ভারতে ভণ্ড ধর্মগুরুদের অভাব নেই। এদের কেউ কেউ নিজেকে দাবি করেন অবতার বলে, কেউ বা ভগবান কেউ বা সাধু, ঋষি বা অন্য কিছু।
হরিয়ানা রাজ্যের স্বঘোষিত ধর্মগুরু রামপাল গত ১৯ নভেম্বর গ্রেফতার হন। তাকে গ্রেফতার করতে প্রায় ২৭ কোটি টাকা খরচ হয়েছে সরকারের। পাঞ্জাব, হরিয়ানা ও চণ্ডিগড় প্রশাসন এবং কেন্দ্র মিলিতভাবে এ টাকা খরচ করেছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানা হাইকোর্টে পেশ করা হরিয়ানা পুলিশের ডিজি এস এন বশিস্টের রিপোর্ট অনুযায়ী এ খরচের টাকা ২৬.৬১ কোটি টাকা।
তার আশ্রম থেকে প্রচুর আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ, বুলেট প্রুফ জ্যাকেট, কমান্ডোদের পোশাক, পেট্রোল বোমা, ৫ হাজার লাঠি, হেলমেট, প্রচুর মোবাইল ফোন এমনকি প্রেগন্যান্সি টেস্ট করা ও গর্ভনিরোধক সরঞ্জামও উদ্ধার করেছে পুলিশ।
গ্রেফতার হয়েছে তার ৯০০ অনুগামীও। ১২ একর আশ্রমে তল্লাশি চালিয়ে গোপন সুড়ঙ্গ পথে ঢুকে পুলিশ খোঁজ পেয়েছে ২৪টি এসি ঘর, ম্যাসাজ পার্লার, এলিভেটর, সুইমিং পুলসহ বিলাসবহুল সামগ্রীর।
স্বঘোষিত ধর্মগুরুদের মধ্যে রয়েছেন অনেকেই। এদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- চন্দ্রস্বামী, ধীরেন ব্রহ্মচারী, আসারাম বাপু, গুরমিত রাম রহিম সিং, নিত্যানন্দ স্বামী, স্বামী প্রেমানন্দ, স্বামী সদাচারী, চিত্রকূটের ইচ্ছাধারী সন্ত স্বামী ভীমানন্দ জি মহারাজ, মহাঋষি মহেশ যোগী, ওশো রজনীশ প্রমুখ।
চন্দ্রস্বামী : একাধিক রাজনীতিকদের সঙ্গে ওঠাবসা ছিল তার। খুবই প্রভাবশালী ছিলেন তিনি। রাজীব গান্ধী হত্যায় তার যোগসূত্র ছিল বলে ১৯৯৮ এম সি জৈন রিপোর্টে দাবি করা হয়। আশ্রমে আয়কর হানাতেও একাধিক অস্ত্র ব্যবসায়ীর সঙ্গে যোগাযোগের প্রমাণ মেলে।
ধীরেন ব্রহ্মচারী : তিনি ইন্দিরা গান্ধীর যোগগুরু ছিলেন। তার সঙ্গে সম্পর্কের ধরন নিয়ে সেই সময় বিতর্ক ছড়ায়। ১৯৯৪ সালে তার মৃত্যুর পর তার একাধিক সম্পত্তি বেআইনি বলে ঘোষণা করে দখল করে সরকার।
গুরমিত রাম রহিম সিং : ডেরা সাচ্চা সওদা গোষ্ঠীর প্রধান গুরু। সিরসায় গোষ্ঠীর সদর দফতরে মহিলা ভক্তদের ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে। ২ সাংবাদিকের হত্যার চক্রান্তেও নাম জড়িয়েছে।
আসারাম বাপু : আশ্রমের গুরুকুলে ২ বালকের হত্যার অভিযোগে প্রথম খবরে আসেন। মহিলা ভক্তদের ধর্ষণের দায়ে আপাতত জেলবন্দি। ধরা পড়েছেন তার ছেলেও।
নিত্যানন্দ স্বামী : এক দক্ষিণী অভিনেত্রীর সঙ্গে তার যৌন সম্পর্কের ভিডিও ফুটেজ সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশিত হওয়ার পর ব্যাপক বিতর্ক শুরু হয় তাকে নিয়ে।
স্বামী প্রেমানন্দ : তিরুচিরাপল্লী আশ্রমের এ ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরে ১৩ জন মহিলাকে ধর্ষণ করার প্রমাণ মেলে। এক শ্রীলঙ্কার নাগরিককে হত্যার অভিযোগও ছিল।
স্বামী সদাচারী : এক সময় প্রভাবশালী ছিলেন খুবই, কিন্তু রাজনৈতিক ক্ষমতাবলে প্রভাব হারান। যৌনপল্লী চালানোর দায়ে আপাতত জেলে আছেন।
চিত্রকূটের ইচ্ছাধারী সন্ত স্বামী ভীমানন্দ জি মহারাজ : ১৯৯৭ সালে দেহ ব্যবসা চালানোর দায়ে লাজপত নগর থেকে গ্রেফতার হন। জেল থেকে বেরিয়ে নিজেকে সাঁই বাবার শিষ্য বলে পরিচয় দেন।
মহাঋষি মহেশ যোগী : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ধর্মগুরু বলে দাবি। দেশের নানা জায়গায় ও বাইরের একাধিক দেশে আশ্রম রয়েছে। মহিলা ভক্তদের সঙ্গে যৌন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়াসহ টাকা পয়সা নয়-ছয়ের অভিযোগ ওঠে।
ওশো রজনীশ : রাজনীতি, ধর্ম, যৌনতাসহ নানা বিষয়ে ছকভাঙা মতামতের জন্য বরাবরই বিতর্কের কেন্দ্র বিন্দুতে ছিলেন। আশির দশকে আমেরিকায় অভিবাসন সংক্রান্ত নিয়ম এড়ানোর অভিযোগে গ্রেফতার হয়েছিলেন।