চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
বাংলাদেশ মেডিকেল এন্ড ডেন্টাল কাউন্সিল তথা বিএমডিসির ভুয়া রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করে নিজেকে এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ডাক্তার দাবি করে ফরিদগঞ্জে দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে মানুষদের চিকিৎসা দিয়ে যাচ্ছে ডাঃ লিপিকা রাণী পাল নামে এক ভুয়া চিকিৎসক। আর এ ভুয়া চিকিৎসকের অপচিকিৎসায় অনেকের প্রাণহানি ঘটেছে। এ নিয়ে স্থানীয় পত্র-পত্রিকায় অনেকবার লেখালেখিও হয়েছে। কিন্তু রহস্যজনক কারণে চাঁদপুরের স্বাস্থ্য বিভাগ এ ব্যাপারে নিশ্চুপ রয়েছে।
সাম্প্রতিক সময়ে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ডাক্তারদের ভুল চিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে। চাঁদপুরেও এ ধরনের ঘটনা মাঝে মধ্যে দু’ একটি ঘটে থাকে। তার সাথে এখন যোগ হয়েছে ভুয়া ডাক্তারদের অপচিকিৎসা। এমবিবিএস পাস করা ডাক্তার না হয়েও এ ডিগ্রি ব্যবহার করে দোর্দণ্ড প্রতাপের সাথে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে চাঁদপুরের ক’জন প্রতারক। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে ফরিদগঞ্জের লিপিকা রাণী পাল ও মতলব দক্ষিণের নারায়ণপুরের ওমর ফারুক। এ দু’ জনের অপচিকিৎসার কাহিনী ইতিপূর্বে চাঁদপুরের স্থানীয় ও বিভিন্ন জাতীয় পত্রিকায় একাধিকবার প্রকাশিত হয়েছে। ভুয়া এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ওমর ফারুকের পরিচালনাধীন নারায়ণপুর পল্লী মঙ্গল হাসপাতালে গত ক’দিন আগে ভুল চিকিৎসায় এক রোগী মৃত্যুর ঘটনায় এখন তোলপাড় চলছে।
ফরিদগঞ্জে ডাঃ পরেশ পালের মেয়ে লিপিকা রাণী পাল নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার দাবি করে দীর্ঘদিন যাবৎ ফরিদগঞ্জে চিকিৎসা কার্যক্রম চালিয়ে আসছেন। তিনি ফরিদগঞ্জ বাজার রোডে ফ্যামিলি কেয়ার ডায়াগনস্টিক এন্ড চেম্বার নামে একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়মিত রোগী দেখেন। এ লিপিকা রাণী পাল এমবিবিএস (কিমস) ভারত নামে ডিগ্রি ব্যবহার করছেন। আর তিনি তার প্রেসক্রিপশনে রেজিঃ নং- ৫৫৮৩২ নম্বরের একটি রেজিস্ট্রেশন ব্যবহার করছেন। তিনি এ নম্বরটি বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নম্বর বলে দাবি করছেন। কিন্তু এ নম্বরটি যাচাই করে দেখা গেছে এটি অন্য এক ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার।
ডাক্তার নামধারী লিপিকা রাণী পালের ভুল চিকিৎসায় ইতিপূর্বে বেশ ক’জন রোগীর মৃত্যু ও অন্তঃসত্ত্বা নারীর গর্ভের সন্তান মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। বছর দু’য়েক আগে ফরিদগঞ্জের বিউটি নামের এক গৃহবধূ ৩৬ সপ্তাহের অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় চিকিৎসা নিতে লিপিকা রাণী পালের কাছে যায়। তখন তিনি বিউটিকে পিটন-এস নামে ছয়টি ইঞ্জেকশন এক সাথে পুশ করেন। এরপর বিউটির গর্ভের সন্তান নড়াচড়া বন্ধ হয়ে গেলে তিনি ফরিদগঞ্জ মেডিকেল সেন্টারে গিয়ে অপারেশন করালে ডাক্তাররা তার পেট থেকে মৃত সন্তান বের করে। এ নিয়ে তখন বেশ হট্টগোল হয়। এর আগেও লিপিকা রাণী পালের অপচিকিৎসায় রোগী মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে তখন এ নিয়ে পত্র-পত্রিকায় অনেক লেখালেখি হয়। এরপর তিনি ভারত চলে যান। কিছুদিন পর তিনি ভারত থেকে এসে তার প্রেসক্রিপশনে রেজিঃ নং- ৫৫৮৩২ নম্বরের বিএমডিসির একটি রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার শুরু করেন। অথচ কোনো এমবিবিএস ডাক্তারকে তার প্রেসক্রিপশনে রেজিঃ নং ব্যবহার করতে সচরাচর দেখা যায় না। সবচে’ গুরুতর বিষয় হচ্ছে তিনি যে রেজিস্ট্রেশন নম্বরটি (৫৫৮৩২) ব্যবহার করছেন সেটি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগর থানার এসএম জসিম নামে এক ডাক্তারের রেজিস্ট্রেশন নাম্বার। বিএমডিসির ওয়েব অ্যাড্রেসে এ নম্বরটি যাচাই করে তাই দেখা গেলো। অর্থাৎ লিপিকা রাণী পাল জঘন্যভাবে প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে আরেক ডাক্তারের বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন নম্বর ব্যবহার করছেন। উল্লেখ্য, বিএমডিসির রেজিস্ট্রেশন ছাড়া কেউ নিজেকে এমবিবিএস ডাক্তার পরিচয় দিয়ে প্র্যাকটিস করতে পারেন না।
এ দিকে এ লিপিকা রাণী পালের অপচিকিৎসায় প্রায় দু’ সপ্তাহ আগে সুমী নামে এক গৃহবধূর গর্ভের বাচ্চা (ব্রুণ) নষ্ট হয়ে গেছে। সুমী লিপিকা রাণীর কাছে আসলে তিনি সুমীকে এক সাথে ২টি টোরাক্স ইনজেকশন দেন। এরপর সুমীর গর্ভের বাচ্চা নষ্ট হয়ে গেলে সুমী ফরিদগঞ্জ সেন্ট্রাল হাসপাতালে গিয়ে ডিএন্ডসি করান। এ ঘটনায় বেশ ঝামেলা হলে লিপিকা রাণী পাল মোটা অঙ্কের টাকা জরিমানা দিয়ে এ যাত্রা থেকে বেঁচে যান। এমনিভাবে তার অপচিকিৎসার আরো অনেক কাহিনী আছে। ফরিদগঞ্জবাসী এ ভুয়া ডাক্তারের অপচিকিৎসা থেকে মুক্তি চায়।