প্রতিনিধি
ব্যাপক কারচুপি ও ভোট কেন্দ্র দখলের মধ্য দিয়ে শেষ হয়েছে হাইমচর উপজেলা পরিষদ নির্বাচন। গতকাল মঙ্গলবার ভোটের দিন সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত অধিকাংশ ভোট কেন্দ্রে ছিলো না ভোটারদের উপস্থিতি।
সরজমিনে বেশ ক’টি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে কেন্দ্রের দায়িত্বরত পোলিং অফিসারগণ সীল মেরে দিচ্ছেন ক্ষমতসীন দলের লোকজনদের হাতে। যে যেভাবে পেরেছে সে সেইভাবেই সিল মেরেছে। অপরদিকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ২০ দলীয় জোট তথা বিএনপির একক প্রার্থী অ্যাডঃ মোখলেছুর রহমান নির্বাচন করেলও তার পক্ষে বিএনপি কিংবা ২০ দলীয় জোটের কোনো সমর্থককে কোনো কেন্দ্রের সামনে দেখা যায়নি। দু’ একটি কেন্দ্রে কয়েকজন বিএনপি সমর্থক ভোটারদের দেখলেও তারা কান্নাকাটি করতে থাকেন তাদের ভোট দেয়ার আগে নাকি দোয়াত কলমের পক্ষের লোকজন তাদের ভোট দিয়ে ফেলেছেন। ৩১টি ভোট কেন্দ্রের মধ্যে দুপুর ১২টার মধ্যেই চরভাঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় ও সিপাইকান্দি এলাকার ২টি ভোট কেন্দ্র স্থগিত করে দেয়া হয়। যেখানে সমস্যা কম সেখানে কেন্দ্র স্থগিত করা হলেও যে কেন্দ্রেগুলোতে কারচুপি হয়েছে সে গুলোতে প্রশাসন ছিলো নীরব। সকাল সোয়া ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কয়েকটি কেন্দ্রের চিত্র তুলে ধরা হলো। ভোট কেন্দ্র নং- ৩ সকাল ৯টায় কেন্দ্রের নাম জামিলায় মহিলা দাখিল মাদ্রাসা : সকাল ৯টার এই কেন্দ্রে দেখা যায় চেয়ারম্যান প্রার্থী নুর হোসেন পাটওয়ারী ভোটারদের খোঁজ খবর নিচ্ছেন। মহিলা মাদ্রাসাটি ভেতরে ৮টি বুথের মধ্যে স্বল্প সংখ্যক ভোটার দেখা গেছে। ওই কেন্দ্রের ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৭শ’ ৬৭জন। এর মধ্যে পুরুষ ভোটার ১ হাজার ৪শ’ ৩৭ ও মহিলা ভোটার ১ হাজার ৩শ’ ২৯ জন। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা মোঃ এনায়েত উল্লা জানান, ১ ঘণ্টায় ৮টি বুথে প্রায় ২ শতাধিক ভোট পড়েছে। ভোট কেন্দ্র নং- ২, ৯নং নয়ানী লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ভোটারদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ জন। ৬টি বুথের মধ্যে ভোটার হলেন ২ হাজার ৬শ’ ৮৬ জন। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার হাইমচর সহকারী কমিশনার (ভূমি) অফিসের কর্মকর্তা ফখরুল আলম বলেন, দেড় ঘণ্টায় ৬টি বুথে ১শ’র মতো ভোটার ভোট প্রদান করেছেন।
সকাল ১০টার সময় ১০নং ছোট লক্ষ্মীপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায় আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী সাবেক উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শাহজাহান মিয়া চিৎকার করতে থাকেন, আপনারা কী করছেন। সব কেন্দ্রে ভোট তো সিল মারা হচ্ছে। এ সময় দায়িত্বরত নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাদিয়া জেরিন ভোট কেন্দ্রের একটি রুমে প্রবেশ করে ভোটার নম্বর নেই হরিণার রাসেল মাঝিকে আটক করেন। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা আমিনুর রশিদ বলেন, ৬টি বুথের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৭শ’ ৩১। এ পর্যন্ত আনুমানিক ৮শ’ ভোটার ভোট প্রদান করেছেন।
সকাল পৌনে ১১টায় উত্তর আলগী দুর্গাপুর রাশিদিয়া কমিউনিটি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায় কোন ভোটার নেই কেন্দ্রের মধ্যে। দায়িত্বরত উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা আইয়ুব আলী জানান, ৪টি বুথে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬১ জনের মধ্যে এ পর্যন্ত ভোট দিয়েছেন প্রায় ৬শ’ ভোটার। সকাল সোয়া ১১টায় হাইমচর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় ভোট কক্ষের ভেতরে ভোট চললেও বাইরের মাঠে পুরো খালি। এই কেন্দ্রের দায়িত্বরত মতলব দক্ষিণের শিক্ষা কর্মকর্তা মোঃ হানিফ মিয়া বলেন, এই কেন্দ্রে ৮টি বুথের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৫শ’ ৮৩ জন। এ পর্যন্ত প্রায় ৮ শতাধিক ভোটার তাদের ভোট প্রদান করেন।
দুপুর সোয়া ১২টায় নীলকমল ওচমানিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা যায় পুরো কেন্দ্র ফাঁকা। ২টি কেন্দ্রের মধ্যে ভোটার সংখ্যা নেই ১জনও। টিনশেডে মহিলাদের ভোট কেন্দ্র এবং দোতালায় পুরুষদের ভোট কেন্দ্র। দোতলায় উঠে দেখা যায় ভোট কক্ষের দায়িত্বরত পোলিং অফিসার মরিয়া আক্তার, তোফায়েল মাল, নাছরিন সুলতানা ও সুলতানা রাজিয়াসহ কয়েকজন সিল মেরে অপরিচিত যুবকদের হাতে তুলে দিচ্ছেন। আর তারা সীল মারছে। মহিলা কেন্দ্রে দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার চাঁদপুর সদরের উপজেলা যুব উন্নয়ন কর্মকর্তা মোঃ আজহারুল ইসলাম বলেন, ৬টি বুথের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ৬১। এর মধ্যে প্রায় ৭শ’ ভোটার তাদের ভোট প্রদান করে। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার আলীগঞ্জ পিটিআইর প্রশিক্ষক মোঃ শহিদুল ইসলামের কাছে সিল মারছেন যুবকরা। এটা জানতে চাইলে তিনি কোনো জবাব দেন নি। তিনি জানান, তার কেন্দ্রের ৭টি বুথের মধ্যে ভোটার সংখ্যা ২ হাজার ২শ’ ২৭। দুুপুর পর্যন্ত ৪শ’ জন ভোটার ভোট প্রদান করেন দুপুর পৌনে ১টায় ১৪নং পশ্চিম চরকুষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় গিয়ে দেখা যায় ভোটারবিহীন ভোট কেন্দ্র। দায়িত্বরত প্রিজাইডিং অফিসার মতলব দক্ষিণ উপজেলার পিআইও হুমায়ুন কবির জানান, সকাল ৮টা ৪০ থেকে ১০টা পর্যন্ত ভোটগ্রহণ বন্ধ ছিল। পরে ১০টার পর থেকে ভোটগ্রহণ শুরু হয়। এছাড়া আরো কয়েকটি কেন্দ্র ঘুরে দেখা গেছে অধিকাংশ ভোট কেন্দ্র ছিল ফাঁকা।