খোরশেদ আলম শিকদার ঃ
চাঁদপুরের কচুয়ার দোয়াটি গ্রামে লোকনাথ মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখার দায়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের এক ভন্ড কবিরাজ কথিত পীর ও সাধক সঞ্জয় সরকার (৩০) ওরফে বাবা মনিকে শনিবার রাতে কচুয়া থানা পুলিশ গ্রেফতার করে চাঁদপুর জেলহাজতে প্রেরন করেছে। তাকে গ্রেফতারের পর মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজনের মধ্যে স্বস্থি ফিরে এসেছে।
এলাকাসুত্রে জানাযায়, উপজেলার দোয়াটি গ্রামের অনিল সরকারের ছেলে শ্রী সঞ্জয় সরকার ওরফে বাবা মনি তার গ্রামে বসতঘরের পাশে প্রায় ১২ শতক জায়গার ২ শতক জমির উপর মানুষকে ধোকা দিয়ে নেয়া অর্থ দিয়ে একটি লোকনাথ মন্দির স্থাপন করে, বিগত ৫ বছর যাবৎ নিজেকে ৪ ধর্মের পীর ও লোকনাথ এবং সাধক দাবী করে “মানব ধমর্” নামে নতুন ধর্ম ঘোষনা দিয়ে লোকনাথ মন্দিরে মুর্তির পাশে ৩ খানা পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে এবং দেয়ালে মক্কা শরীফ,রওজা শরীফ,মদীনা শরীফের ছবি টানিয়ে ইসলাম ধর্মের লোকজনকে আকৃষ্ট করেছে। আর বলেছে এ কোরআন শরীফ পীর অলিরা তার ওপর সোয়ার হয়ে পাঠ করেন। ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম,বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম ৪ ধর্মের পীর অলিরা তার শরীরের আশ্রয় নিয়ে সোমবার সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত ইসলাম ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম এবং শুক্রবারে সকাল ৯টা থেকে দুপুর ২টা পর্যন্ত হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধ ধর্মের প্রচারকারী হিসেবে ৪ ধর্মের পীর অলিরা ধর্ম প্রচারের দায়িত্ব দেন। সে মোতাবেক লোকদের নিয়ে ঢোল, বাদ্য, যন্ত্র নিয়ে মজনা বানিয়ে লোকনাথ মন্দিরে গান করেন ও তার “মানব ধর্ম” নামে নতুন ধর্মের কার্যক্রম প্রচার করেন। এ মজমায় নিং সন্তান মা সন্তান পাবে, পঙ্গু মানুষ ভাল হবে, অন্ধ মানুষ তার দৃষ্টি ফিরে পাবে বলে জানান। এছাড়াও বিভিন্ন রোগ বালাই ভাল হয়ে যাবে বলে পানিপড়া, তেল পড়া, সুতা পড়া দেন কথিত এ “মানব ধমর্” প্রচারক পীর। ৪ ধর্মের প্রচারক ও মহামানব দাবী করে নিজেকে অলৌকিক কবিরাজ, পীর, সাধক ও লোকনাথ দাবী করে নানান ভন্ডামী কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। হিন্দু সম্পদায়ের লোকনাথ বাবার মাথা কেটে তার নিজের মাথা ও মুখমন্ডল লাগিয়ে নিজে লোকনাথ দাবী করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিজেকে আধ্যাতিক ঘোষনা করে তার প্রকৃত নাম সঞ্জয় সরকার বাদ দিয়ে নাম দেয়া হয়েছে বাবা মনি।
এ সংবাদ কচুয়া প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি সাংবাদিক খোরশেদ আলম শিককদার জানতে পেরে কথিত পীরের ও কবিরাজ বাবা মনি’র লোকনাথ মন্দিরে যান। সেখানে গিয়ে দীর্ঘ ৪ ঘন্টা যাবৎ সঞ্জয়ের সাথে কথা বলে লোকনাথ মন্দির নির্মান, লোকনাথ মন্দিরে মুর্তির পাশে পবিত্র কোরআন শরীফ রাখাসহ নিজেকে অলৌকিক কবিরাজ,পীর,সাধক ও লোকনাথ দাবীর কারন জানতে চাইলে বাবা মনি ভন্ড কবিরাজ সাংবাদিক খোরশেদ আলমের সাথে তার কথিত সাজানো ভন্ডপীর ও কবিরাজীর কাহিনী বাবা মনি বর্ননা দেন।
এ ভন্ড কবিরাজ কথিত “মানব ধর্ম” প্রচারকারী সঞ্জয় ওরফে বাবা মনির সাথে প্রায় ৪ ঘন্টা আলাপ করে তার তথ্য নেন এবং বিভিন্ন ছবি ও ভিডিও চিত্র ধারন করেন। বিষয়টি শ্রেফ ভন্ডামী এবং কোরআন অবমামনা হচ্ছে বিষয়টি বুঝতে পেরে এ ভন্ডামীর ছাড় দিতে রাজী নন এ সাংবাদিক। তিনি তাৎক্ষনিক ৪নং পূর্ব সহদেবপুর ইউপির প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক সাহেবকে জানান। পরে দহুলিয়ার শাজুলিয়া দরবার শরীফের পীরজাদা মাওলানা শাহ মুহাম্মদ রুহুল্লাহ শাজুলি ও পীরজাদা শাহ মুহাম্মদ নুরুল্লাহ শাজুলি সাহে কে জানান । তিনি তাৎক্ষনিক কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ ইব্রাহীম খলিলকে জানান। ওসি ইব্রাহীম খলিল থানার এস আই নাসির উদ্দিনকে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যাবস্থা গ্রহনের নির্দেশ দেন। এস আই নাসির ৩০ সেপ্টেম্বর বিকেলে কথিত এ পীরের লোকনাথ মন্দিরে আসেন এবং ভন্ড এ পীরকে কোরআন শরীফের কথা জিজ্ঞাসাবাদে মন্দিরে কোরআন শরীফ রয়েছে শিকার করে ৩টি কোরআন শরীফ উদ্ধার করে স্থানীয় ৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক জাকির হোসেনের নিকট দেন। মন্দির থেকে কোরআন শরীফ উদ্ধার বিগত ৫ বছর যাবৎ ধর্ম ব্যাবসা ও কোরআন শরীফ অবমাননার বিষয়টি হালকাভাবে মানতে রাজি নন দোয়াটিসহ কচুয়ার মুসলিম ও আলেম সমাজ। ভন্ড এ প্রতারকেকে শাস্তি পেতে হবে এর দাবীতে ২ অক্টোবর শুক্রবার বাদ জুম্মা দোয়াটিসহ কয়েকটি গ্রামের মুসল্লিগন একত্রিত হয়ে সাচার-কচুয়া সড়কসহ দোয়াটির বিভিন্ন স্থান প্রদক্ষিণ করে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করে। তার শাস্তির দাবীতে ২০ সদস্য কমিটি গঠন করা হয়েছে, ২৪ ঘন্টার মধ্যে ভন্ড পীরকে গ্রেফতার করা না হলে মানব বন্ধন ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নিকট স্মারকলিপি দেয়ার কর্মসূচী ঘোষনা করেছেন।
৩ অক্টোবর শনিবার দুপুরে ভণ্ড কবিরাজ সঞ্জয় সরকারের গ্রেফতার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে কচুয়ার দোয়াটি গ্রামে প্রতিবাদ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। শাজুলিয়া দরবার শরীফের পীর মাওলানা শাহ মুহাম্মদ রুহুল্লাহ শাজুলির সভাপতিত্বে সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান শিশির। বক্তব্য রাখেন কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ ইব্রাহিম খলিল, পালাখাল ছালেহিয়া আলিম মাদ্রাসার প্রাক্তন অধ্যক্ষ মাওলানা আবুল কাশেম, উপজেলা পূজা উদ্যাপন পরিষদের সভাপতি ফনি ভূষণ মজুমদার তাপু, কচুয়া প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক রাকিবুল হাসান, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ইমাম হোসেন, সাধারণ সম্পাদক ফারুক হোসেন, ইউনিয়ন পরিষদের প্যানেল চেয়ারম্যান আব্দুল খালেক প্রমুখ। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও কচুয়া থানার অফিসার ইনচার্জ উভয়ই ভণ্ড কবিরাজের বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে আশ্বাস দেন। প্রতিবাদ সভার সভাপতি মাওলানা শাহ মুহাম্মদ রুহুল্লাহ শাজুলি বলেন, এক সপ্তাহের মধ্যে এই ভণ্ড কবিরাজকে গ্রেফতার করে শাস্তির সম্মুখীন করা না হলে পরবর্তীতে কঠোর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। পরে ঐ দিন রাত্রে কচুয়া থানা পুলিশ সঞ্জয়কে গ্রেফতার করে চাঁদপুর জেল হাজতে প্রেরন করেন।
দোয়াটি গ্রামের আবুল কালাম, লোকমান হোসেন, আজম খান, আঃ মবিন, জাকির হোসেনসহ আরো অনেকে জানান, সঞ্জয় সরকার দীর্ঘদিন ধরে নিজেকে অলৌকিক কবিরাজ দাবি করে কবিরাজীর আড়ালে মন্দিরে পবিত্র কোরআন শরীফ রেখে মানুষের সাথে প্রতারণা করে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।
২০১০ সালে সঞ্জয় কচুয়া বঙ্গবন্ধু ডিগ্রী কলেজে স্নাতক ডিগ্রীতে পড়ার সময় কচুয়ার হযরত শাহনেয়ামত শাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের পাশে একটি ম্যাচে সঞ্জয় ছিলেন। একদিন রাত আনুমানিক সাড়ে ৯টার সময় স্কুলের পাশে একটি বাগানে যায়। এসময় সঞ্জয় দেখতে পায় ৪জন ব্যাক্তি ঐ বাগানের গাছের নীচে বসে আছে। তখন সঞ্জয় তাদেরকে জিজ্ঞাসা করলেন আপনারা কারা ? তখন ঐ ৪ ব্যাক্তি সঞ্জয়ের প্রতি উত্তেজিত হয়ে বলেছে ঐ তুই জানস আমরা কারা ? আমরা হলাম ইসলাম ধর্ম,হিন্দু ধর্ম ,বৌদ্ধ ধর্ম,খ্রীষ্টান ধর্ম এই ৪টি ধর্মের পীর আউলিয়া ও ধর্ম প্রচারক। তুই আমাদেরকে বিশ্রামের সময় ডিষ্ট্রাব করেছেত, তোরে আজ এমন শাস্তি দিব, তোর জবান বন্ধ করে দিব। তখন সঞ্জয় তাদেরকে বলেছে হুজুর আমাকে ক্ষমা করে দেন। তখন ঐ ৪ ব্যাক্তি বলেছে শোন্, তোরে আজ আমরা ক্ষমা করব একটি শর্তে। তখন সঞ্জয় তাদেরকে বলেছে হুজুর কি শর্ত তখন তারা বলেছে শর্ত হচ্ছে তুই আজ থেকে আমাদের গোলাম হয়ে কাজ করতে হবে। তোর মাধ্যমে আমরা ইসলাম ধর্ম,হিন্দু ধর্ম ,বৌদ্ধ ধর্ম, খ্রীষ্টান ধর্ম এ ৪ ধর্ম প্রচার করব। তখন সঞ্জয় বলেছে, আমি তো হিন্দু বাকী ধর্ম আমি কিভাবে প্রচার করব। উত্তরে ঐ ৪ হুজুর বলেছে তোর দেহেতে আশ্রয় নিয়ে আমরা ধর্মের কাজ করব। তোর ক্ষতি করব না। তুই যদি আমাদের কথা অমান্য করছ তাহলে আজীবনের জন্য তোর জবান বন্ধ হয়ে যাবে। আমরা চেয়েছি ৪টি ধর্মই সমান ভাবে তোর মাধ্যমে প্রচার করতে। তখন সঞ্জয় বলেছে কিভাবে করব ? উত্তরে ঐ ৪ হুজুর বলেছে সোমবারে ইসলাম ধর্ম ও খ্রীষ্টান এবং শুক্রবারে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্ম প্রচার করবে।
এর কয়েকদিন পর সঞ্জয় চাঁদপুরের মতলবের লেংটার মাজারে ১০জন বন্ধুসহ পাজেরো গাড়ি দিয়ে রওয়ানা হয়েছে। পথি মধ্যে ছিরারচর পাগল সাহেবের মাজার দেখতে গিয়েছিল। ঐখানে যাওয়ার পর সালাম দেয়ার সাথে সাথে মাটিতে পড়ে যায় সঞ্জয় ওরফে বাবা মনি। ঐ খানে ৩ ঘন্টা যাবৎ মাটিতে অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকেন সঞ্জয়। তখন তার মাঝে ঐ মজারের পাগল সাহেব আশ্রয় নিয়ে বলেছেন, তোকে (সঞ্জয়) কে দিয়ে দেশের যত মাজার রয়েছে, পীর আউলিয়া রয়েছে তোকে দিয়ে দর্শন করাব এবং ইসলামের বানী প্রচার করব। এ উদ্দেশ্যে আমরা তোর সাথে প্রতি সোমবার দেখা করব। যখন তুই বিপদে পড়বি তখন আমাদেরকে মাজারে এসে ডাকবি। আমরা তোর ডাকে সারা দিব। এ দেশে যত পীর,অলি আছে সবাই তোর সাথে দেখা করবে। শুধু আমাদের তরিকাগুলো অনুস্মরন করে চলবি। তখন সঞ্জয় বলেছে আমি কি করে অনুস্মরন করব। আমি তো হিন্দু তখন মাজারের পাগল সাহেব বলেছে সৃস্টি কর্তার খাতায় হিন্দু মুসলমান থাকেনা। আমরা সৃষ্টি কর্তার শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে তোমাকে বেঁচে নিয়েছি। তুই হিন্দু বলে কোন ভয় পাইসনা। তুই তোর কাজ করে যা। সঞ্জয় বলল কিভাবে করব ? আমার তো এখন পড়া শোনার সময় বাবা-মাতো আমাকে বড় করেছে লেখাপড়া করার জন্য তাদের দেখা শোনা করার জন্য। তখন মাজারের পাগল সাহেব বলেছে পড়াশুনা তোর করতে হবেনা। তুই আল্লাহর কাজ কর। সৃষ্টি কর্তার চাকুরীর চেয়ে বড় চাকুরী কি হতে পাড়ে। তবে তোকে পড়াশুনার সময় দেয়া হবে। পড়াশুনা শেষ করে আমাদের কর্মে আসবি। একদিকে ডিগ্রী শেষ হবে অন্যদিকে আমাদের নিয়মগুলো শুরু করবি। তোবে নিয়ম দিব সেভাবে ডাকলে আমরা সাড়া দিব। তখন সঞ্জয় বলেছে কি নিয়মে ডাকতে হবে। তখন মাজারের ঐ পাগল সাহেব বলেছে প্রত্যেক সোমবার হযরত মুহম্মদ (সঃ) এর জন্মদিন হিসেবে রোজা রাখবি। তখন সঞ্জয় বলেছে আমি তো হিন্দু কিভাবে রোজা রাখব। উত্তরে আগের দিন রাত্র ১২টার আগে ভাত ক্ষেতে হবে পরের দিন মাগরিবের পর আহার করবি।
রোজা মূহুর্তে আমাদেরকে ডাকবি। এবং পশ্চিম দিকে ফিরে পরিস্কার মোসলায় বসে ধূপকাটি, আগরবাতি,মোমবাতি,আতর গোলাপের জল ছিটিয়ে পরিস্কার সাদা কাপড় পড়ে ডাকবি। তাতেই তোর ডাকে সাড়া দিব। তখন সঞ্জয় প্রশ্ন করেছে তাতে আমার লাভ কি ? আমার বাবা-মা এসব মেনে নিবেনা। উত্তরে মাজারের পাগল সাহেব বলেছে লাভ বলতে চারপাশে তোর নাম ছড়িয়ে পড়বে। তোকে হিন্দু মুসলমান সবাই সালাম করবে। আল্লাহর ভক্ত বলে জানবে। এতে আমাদেরও লাভ আছে। তোর দেহ দ্বারা আমাদের ধর্ম প্রচার করতে পারছি। ধর্ম প্রচার করা অপরাধ নয়। সকল ধর্ম সম্বন্ধে তোমার জানা দরকার। প্রত্যেকটা ধর্ম পৃথিবীতে সমভাবে প্রচার করা প্রয়োজন। শুধু আমরা নয় ইসলাম ধর্ম, হিন্দু ধর্ম, বৌদ্ধ ধর্ম এবং খ্রীষ্টান ধর্মের মহামানবরা তোমার সাথে দেখা করবে। এক এক করে সব বুঝতে পারবে।
যে নিয়মগুলো দিয়েছি সে নিয়মগুলো মেনে চল তোর কোন ভয় নাই। এ দেশে যত মাজারে যাবি সকলকে তুমি দর্শন পাবে। যেই শক্তি তোমার মাঝে আল্লাহতায়ালা দিয়ে দিয়েছে তার জন্য আমরা তোমাকে বেচে নিয়েছি। পৃথিবীতে পাপের সংখা বেড়ে গেছে। ধর্মের নামে চতুরদিকে অধর্মের কাজ করে বেড়ায়। তার জন্য তোমাকে সতর্ক করা হলো। অধর্ম কাজে কখনও লিপ্ত হইওনা। লোভ করোনা। তোমাকে খুশী হয়ে অনেক অলি অনেক কিছু দিবে। তুমি যদি খুশি হয়ে কাজগুলো কর ।
ঐ সময় হঠাৎ করে ছিরারচর পাগল সাহেবের মাজারের কর্মকর্তারা দেখতে পেল তার সঞ্জয়ের গলায় হিন্দুদের মালা রয়েছে। মাজার কমকর্তারা দেখে বলেছে তুমি হিন্দু তুমি এখানে কি করছ। উত্তরে বলেছে জানিনা আমাকে কে ডেকেছে। আমি তো মাজার দেখতে এসেছিলাম। সম্মুখে তখন দেখি একজন ওলি এবং তিনি বলেছেন এ মাজারের পাগল সাহেব। তখন মাজারের সবাই মিলে বলছে এত বছর ধরে মাজারে কাজ করি কখনও পাগল সাহেবকে দেখতে পাইলামনা তিনি সঞ্জয় হিন্দু হয়ে দেখে ফেললেন। ওনার ভাগ্য ভাল। এ সময় মাজারের লোকেরা জিজ্ঞাস করল তোমার বাড়ি কোথায় ? কোথায় যাবে ? তখন সঞ্জয় বলেছে বাড়ি কচুয়া থানার দোয়াটি গ্রামে। তখন সঞ্জয় বন্ধুদের সাথে বলল এখানে মাজার আছে শুনে আমরা দেখতে আসলাম। এসে আমার সাথে কি হলো বুঝতে পারলামনা। কেন আমার সাথে মাজারের পাগল সাহেবের সাথে দেখা হলো, কেন এরকম হলো বুঝতে পারছিনা।
তার পর চলে গেলেন মতলবের লেংটার মাজারে। মাজারে যাওয়ার পর গাড়ি থেকে অনেকদুর মাজারে হেটে যেতে হয়। মাজারের কাছে মেলাতে প্রচন্ড লোক ছিল। মাজারের ঠিক ১’শ গজ দুরে থেকে আমি (সঞ্জয়) দেখতে পেলাম রওজায় কে যেন শুয়ে আছে। তখন রওজার কাছে গেলাম। তখন আমার সাথে থাকা আমার বন্ধু রাসেলকে বললাম তোদের মাজারে এটা কে লেংটি পড়ে শুয়ে আছে। কিন্ত রাসেল দেখতে পেলনা । হঠাৎকরে কে যেন আমার গলায় মালা পড়িয়ে দিল। তখন আমার ভিতরে ভয় এসে গেল । তখন বন্ধ রাসেলকে বললাম কিরে রাসেল আমি তো হিন্দু আমার সাথে কেন এরকম হচ্ছে। ঐ মাজারে এরকম হলো। এখানে এই মাজারে এরকম হলো। চল্ আমরা বাড়িতে চলে যাই। আমার এক মূহর্তও আর ভাল লাগছেনা।
তারপর রাসেল বলল, আমরা ১০জন আসলাম গাড়ি ভাড়া করে টাকা খরচ করে গান, বাজনা দেখার জন্য কেন বাড়িতে যাব আমরা থাকব।
তখন রাসেল সহ্জয়কে বলল, চল্ অন্যদিকে ঘুরে আসি তোর মন ভাল লাগবে। ঘুরতে ঘুরতে লেংটার মাজারের বেলগাছের নিছে চলে এলাম। সেখানে গিয়েও দেখলাম ঐ লোকটি লেংটি পড়ে বসে আছে। তখন আমি (সঞ্জয়) বলল দেখ রাসেল ঐ লোকটিই এখানে বসে আছে। রাসেল বলল, কই আমি তো দেখতে পাইনা। তখন রাসেল ফোনে কথা বলতে বলতে চলে গেল। তখন আমি একা, বেল গাছের নিছে দাড়িয়ে ছিলাম। তখন আমার সামনে এসে ওনি দাড়াল। তখন আমি সঞ্জয় বললাম তুমি কে ? তুমি বারবার আমার সাথে দেখা দাও কেন ? তখন বলল আমিই সোলেমান লেংটা। তখন আমি বললাম তুমি যদি সত্যি ওলি হয়ে থাক তাহলে তোমার মাজারের চারপাশে গাজা, মদ,নিয়ে নোংরামী করছে তুমি তা দেখনা ? তখন তিনি সোলেমান লেংটা বলল যার যার কর্মের ফল ভোগ করবে। আমি এসেছি ধর্ম প্রচার করতে। আর তারা আমার ফুলের মত পবিত্র জায়গা তারা নষ্ট করছে। তাদের ফল তারা ভোগ করবে।
তার জন্য শরীয়ত বিধানের সকল মুসলমানরা আমাকে ঘৃনা করবে। তখন সঞ্জয় বলল আপনি এমন অলৌকিক কিছু তাদের দেখান। তখন সোলেমান লেংটা বলেছে কিছুক্ষন পরই দেখতে পারবি অলৌকিক কিছু আমি কি করতে পারি। তখন রাত ১২টা বেজে গেল।
রাতের খাবার খাওয়ার জন্য গাড়ির কাছে গেলাম। কিন্ত গাড়ির কাছে যাওয়ার সময় কে যেন বলল, তোর বিরানীর পেকেটে শিন্নী থাকবে। তখন সকলকে বিরানীর পেকেট দিলাম আমারটা খুলে দেখি শিন্নি। তখন বাক্সটা বন্ধ করে রেখে আরেকটি প্যাকেট বিরানী নিলাম, প্যাকেটটি খুলে দেখলাম পোকা মাকড় বের হচ্ছে। তখন আমি বুমি করলাম। শিন্নি থেকে সামান্য মুখে নিলাম মুখে দিয়েই আমার পেট ভরে গেল। তখন পাশের বন্ধুরা বলল সঞ্জয় এগুলো কি, তখন বললাম দুেেধর খির দোকান্দার ভূলে আমাকে খির দিয়েছে বলে পাশ কাটিয়ে গেলাম। ঐ পেকেটের শিন্নি সকলকে দেয়া হলো সবাই খেয়ে বলল, এরকম শিন্নি কখনও আর খাইনি। তখন আমি সকলকে বললাম, তোরা যে মুসলমান। ২বন্ধু সুমন ও রিয়াদ আমাকে খারাপ গালি দিয়ে বলল। তোরা চারালের জাত হিন্দুর জাতই খারাপ।
যে কোন মাজারকে বিশ্বাস করছ। তখন আমি বললাম আমরা হিন্দু হয়ে বিশ্বাস করি তোরা মুসলমান হয়ে মাজারে এসে সালাম ও দেছনা তাহলে কেন আসছত ? জবাবে বন্ধুরা বলেছে টাকা পয়সা খরচ করে নাচ ও গান শুনতে আসছি তোরমত সেজদা করতে আসিনা। তুইও লেংটার মত লেংটা হয়ে যা। তখন আমি সঞ্জয় মনে মনে সোলেমান লেংটার উদ্দেশ্যে বললাম এ কেমন তোমার খেলা। যে তোমাকে এমন করে গালমন্দ করে তুমি তার বিচার করনা। এর ৫/৬ মিনিট পর তাদের ঘাট বুমি হতে শুরু করল ডায়েরীয়ার মত হয়ে গেল। হাসপাতালে নেয়ার পরিবেশ নেই। তখন আমি দৌড়ে মাজারে গিয়ে পীরের কাছে গেলাম। এবং ওলি দেখা দাও বলে প্রার্থনা শুরু করলাম। তখন তিনি পিছন দিয়ে মাথায় হাত দিয়ে বলল, কি হয়েছে বাবা। আমি বললাম আমার ২ বন্ধু গালমন্দ করাতে তাদের সাজা দিয়েছেন। তাদের মাফ করে দেন। তখন তিনি সোলেমান লেংটা বললেন পড়নের কাপড় ছেড়ে দিয়ে লাল গামছা পড়ে ১০বার মাজার ঘুরতে হবে। এবং ওজু করা পানি ড্রেন থেকে চুমুক দিয়ে খেতে হবে। তাহলে তারা ভাল হবে। সঞ্জয় বন্ধুদেরকে ঐ কথাগুলো বলল তখন রাসেল বলল ওর কথা মান পরে মাজার ঘুরা ও পানি খাওয়ার পর ভালো হয়ে গেছে। সে থেকে আমি বুজতে পারলাম পৃথিবীতে ওলি বলে কিছু আছে। সে খান থেকে যাওয়ার সময় ওলি আবার আমার সাথে দেখা দিল। বলল যখনই তুই বিপদে পরে আমার নাম ধরবি আমি দেখা দিব। এ বলে তিনি চলে গেলেন।
সেখান থেকে আসার পথে মতলব ফেরি ঘাটের আগে ফরাজিকান্দি একটি মোড়ে অন্য একটি গাড়ির সাথে আমাদের মাইক্রোবাসটি পড়ে যায়। তখন সময় রাত ১টা বাজে। সবার একটু আধটু ক্ষতি হয়েছে, কিন্ত আমার কোন ক্ষতি হয়না। এদিকে এ রাতে কি করে গাড়ি উঠাব তখন সোলেমান সাহেব আর পাগল সাহেবকে ডাকলাম তারা দু’জন ধাক্কা দিয়ে গাড়িটি উঠিয়ে দিল। তারপর আমি ও আমার বন্ধুরা যারযার সৃষ্টি কর্তাকে ডাকতে ডাকতে বাড়িতে আসলাম। সে থেকেই আমার সাথে বিভিন্ন অলিদের দর্শণ হওয়া শুরু হলো।
¬¬
কিছুদিন পরে একজন হিন্দু মহামানব কচুয়া শাহনেয়ামত শাহ স্কুলের পিছনে পুকুরের পাড়ে একটি বট বৃক্ষের নীচে দেখা দিয়ে বললেন, এই সঞ্জয় তোমার কোন ভয় নেই। আমি লোকনাথ ভ্রম্যচারী তুমি আমাদের আশীর্বাদের সন্তান।
আমি যেমন করে সকল ধর্মকে ভাল বেসেছি ঠিক তুমিও সকল ধর্মকে ভাল বাসবে এবং শ্রদ্ধা করবে। যে ওলিরা তোমার সাথে দেখা দিয়েছে তারা সকলে আমার বন্ধু এমন করে ২ ধর্মের প্রচারক বা মহামানবরা তোমার সাথে দেখা করবে তুমি তোমার বাবা-মার ঘরে থেকেই সকল ধর্ম সম্বন্ধে তুমি জানতে পারবে। শুন্ বাবা তোমার লেখাপড়া সমস্ত কিছু এবং সংসার সব কিছুই ঠিক থাকবে। তুমি শুধু সপ্তাহে ২ দিন মেনে চলবে। আমাদের দর্শণ পাবে। পৃথিবীতে যদি একটি ধর্ম থাকত তাহলে আজ এত মহামানব তোমার সাথে দেখা দিতনা। তখন আমি বললাম আমি এত ধর্মের কাজ কিবাবে করব। তখন তিনি বলেছেন তোমার ধর্মের নাম হবে “মানব ধর্ম” অর্থাৎ ৪ ধর্ম যিনি সমভাবে শ্রদ্ধা করে সম্মান করে সেটাই তার কাছে মানব ধর্ম। আর এ মানব ধর্ম প্রচার করার জন্য আমরা পৃথিবীতে বারবার আসতেছি।
শুন্ মহামানবের কখনও মৃত্যু হয়না। আমরা শুধু শরীর ছেড়ে চলে গিয়ে আবার নতুন শরীরের প্রবেশ করি। আমরা ইচ্ছা ধনী সৃস্টি কর্তার কাছে। আমরা যখন প্রার্থনা করি তখন আমাদেরকে পৃথিবীতে পাঠান। প্রার্থনা শেষে আবার চলে যান। বাবা আর শুন্, সৃষ্টি কর্তা একজন আর তার বার্তা বহনকারী ভিন্ন ভিন্ন। যেমন ধরে নাও কুরআনের ভাষায় লা ইলাহা ইল্লাললাহু মুহাম্মাদরু রাসুলুল্লাহ। অর্থাৎ আল্লাহ এক তার অদ্বিতীয় কেউ নাই। তার রাসুলগন ভিন্ন ভিন্ন। গিতার ভাষায় বলেছে, ব্রাম্যন্য, নপস্য, এক অদ্বিতীয় অর্থাৎ ব্রম্য একজন অদ্বিতীয় কেউ নন। তার বার্তা বহনকারী ভিন্ন ভিন্ন।
বাইবেলে লিখেছেন, “আই হেব কেন্নট টু হিস্টোরী” অর্থাৎ সমস্ত ইতিহাসই এক অদ্বিতীয় কিছু নেই।
রাম,কৃঞ্চ,বৌদ্ধ,যিশু মুহাম্মদ বিভেদ কিসের ভাই। সবাই তো আমরা একই সৃস্টির দান ও একই মায়ের সন্তান। প্রতি শুক্রবারে উপাসনাতে বসে গীতা পাঠ করার পর আমাদেরকে মহামন্ত্র দ্বারা ডাকবে আমি যা মন্ত্র দিয়ে যাচ্ছি সে মন্ত্র উচ্চারন করলে এবং উপাস থেকে ডাকলে সারা পাবে। বাকী দিনগুলো তুই তোর পড়াশুনা ও অন্যান্য কর্ম করবি।
তোকে ভক্ত দিয়েই সমস্ত কিছু করে দিব। মন্দির করে দিব, যেখানে হিন্দু মুসলমান, বৌদ্ধ, খ্রীষ্টান সকলে আসবে আর তারা নিং সন্তান মা সন্তান পাবে,পঙ্গু মানুষ ভাল হবে।,অন্ধ মানুষ তার চক্ষু ভাল হবে সর্ব ব্যাপী তোর নাম ছড়িয়ে পড়বে। এভাবে তুই পৃথিবীতে মহামানব হিসেবে পরিচিতি হবি। সব সময় প্রার্থনা করে সৃষ্টি কর্তার কাছে জীব কল্যাণ চাইবি এ বলে লোকনাথ বাবা চলে গেলেন। তার পর থেকে আমি সঞ্জয় শুক্রবার হিন্দুদের উপাসনা করে হিন্দুদের ধর্ম প্রচার করি এবং সোমবার রোজা রেখে সেজদা করে মোসলায় বসে অলিদেরকে ডাকি এবং ইসলাম ধর্ম প্রচার করি। আমার লোকনাথ মন্দিরে রয়েছে পবিত্র কোরআন শরীফ, গিতা,বাইবেল ও ত্রিপটক।