মোঃ জাবেদ হোসেন :
জাতীয় মৎস্য সম্পদ ইলিশ মাছের নিরাপদ প্রজনন সম্ভব হচ্ছে না। সরকারের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে চাঁদপুরের মেঘনা এবং পদ্মায় চলছে মা ইলিশ নিধনের উৎসব। মতলবের ষাটনল থেকে হাইমচরের চরভৈরবী পর্যন্ত মেঘনার ৬০ কি.মি. নদী এখন ইলিশ শিকারীর দখলে। নদীর পাড়ে প্রকাশ্যে ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে ইলিশের। ব্যাগ ভরে মাছ কিনে নিচ্ছে সাধারণ মানুষ। মা ইলিশ রক্ষায় স্থানীয় প্রশাসন সোচ্চার থাকলেও দল বেঁধে জেলে এবং জনগণ সবাই ইলিশ ধরা, ক্রয়-বিক্রয়ের পক্ষে থাকায় অভিযান সফল হতে পারছে না। ইলিশ আটক নিয়েও চলছে বাণিজ্য এবং মাছ ভাগাভাগি। প্রত্যক্ষদর্শীদের অভিমত, ইলিশ প্রজনন রক্ষা অভিযান তো নয়, এ যেনো ইলিশ নিধন, বিক্রি, সংগ্রহ এবং কম দামে ইলিশ খাওয়ার উৎসব। মা ইলিশ রক্ষা আইন যেমন জেলেরা মানছে না, পাবলিকও মানছে না। পরিকল্পিতভাবে প্রশাসনের অভিযান পারিচালিত না হওয়ায় সমূলে ইলিশ ধ্বংসযজ্ঞের মহড়া বেশি হচ্ছে। কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ হচ্ছে না। চাঁদপুরে যে হারে ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ আহরণ হচ্ছে, আগামী ভরা মওসুমে ইলিশ উৎপাদনে এ বছরের চেয়েও আরও খারাপ পরিস্থিতি হতে পারে।
প্রত্যক্ষদর্শী অনেকেরই অভিযোগ, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা পাবলিকের মাছ আটক করে নিয়ে যায়। কিন্তু যারা মাছ বিক্রি এবং আড়তদারি করছে তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। বিপুল পরিমাণ ইলিশ আটক করলেও পুলিশ, কোস্টাগার্ড পরবর্তীতে জেলা টাস্কফোর্সের কাছে মাছ আটকের সঠিক পরিমাণ তুলে ধরা হচ্ছে না। প্রতিদিনই ইলিশ আটকের ঘটনা ঘটছে। সেগুলো দুঃস্থদের মাঝে বিতরণ না করে যারাই আটক করছে তাদের আওতায় নিয়ে যাওয়ার পর সেই মাছ উধাও হয়ে যায়। এমন অভিযোগ মানুষের মুখে মুখে।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় এক প্রজ্ঞাপনে গত ৫ অক্টোবর হতে ১৫ অক্টোবর পর্যন্ত এ ১১ দিন চাঁদপুর মেঘনা এলাকাসহ দেশের চৌদ্দ জেলার নদীতে ইলিশ প্রজনন রক্ষায় ইলিশ আহরণ, ক্রয়-বিক্রয়, পরিবহণ এবং মজুদ নিষিদ্ধ করেছে। পূর্ণিমার আগে এবং পরের এগারো দিন প্রজনন সক্ষম ইলিশ মাছ দল বেঁধে সাগর থেকে ডিম ছাড়ার জন্যে মিঠা পানিতে আসতে থাকে। সাগর মোহনা ও নদ-নদীতে প্রজনন সক্ষম ইলিশ এ সময়ে ডিম ছাড়ে। নিরাপদে যাতে মা ইলিশ নদীতে ডিম ছাড়তে পারে, কোনোভাবেই যাতে বাধাগ্রস্ত না হয়, সেজন্যে ইলিশ নিধন
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর চর, এ চরের পশ্চিমে পদ্মা নদীর মোহনা বিষ্ণুপুরের লালপুর, আনন্দ বাজার, সফরমালী, মাদ্রাসা লঞ্চ ঘাটের পশ্চিমে খালের মুখ, পুরাণবাজার হরিসভা থেকে নামার রণা গোয়াল, দোকানঘর, বহরিয়া, লক্ষ্মীপুর, হরিণা ফেরি ঘাট, গাজী বাড়ি খাল, রাঢ়ী বাড়ি খাল, হরিণা স্কুলের পাশে, নন্দীগো দোকান, আখনের হাট, মেঘনার পশ্চিমে ইব্রাহিমপুর ইউনিয়ন চর এলাকা, আলু বাজার, ঈদগাহ বাজার, চর মুকুন্দি, হাইমচরের কাটাখালী থেকে চরভৈরবী এবং শরিয়তপুরের গোসাইর হাট পর্যন্ত এসব এলাকার শত শত জেলে এখন মা ইলিশ রক্ষা অভিযানের মধ্যেও মাছ ধরছে। সেখানেই নদীর পাড়ে মাছের আড়ত এবং ভাসমান অবস্থায় জেলেদের আহরিত ইলিশ ক্রয়-বিক্রয় হচ্ছে।
জেলা টাস্কফোর্সের দায়িত্বে থাকা কর্মকর্তা ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ মাসুদ আলম সিদ্দিক জানান, নদীতে জেলেরা অবৈধভাবে মাছ ধরতে এবং মানুষ যাতে কিনতে না পারে জেলা প্রশাসকের নির্দেশ অনুযায়ী জেলা টাস্কফোর্সের ৬টি মোবাইল টিম সার্বক্ষণিক কাজ করছে। ৪টি জায়গা চিহ্নিত করে বসানো হয়েছে চেক পোস্ট। রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ এ কাজে প্রশাসনের মধ্যে যারাই অনিয়ম করবে তদন্ত করে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে। টাস্কফোর্সের সর্বোচ্চ চেষ্টা অব্যাহত থাকবে জানিয়ে তিনি ২/১ দিনের মধ্যে ইলিশের প্রজনন রক্ষা কার্যক্রমে আরও ভালো রেজাল্ট পাওয়ার আশ্বাস দেন।
পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর জানান, নদীতে সারাক্ষণ টইলের পাশাপাশি নদীর পাড়ের আড়তগুলোকে নিয়ন্ত্রণে পুলিশের চেষ্টার ত্রুটি নেই। আগামী কয়েক দিনও তা অব্যাহত থাকবে। পুলিশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ হয় এমন কাজ না করার নির্দেশ রয়েছে। তিনি জাতীয় মৎস্য সম্পদ রক্ষায় জনপ্রতিনিধি, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং এলাকায় যাদের প্রভাব প্রতিপত্তি রয়েছে তাদের সহযোগিতা কামনা করেন। চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা সফিকুর রহমান জানান, জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্টের অভাবে ইলিশ রক্ষার এ অভিযান অনেক সময় ব্যর্থ হচ্ছে। তারপরও আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। জেলেরা সচেতন না হলে ইলিশ উৎপাদন বৃদ্ধি সম্ভব নয়।
শিরোনাম:
মঙ্গলবার , ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ২ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।