবসা চালিয়ে আসছে। হোটেলের দ্বিতীয় তলায় ১ ও ৫ নাম্বার কক্ষে দেয়ালে সাটানো আয়নার ভিতরে গোপন সিসি ক্যামেরা লাগানো হয়েছে। চাঁদপুরের স্বনামধন্য ব্যাক্তিরা কলেজ, স্কুল পড়–য়া ছাত্রীদের প্রেমের প্রলোভন দেখিয়ে আকবরী হোটেলে নিয়ে শ্লীলতাহানী করার সময় সিসি ক্যামেরার মাধ্যমে ধারণকৃত দৃশ্য হোটেল মালিক এলিন তার ল্যাপটপ কম্পিউটারে সংগ্রহ করে রাখে। পরে ব্লু-ফিল্মের সিডি ক্যাসেট তৈরি করে ঢাকার বিভিন্ন দোকানে বাজারজাত করে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে। এছাড়া কাজী আলী এলিন ইয়াবা, ফেন্সিডিল ও মাদক ব্যবসা চালায়। এই হোটেলে আন্তঃজেলা মোটরসাইকেল ছিনতাইকারী চক্র তার সাথে জড়িত রয়েছে। হোটেলে আসা বর্ডারদের ভয় দেখিয়ে শারীরিক নির্যাতন করে নিজের স্বার্থ হাসিল করছে। সম্প্রতিকালে কুমিল্লা থেকে আসা পরকিয়া প্রেমিক যুগল হোটেল রুম ভাড়া করে রাত্রিযাপন করাকালে হোটেল মালিক এলিন রাত ২টায় যুবতীমেয়েকে ধর্ষনের জন্য ওই রুমে যায়। এসময় পরকিয়া প্রেমিক পুলিশ ভেবে হোটেলের পিছনের দরজা দিয়ে ঝাপিয়ে পানিতে পরে। বিকট আওয়াজ পেয়ে স্থানীয় লোকজন এসে ছেলেটিকে উদ্ধার করে পুলিশকে খবর দেয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে হোটেল থেকে মেয়েটিকে উদ্ধার করে কুমিল্লা পাঠানোর ব্যবস্থা করে। এভাবেই লম্পট এলিন তার হোটেলে একের পর এক অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড চালিয়ে যাচ্ছে। গত শনিবার রাতে তেমনি লক্ষ্মীপুরের যুবতী রুনা আক্তার মরিয়মকে আটকের খবর শুনে নতুন বাজার পুলিশ ফাঁড়ির এটিএসআই সুর্দশন ও কালাম হোটেল থেকে ওই যুবতীকে উদ্ধার করে। এসময় এলিনের ইতিহাস রুনা তুলেধরে। পরে তাকে পুলিশ হোটেল থেকে বের করে যাতায়াত ভাড়া ৩শ’ টাকা ধরিয়ে দিয়ে রিক্সায় উঠিয়ে দেয়। নরপশু এলিন মাদকাসক্ত অবস্থায় বেরিয়ে এসে রুনা আক্তার মরিয়মকে আবার ধরে নিয়ে হোটেলে আটকে রাখে। পরে অতিরিক্ত পুলিশ সুপারের হস্তক্ষেপে মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে যায়। অবস্থা বেগতিক দেখে কাজী আলী এলিনের হোটেলে পুলিশ অভিযান না চালিয়ে কিছুক্ষণ বাইরে অবস্থান করে। প্রায় ১ঘন্টা পর পূনরায় হোটেলে গিয়ে ব্যাপক তল্লাশী চালিয়েও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে পারেনি। হোটেল মালিক এলিন পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে নির্যাতিত নারী রুনা আক্তার মরিয়মকে টয়লেটের ভিতরে আটকে রাখে। পুলিশ যাওয়ার পর আবার হোটেলের চতুর্থ তলায় মেয়েটিকে নিয়ে নির্যাতন শুরুকরে। সূত্রটি আরো জানায়, লক্ষ্মীপুরে রুনাআক্তার মরিয়মের বাড়িতে লম্পট এলিন যাওয়ার পর স্থানীয়রা তাকে অনৈতিক কাজ করার সময় হাতে নাতে আটক করে গনধোলাই দিয়ে আটকে রাখে। সেখান থেকে কৌশলে সে বেরিয়ে এসে প্রতিশোধ নেয়ার জন্যই রুনাকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে হোটেলে আটকে রেখে নির্যাতন চালায়। নির্যাতিত রুনা বর্তমানে ওই হোটেলে আটক অবস্থায় রয়েছে। অদৃশ্য শক্তির ছোঁয়ায় পুলিশ ঘটনাটি জেনেও মেয়েটিকে উদ্ধার করতে ব্যর্থ হয়। অন্য একটি সূত্রে জানা যায়, গতকাল ১৮ আগস্ট সোমবার মেয়েটিকে নিচ তলায় হোটেলে ওঠার সিঁড়ি বামদিকে বদ্ধ একটি কক্ষে রাখা হয়েছে।
[প্রিয় পাঠক, প্রকাশিত সংবাদের সকল তথ্য ও প্রমাণ সংরক্ষণ করা হয়েছে। সামাজিক ও অমানবিক কারণেই শুধু প্রকাশ করা হয়নি।]
শিরোনাম:
বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।