প্রতিনিধি
চাঁদপুর শহর এলাকার খালি জায়গাগুলো ক্রমান্বয়ে ভরাট করে ফেলায় সেখানে তৈরি হচ্ছে একের পর এক স্থাপনা। ফলে শহর এলাকার পরিবেশ ভারসাম্য হারাতে বসেছে। ভবিষ্যৎ চাঁদপুর নিয়ে কারোরই যেনো চিন্তা ভাবনা বা পরিকল্পনা নেই। ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের সরকারি যে সম্পদ রয়েছে সে জায়গাগুলো নানা প্রক্রিয়ায় বেদখল হয়ে যাচ্ছে। ব্যক্তির সুবিধার্থে ক্রমান্বয়ে শহরের ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের বিস্তীর্ণ জায়গাগুলো একের পর এক দখল করে নিচ্ছে ভূমি দস্যুরা। প্রশাসন থেকে উচ্ছেদ অভিযান নেই। নির্ধারণ করা হয়নি নদীর পাড় সংলগ্ন ভূমি অফিসের অধীন সরকারি খাস জমির পরিমাণ। বিআইডাব্লিউটিএর চাঁদপুর নদী বন্দর সীমানা অনুযায়ী তাদের জায়গার পরিমাণ কতো? ভূমি মন্ত্রণালয় এবং বিআইডাব্লিউটিএর মধ্যে সমন্বয় না থাকায় সরকারের বিপুল পরিমাণ জায়গা পর্যায়ক্রমে বেহাত হচ্ছে। কতিপয় কর্মকর্তা এ সুযোগে আর্থিক লাভবানও হচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সরজমিনে দেখা যায় চাঁদপুর শহরের ৫নং ঘাট থেকে স্ট্যান্ড রোডের পেছনের অংশসহ চৌধুরীঘাট পর্যন্ত এবং কোস্টগার্ড স্টেশন জেটি থেকে সিভিল সার্জন অফিস, পৌর পাঠাগার, প্রেসক্লাব, জেলা পরিষদ বাংলো, আল আমিন স্কুল থেকে মুখার্জিঘাট পর্যন্ত কয়েকশ’ একর সরকারি সম্পত্তি রয়েছে। এ সম্পত্তি ভূমি অফিস কিংবা বিআইডাব্লিউটিএ যার অধীনের সম্পত্তি হোক না কেন অনেক মূল্যবান। এ সম্পত্তিগুলোতে গড়ে উঠতে পারে মনোরম পরিবেশে চাঁদপুরের বহু স্থাপনা। কিন্তু নানা প্রক্রিয়ায় উল্লেখিত এলাকার জায়গাগুলো দখল করে ব্যক্তি বিশেষের স্থাপনা একের পর এক গড়ে উঠতে দেখা যায়। পর্যবেক্ষক মহলের অভিমত স্ট্র্যান্ড রোডের এক শতক জায়গার বর্তমান মূল্য ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা। চান্দিনা ভিটের জায়গাও নেই। এই সুযোগে নদীর পাড়ের জায়গার উপর অনেক লোভ ব্যক্তি বিশেষের। ভূমিদস্যুরা রাজনৈতিক দলের কিংবা সরকার দলের প্রভাব বিস্তার করে মন্ত্রী-এমপির সুপারিশে সরকারি সম্পত্তি হাতিয়ে নেবার পাঁয়তারা করছে। অনেকে বহু জায়গা হাতিয়ে নিয়ে স্থায়ী স্থাপনাও গড়ে তুলেছেন। যে যেভাবে পারছে এসব জায়গা দখল করছে এবং অনেকে সেই জায়গা ব্যবহার করে ডক ইয়ার্ডের মতো প্রতিষ্ঠানও দিয়ে বসেছে। ব্যবসায়িক কাজের মালামালও রাখার নাম করে জায়গা দখল করে নিচ্ছে।
একটি সূত্রে জানা যায়, গত ৩ বছর আগে মাদারীপুরের এক প্রভাবশালী ব্যক্তি বিআইডাব্লিউটিএর ১৮৪ শতক জায়গা ৫নং ঘাটের মেঘনা ডিপোর পেছনে এবং সিভিল সার্জন অফিসের পেছনে ডাকাতিয়ার চর লিজ হাতিয়ে নিয়েছেন। সেই ব্যক্তি চাঁদপুরের ২০ থেকে ৩০ জনের একটি গ্রুপ নিয়ে চেষ্টায় আছেন প্রাপ্ত লিজের জায়গা দখল বুঝে নেবার। চাঁদপুর নৌ বন্দর কর্মকর্তা মোবারক হোসেন স্বীকার করেন লিজের বিষয়টি। বিআইডাব্লিউটিএর এ কর্মকর্তা জানান, ৩ বছর যাবৎ প্রাপ্ত লিজের অনুকূলে সরকারকে তারা রাজস্ব দিয়ে আসছেন। বিভিন্ন জটিলতার কারণে তারা জায়গা তাকে বুঝিয়ে দিতে পারছে না। বেদে সম্প্রদায় বহু বছর যাবৎ ৫নং ঘাট থেকে স্ট্র্যান্ড রোডের পেছনে বসবাস করছে। তাদের পরিণতি কি হবে তাও অনিশ্চিত। মোহামেডান ক্লাব সংলগ্ন অনেক জায়গা দখল করা হয়েছে। অনেকে বসতিও গড়ে তুলেছে। সরকারের মূল্যবান জায়গাগুলো ব্যক্তির দখলে চলে গেলে ভবিষ্যৎ চাঁদপুরের অনেক উন্নয়ন বরাদ্দ এবং উন্নয়ন কাজের জায়গা খুঁজে পাওয়া যাবে না। শহরবাসীর বৃহত্তর স্বার্থ সংরক্ষণে ডাকাতিয়ার পাড় দখলমুক্ত করে পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার দাবি উঠেছে। জনস্বার্থে চাঁদপুরের দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী, এমপি জেলা প্রশাসন, পৌর মেয়র, বিআইডাব্লিউটিএ কর্তৃপক্ষ, সাংবাদিক মহল এবং সুধী মহলকে এ ব্যাপারে সোচ্চার হতে হবে। তা না হলে এমন দিন আসবে স্বস্থির নিঃশ্বাস নিয়ে শহরবাসী হাঁটার জায়গা পর্যন্ত খুঁজে পাবে না। একটি মাত্র সরু রাস্তার জন্য পুরাতন লঞ্চঘাট এখন ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। নদীর পাড়ে পর্যাপ্ত জায়গা থাকা সত্ত্বেও প্রশস্ত রাস্তা করতে পারছে না। শহরের যানজট নিরসনেও ডাকাতিয়া নদীর পাড়ের জায়গা হতে পারে বিকল্প রাস্তা এবং সৌন্দর্য মণ্ডিত রিভার পার্ক।