ঢাকা: অনেকেই মনে করে থাকেন যে, ভারতের চিকিৎসার মান উন্নত এবং সহজসাধ্য। বাস্তবতা কিন্তু একেবারেই ভিন্ন। ওয়ার্ল্ড ব্যাংকের এক পরিসংখ্যানে দেখা যায় দেশটির মাত্র ১০ ভাগেরও কম লোকের স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে।মাত্র ৫৮ ভাগ লোকের রয়েছে হাসপাতালের খরচ মেটানোর সামর্থ। তাই ৪০ ভাগেরও বেশি মানুষ হাসপাতালের খরচ বহন করতে ধার করেন বা ঘরের জিনিসপত্র বিক্রি করে থাকেন। আর এই চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে গিয়ে প্রতিবছর ভারতের তিন কোটি ৯০ লাখ মানুষ দরিদ্র হয়ে পড়ছে বলে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে।
এখানে উদাহরণ হিসেবে প্রকাশ যাদবের কথা বলা যায়। লিউকেমিয়ায় আক্রান্ত হয়ে গত বছর মে মাসে মারা যান এই ২২ বছরের যুবক। প্রথমে অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্স(এআইআইমস)এবং পরে রাজিব গান্ধী ক্যান্সার ইনস্টিটিউটে তার চিকিৎসা চলে। তার চিকিৎসার পিছনে গত ছয় মাসে ৩০ লাখ রুপি খরচ করে তার পরিবার। দৈনিক তার ছয় হাজার টাকার ওষুধ লাগতো। অথচ ভারতের কোনো সরকারি হাসপাতালে যদি তাকে ভর্তি করানো হতো তবে তার চিকিৎসা খরচ অর্ধেকই কমে যেতো। তাই দুঃখ করে প্রকাশের বড় ভাই প্রদীপ যাদব বলেন,‘ মাত্র ছয় মাসেই আমাদের সব জমানো টাকা শেষ হয়ে যায়। সে আমার ভাই। আমি তাকে খুব ভালবাসতাম। তাই তাকে সেরা চিকিৎসা দেয়ার চেষ্টা করেছি।’ ‘কঠিন রোগের কার্যকর ওষুধ বের হয়ে লাভ কি যদি আমাদের তা কেনার সামর্থই না থাকে? প্রশ্ন প্রদীপের।
ভারতের সরকারি হাসপাতালগুলোতে চিকিৎসা খরচ কম। কিন্তু সেখানে ভর্তি হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। এআইআইমস সাধারণ একটি পিত্তথলির পাথর অপসারণের মতো সাধারণ অস্ত্রোপচারের জন্য একজন রুগীকে ছয় মাস থেকে এক বছর অপেক্ষা করতে হয়। সরকারি এ হাসপাতালটিতে প্রতিদিন ১০ হাজার নতুন রুগী চিকিৎসার জন্য আসে।
দিল্লীর সরকারি লিভার হাসপাতালে লিভার প্রতিস্থাপণে সবমিলিয়ে সাড়ে ১১ লাখ রুপি এবং কিডনি প্রতিস্থাপণে ২ লাখ রুপি ব্যয় হয়। বেসরকারি হাসপাতালে এর জন্য ২২ থেকে ৩০ লাখ রুপি খরচ হবে। আর কিডনি প্রতিস্থাপণের জন্য দিতে হবে ৮ লাখ রুপি।
এ প্রসঙ্গে বিশ্বব্যাংকের রিপোর্টে বলা হয়, যদি পশ্চিমা দেশগুলোর সঙ্গে তুলনা করা হয় তখনই কেবল ভারতের স্বাস্থ্যসেবাকে সহজ বলা যাবে। ভারতে কিডনি ডায়ালিসিসের জন্য বছরে একজন রুগীকে ১২ হাজার ডলার ব্যয় করতে হয়। যুক্তরাষ্টে এর জন্য ব্যয় করতে হয় ৬৬ হাজার ৭শ ৫০ ডলার। তবে ভারত ও আমেরিকার লোকজনের আয়ের ক্ষেত্রেও বড় ধরণের পার্থক্য রয়েছে। ভারতের লেনদেন হয় রুপিতে আর আমেরিকায় ডলারে।
তাই যুক্তরাষ্ট্রের একটি মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য বছরে ১২ হাজার ডলার ব্যয় করা তেমন কোনো ব্যাপার নয়। কিন্তু ভারতে চিকিৎসা খরচ বাবদ বছরে সাত লাখ ৩৬ হাজার রুপি ব্যায় করার মতো সামর্থ খুব কম মানুষেরই আছে।
ভারতের এআইআইমস হচ্ছে একমাত্র সরকারি হাসপাতাল যেখানে মাত্রই লিভার প্রতিস্থাপণের কাজ শুরু হয়েছে। ডাক্তার এসকে সারিন এ প্রসঙ্গে বলেন,‘ আমরা অনেক অস্ত্রোপচার বিনামূল্যেই করে থাকি। কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউতে শয্যা সংখ্যা কম হওয়ার কারণে রুগীদের অনেক দিন অপেক্ষা করতে হয়।’
আর অন্য কোনো বিকল্প না থাকায় লোকজন তাই প্রাইভেট চিকিৎসা নিতে বাধ্য হন। শুধ দূরারোগ্য ব্যধিই নয় সাধারণ রোগেও সে দেশের জনগনকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করতে হয়। বিশ্বব্যাকের রিপোর্টে বলা হয়, ভারতে প্রতি দশ হাজার মানুষের জন্য মাত্র সাড়ে ছয় জন ডাক্তার রয়েছেন। সুইডেনে দশ হাজার লোকের জন্য চিকিৎসকের সংখ্যা হচ্ছে ৩৯ জন।
ভারতে এক হাজার লোকের জন্য রয়েছে মাত্র ০.৯টি শয্যা। বিশ্বে এ সংখ্যা ২.৯। দেশটিতে সরকারি হাসপাতালগুলোতে এত ভিড় থাকে যে কেবল চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হলেও রুগীদের কয়েক দিন অপেক্ষা করতে হয়। আর এ কারণে ভারত সরকারকে জনগণের স্বাস্ত্যসেবার পিছনে আরো বেশি বিনোয়োগ করার সুপারিশ করেছে বিশ্বব্যাংক।