চাঁদপুর: চাঁদপুর বড় স্টেশন মাছের আড়ৎগুলোতে এখন শুধুই ইলিশ আর ইলিশ। দক্ষিণাঞ্চল থেকে একের পর এক ইলিশ ভর্তি ট্রলার এসে ভিড়ছে মাছ ঘাটে। প্রচুর ইলিশ আমদানি হওয়ার কারণে বরফের দেখা দিয়েছে তীব্র সংকট। চাঁদপুরে ২/৩ দিন ঘনঘন লোডশেডিং ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণে এখানকার বরফ মিলগুলো আমদানিকৃত মাছের পরিমাণে বরফ সরবরাহ করতে পারছেনা। যার ফলে নদী বক্ষে থাকা বড় বড় ফিশিং ট্রলারগুলোও নদীতে বেশিক্ষণ মাছ নিয়ে অবস্থান করতে পারছে না। বরফ সংকটের কারণে ইলিশ মাছ বাজারজাত করাতে পারছেনা এখানকার বড় বড় রপ্তানিকারকরা। ইলিশের দাম কমে যাওয়ার কারণে গতকাল দিনভর উৎসুক মানুষজন চাঁদপুরের মাছঘাটে এসে ভিড় করতে থাকে এবং প্রত্যেকেই তাদের বাসা-বাড়ির জন্যে যার যার সামর্থ্যানুযায়ী ইলিশ কিনে ব্যাগ হাতে ফিরছে।
রূপালী ইলিশের রাজধানী খ্যাত চাঁদপুর মাছ ঘাটে রেকর্ড পরিমাণ মাছ ক্রয়-বিক্রয় হয়েছে। হাজী মালেক খন্দকার, শবে বরাত কোম্পানী, গফুর জমাদার, মেজবাহ মাল, সিরাজ চোকদার (বড়), দুলাল গাজী, বাবুল হাজী, কালু ভূইয়া, উত্তম দাস, হযরত আলী বেপারী, কুদ্দুছ খার মালিকানা। বড় বড় মৎস্য আড়ৎগুলোতে ইলিশের স্তুপ আর স্তুপ। সেখানে পা ফেলার জায়গা নেই। প্রকাশ্যে দাম হাকা হচ্ছে পাইকারি এবং সর্বোচ্চ দাম দিয়ে মাছ কিনে নিয়ে যার যার মোকামে প্যাকেটজাত করে পাঠিয়ে দিচ্ছে। প্রতিদিন গড়ে দু’ থেকে আড়াই হাজার মন ইলিশ এই ঘাটে আমদানী এবং বিক্রি হচ্ছে। লোকাল মাছের দাম একটু বেশি। আড়ৎদাররা জানিয়েছেন, চাঁদপুর ঘাটে যা মাছ আসছে সবই সমুদ্র উপকূলীয় এলাকার। ভাদ্র মাস থেকে এ যাবত ভোলার চরফ্যাশন, ডালের চর, পটুয়াখালীর লেতরা, দেইরচর, নোয়াখালীর হাতিয়া সহ দক্ষিণ অঞ্চলে এবার ঝাঁেক ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়েছে। সরকার দেশের বাহিরে ইলিশ রপ্তানী বন্ধ ঘোষনা করায় ওই এলাকার কিছু ইলিশ চাঁদপুর আসে। নামার ইলিশ আসায় মাছ ঘাট এখন সরগরম দেখা যাচ্ছে। প্রতিটি ফিশিং ট্রলারে চাঁদপুরের ব্যবসায়ীদের লাখ লাখ এমনকি কোটি টাকা দাদন রয়েছে। চাঁদপুর মৎস্য বনিক সমবায় সমিতি লিমিটেড সাধারণ সম্পাদক ইদ্রিস আলী গাজী জানান, তুলনা মূলক মাছের আমদানি কিছুটা বেড়েছে। আগের পর্যায়ের ইলিশ আসেনি। এবার মৌসুমের শেষ পর্যায় কিছু ইলিশ দেখা দিয়েছে। এ মাছ আরো ২ মাস আগে ধরা পড়ার কথা ছিল। ভরা মৌসুম থেকে ইলিশ ধরা পড়লে মাছের দাম আরো কম হতো। তিনি আরো জানান, চাঁদপুর মেঘনা অববাহিকায় ইলিশ খুবই কম ধরা পড়ছে।
মৎস্য ব্যবসায়ী ও চাঁদপুর জেলার শীর্ষ আয়কর দাতা হাজী আব্দুল মালেক খন্দকার জানান, দেরিতে হলেও মোটামুটি ভাল মাছ ঘাটে এসেছে। তিনি বলেন, সরকার এলসি বন্ধ করেছে ঠিকই কিন্তু সাগর এলাকা দিয়ে প্রচুর পরিমাণ ইলিশ পাচার হয়ে যাচ্ছে। তা না হলে আরো ব্যাপক ইলিশ আমরা পেতাম।
ফিশিং ট্রলার থেকে আড়তে মাছ উঠানো হচ্ছে। শুধু ফিশিং ট্রলারই নয়, চতুর্দিক থেকে নদী ও সড়ক পথে শত শত মণ ইলিশ এখানে বিক্রির জন্য আনা হয়। এদিকে আড়তে ইলিশের দাম কম হলেও হাট-বাজারে ইলিশের দাম বেশি। দামের এই তফাৎ কী কারণে জানতে চাইলে মৎস্য ব্যবসায়ী আবুল খায়ের গাজী, আব্দুর রব চোকদার ও মিজান জমাদার জানায়, মাছের সাইজ অনুযায়ী বড় মাছের বড় দাম, ছোট মাছের ছোট দাম। উদাহারণ স্বরুপ বলেন, আড়তে ১মণ ইলিশ পাইকারি দরে কেনা হলে তার মধ্যে ২০ কেজি ইলিশ ৫শ’ থেকে ৭শ’ গ্রাম ওজনে ১০ কেজি ৮শ’ গ্রাম এবং ১০ কেজি মাছ পাওয়া যায় ১কেজি সাইজের। ছোট বড় মিলিয়ে পাইকারি দরে মাছ কেনা হয়। বিক্রির সময় বাছাই মাছের দাম বেশি পড়ে। পাইকারি ও খুচরা বাজারে এখন তেমন পার্থক্য নেই বলে জানায়। ইলিশের ব্যাপক ছড়াছড়ি চোখে পড়লেও চাঁদপুরে এসব মাছ হাত বদল হয়ে চলে যাচ্ছে বিভিন্ন স্থানে। অনেকে ফ্যাক্টরিতে মজুদ করে রাখছে। প্রচুর ইলিশ থাকার পরও বড় ইলিশের দাম বেশি হওয়ায় সবাই এর স্বাদ নিতে পারে না
শিরোনাম:
বৃহস্পতিবার , ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ খ্রিষ্টাব্দ , ২০ মাঘ, ১৪২৯ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।