তফসিল ঘোষণার পূর্বে অবৈধ সংসদ ভেঙে না দিলে আন্দোলনের দাবানল ছড়িয়ে পড়বে
-মাওলানা গাজী আতাউর রহমান
ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ-এর সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেছেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিতে শকুনের নজর পড়েছে। ক্ষমতাসীনরা ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য সেই শকুনদের মনোরঞ্জনে ব্যস্ত। কিন্তু সরকারকে মনে রাখতে হবে বিদেশীদের মনোরঞ্জন করে ক্ষমতায় টিকে থাকার স্বপ্ন বাস্তবায়ন হবে না। দেশ বাঁচাতে আওয়ামী হায়েনাদের পতন ঘটাতে হবে। ২০১৪ ও ১৮ সালের মতো যেন তেনভাবে কোনো নির্বাচন আয়োজন দেশবাসি রুখে দেবে।
তিনি আরও বলেন, দখলদার সরকার গণমানুষের সকল অধিকার কেড়ে নিয়েছে। আওয়ামী লীগ দিনের ভোট রাতে করে অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পূর্বেই সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। বাংলাদেশে দলীয় সরকারের অধীনে ভালো নির্বাচন অতীতে হয়নি ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনাও নেই। সংবিধানের দোহাই দিয়ে যেন তেন নির্বাচন আয়োজনের চেষ্টা করা হলে দেশ অনিবার্য সংঘাতের দিকে ধাবিত হবে। দেশে নতুন করে সংঘাত সংঘর্ষ, ও সংকট তৈরি হোক এটি আমরা চাই না।
অনিবার্য সংঘাত এড়াতে সরকারকে দ্রুত পদত্যাগের ঘোষণা দিতে হবে।
সরকার সসম্মানে পদত্যাগ না করলে পদত্যাগে বাধ্য করা হবে। গোটা জাতি আজ গণঅভ্যুত্থানের অপেক্ষায়।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাওলানা গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, বিগত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগ দেশ ধ্বংস করে ফেলেছে। দেশের বিচারব্যবস্থা, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের স্বাধীন সকল প্রতিষ্ঠানগুলো ধ্বংস করে ফেলেছে। এ অবস্থায় একটি দেশ চলতে পারে না। আমরা দেশের ভয়াবহ পরিস্থিতি থেকে গণমানুষকে মুক্ত করতে চাই।
গাজী আতাউর রহমান আরও বলেন, বেগম খালেদা জিয়া শুধু সাবেক প্রধানমন্ত্রীই নন, তিনি একজন সিটিজেন মহিলা, একজন সম্মানিত ব্যক্তি এবং বয়োবৃদ্ধ মানুষ। নাগরিক হিসেবে তার সর্বোচ্চ চিকিৎসাসেবার অধিকার রয়েছে। সরকার তার চিকিৎসা না দিয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য করে যে বক্তব্য দিয়েছেন আমরা তার তীব্র নিন্দা জানাই। বেগম খালেদা জিয়ার কিছু হলে এর দায় আওয়ামী লীগ ও সরকারকেই নিতে হবে।
তিনি বলেন, ওবায়দুল কাদের সাহেব বলছে “তলে তলে সব ফায়সালা হয়ে গেছে”। আসলে তলে তলে দেশ বিদেশের সকল শক্তিই এখন তলে তলে আওয়ামী লীগ ছেড়ে চলে গেছে চলে যাচ্ছে। দিল্লির গোলামি করে এদেশে কাউকে ক্ষমতায় থাকতে দেয়া হবে না।
প্রধান অতিথি আরও বলেন, দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে মানুষ আজ দিশেহারা। সরকারের দায়িত্বশীল, মন্ত্রী-এমপিরাই এসবের জন্য দায়ী। টোটাল বাজারব্যবস্থাকে আজ সিন্ডিকেটে আবদ্ধ করে ফেলেছে সরকারের ছত্রছায়ায় থাকা গুন্ডাপান্ডারা।
সমাবেশে বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা আল্লামা খালিদ সাইফুল্লাহ, কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ড. বেলাল নূর আজিজী, কেন্দ্রীয় সংখ্যালঘু বিষয়ক সম্পাদক শায়খুল হাদিস আল্লামা মকবুল হোসাইন, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাওলানা খলিলুর রহমান।
জেলা সভাপতি শেখ মুহাম্মদ জয়নাল আবদিনের সভাপতিত্বে ও জেলা সেক্রেটারি কেএম ইয়াসিন রাশেদসানী, সহ-প্রচার ও দাওয়াহ বিষয়ক সম্পাদক এইচ এম নিজামের যৌথ পরিচালনায় এতে বক্তব্য রাখেন জেলা সিনিয়র সহ-সভাপতি হাফেজ মাওলানা মুহাম্মদ মাকসুদুর রহমান, নির্বাহী সদস্য মাওলানা নুরুল আমিন, মাওলানা হেলাল আহমাদ, আলহাজ মামুনুর রশিদ বেলাল, যুবনেতা মাওলানা ইমরান হোসাইন, ছাত্রনেতা সেলিম হোসাইন প্রমুখ।
বিদ্যমান রাজনৈতিক সংকট উত্তরণে সংসদ ভেঙে দিয়ে জাতীয় সরকারের অধীনে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন,
অথর্ব প্রধান নির্বাচন কমিশনারের পদত্যাগ ও ব্যর্থ নির্বাচন কমিশন বাতিল,
সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন [pr] পদ্ধতি প্রবর্তন এবং দ্রব্যমূল্যের চরম উর্ধ্বগতি রোধ করে জনদুর্ভোগ লাঘবের দাবিতে আজ ৬ অক্টোবর ২০২৩ চাঁদপুর শহরের হাসান আলী হাইস্কুল মাঠে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
বিশেষ অতিথির বক্তব্যে মাওলানা খালিদ সাইফুল্লাহ বলেন, এদেশে যারা রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় গিয়েছে তারা সকলেই রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন ছাড়া জাতিকে তারা কিছুই উপহার দিতে পারেনি।
বক্তারা বলেন, আওয়ামী লীগ দেশের টাকা বিদেশে পাচার করার মহোৎসবে মেতে ওঠেছে। স্বাধীনতার পক্ষের শক্তির নামে আজ দেশে চলছে দুর্নীতি, লুটপাট ও দেশের টাকা বিদেশে পাচার। স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫২ বছরেও মানুষ তাদের অধিকার ফিরে পায়নি। মানুষ এখন বিকল্প চায়। আগামিতে ইসলামই হবে এদেশের মূল শক্তি।
উল্লেখ্য প্রচণ্ড ঝড়বৃষ্টি উপেক্ষা করে বিকেল ৩টার মধ্যেই হাসান আলী হাইস্কুল মাঠ কানায় কানায় পরিপূর্ণ হয়ে যায়। বিকেল ৩টার পূর্বেই চাঁদপুর শহর মিছিলের শহরে পরিণত হয়। শ্লোগানে শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো চাঁদপুর শহর।