সাধারণত জুলাইয়ে জেলেদের জালে বেশি পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। তবে চলতি বছর এ মাস ছিল অনেকটা বৃষ্টিহীন। ইলিশও তাই ধরা দিচ্ছিল না। আগস্টের শুরুতে দেশে বৃষ্টিপাত শুরু হলে নদী ও সমুদ্রে বেড়ে যায় ইলিশের বিচরণ। ধরা পড়ে জেলেদের জালে। অবশ্য সরবরাহ বাড়লেও কমছে না দাম। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা শোনাচ্ছেন নানা অজুহাত।
সমুদ্রে মৎস্য আহরণে ৬৫ দিন নিষেধাজ্ঞা শেষে গত ২৪ জুলাই মাছ ধরা শুরু করেন জেলেরা। প্রথম দিকে তেমন ইলিশ পাওয়া না গেলেও আগস্ট থেকে সরবরাহ বাড়তে থাকে। ইলিশের রাজধানী হিসেবে খ্যাত চাঁদপুরের বড় স্টেশন মৎস্য আড়ত এরই মধ্যে জমে উঠেছে। ব্যস্ত সময় পার করছেন পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা ও শ্রমিকরা। যদিও স্থানীয় নদীতে খুবই কম ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে। অধিকাংশই সামুদ্রিক বলে জানান ব্যবসায়ীরা। নোয়াখালীর হাতিয়া, ভোলার চরফ্যাশন, লক্ষ্মীপুর ও আশপাশের অঞ্চল থেকেই মূলত ট্রলার ও সড়কপথে ট্রাকে করে এসব মাছ আসছে চাঁদপুর মৎস্য ঘাটে। এর মধ্যে হাতিয়ার ইলিশই বেশি। বৃষ্টির কারণে প্রচুর পরিমাণে মাছ পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান সেখানকার জেলেরা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ৯৫ শতাংশ ইলিশই সাগর ও এর আশপাশ অঞ্চলের। বাকি ৫ শতাংশ পদ্মা-মেঘনার। গতকাল চাঁদপুর বড় স্টেশন মৎস্য আড়তে প্রায় ৭০০ মণ ইলিশ আমদানি হয়েছে। স্থানীয় বা লোকাল ইলিশ উঠেছে প্রায় সাত মণ। তবে সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি। গতকাল এক কেজি বা তার বেশি আকারের ইলিশ প্রতি মণ ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি কেজির দাম পড়েছে ১ হাজার ৫০০ টাকা। আবার ৮০০-৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশ প্রতি মণ ৪০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৫০০ গ্রাম আকারের ইলিশ প্রতি মণ ৩০ হাজার টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী কালু ভূঁইয়া বলেন, ‘চলতি মৌসুমের শুরুতে ইলিশ না পেলেও বর্তমানে সরবরাহ বেড়েছে। তবে এ সময়েও যে পরিমাণ আসার কথা সে পরিমাণ আমরা পাচ্ছি না। স্থানীয় ইলিশের দাম বেশি।’
জেলে ফরহাদ হোসেন বলেন, ‘লোকাল ইলিশ তেমন পাওয়া যায় না। বেশির ভাগই আসছে হাতিয়া থেকে। বৃষ্টি হওয়ায় সেখানকার নদীতে প্রচুর পরিমাণে ইলিশ ধরা পড়ছে। ইলিশের দেখা পাওয়ায় আমাদের কাজকামও মোটামুটি ভালো।’
চাঁদপুর মাছ ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আবদুল বারী জমাদার বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমাদের কাছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে চাঁদপুরের লোকাল অর্থাৎ পদ্মা-মেঘনার ইলিশের অর্ডার আসে। কিন্তু এ বছর লোকাল ইলিশ আমদানি একেবারে কম। চাহিদা থাকলেও ক্রেতাদের দিতে পারছি না।’ মৌসুমেও মাছের দাম বেশি থাকার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জ্বালানি থেকে শুরু করে ফিশিং বোট, জেলে ও ট্রলারের খরচ তিন গুণ বেড়েছে।’
জেলাটির মৎস্য কর্মকর্তা মো. তানজিমুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ার কারণে জেলেদের জালে এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি ইলিশ ধরা পড়ছে। বরিশালের হিজলা উপজেলার জেলে মো. বাহাউদ্দিন বলেন, ‘গত মাসে আমরা খুব হতাশ হয়ে গিয়েছিলাম। নদীতে একেবারেই ইলিশ পাইনি। কিন্তু আগস্টের শুরুতে বৃষ্টি শুরু হলে জালে ইলিশ ধরা পড়তে শুরু করে। এখন মোটামুটি সবাই ইলিশ পাচ্ছে।’
হিজলার মৎস্য আড়তদার আফসারুদ্দিন হাওলাদার বলেন, ‘এখন বাজারে ইলিশ আসছে। তবে দাম কমছে না। কারণ খরচ অনেক বেশি। বর্তমানে এক কেজি ওজনের ইলিশ প্রতি কেজি ১ হাজার ৫০০ থেকে ১ হাজার ৬০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ৭০০-৮০০ গ্রামের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায়। সরবরাহ বাড়লেও দাম কমেনি।’
রাজধানীর বিভিন্ন স্থানেও ইলিশের দাম মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে। প্রতি কেজি ইলিশ আকারভেদে ১ হাজার থেকে ১ হাজার ৭০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। কারওয়ান বাজারের মাছের আড়তদার মো. হাবিবুর রহমান বণিক বার্তাকে বলেন, ‘আমরাই বেশি দামে কিনে আনি। এ কারণে বাড়তি দামে বিক্রি করতে হয়। ইলিশের সরবরাহ আরো বাড়লে হয়তো দাম কমতে পারে।’
একই কথা জানিয়েছেন বরিশাল জেলা মৎস্য কর্মকর্তা (ইলিশ) বিমল চন্দ্র দাস। বণিক বার্তাকে তিনি বলেন, ‘আগে যেমন হুটহাট দাম কমে যেত এখন সেভাবে কমার সম্ভাবনা নেই। কারণ এখন সবাই মোবাইলের মাধ্যমে খোঁজখবর রাখেন। দাম কমার খবর শুনলে মজুদ করে রাখেন ব্যবসায়ীরা। পরে বিক্রি করার চিন্তা থাকে। আমরা আগে থেকেই জেলেদের হতাশ না হওয়ার জন্য বলেছিলাম। কারণ বৃষ্টির সঙ্গে সঙ্গে ইলিশের পরিমাণ বাড়ে। সামনে আরো বাড়বে।’