বাংলাদেশ কৃষি নির্ভর দেশ। হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করে কৃষক শক্ত মাটির বুক ছিড়ে বের করে আনে সবুজের মহাসমুদ্র। সে সবুজের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসে কৃষকের কোল জুড়ে সোনালী ফসল। কৃষক গোলা ভরে।
এ কৃষকের হাত ধরেই দেশের অর্থনীতির ভীত মজবুত হয়। বর্তমানে অনেক কৃষিজাত ফসল দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশের মাটিতে রপ্তানি হচ্ছে। এমনি চিত্র দেখা গেল মতলব দক্ষিণ উপজেলার নারায়ণপুর গ্রামে। মতলব পূর্বাঞ্চলের কৃষকদের উৎপাদিত আলু সংগ্রহ করে নারায়ণপুর ইউনিয়নের বাড়ৈগাঁও গ্রামের মোঃ আব্দুল মতিন যথাযথ প্রক্রিয়ায় প্রক্রিয়াজাত করে মালয়েশিয়ায় পাঠানোর কাজ করছেন নিবিঢ়ভাবে। মতলব- পেন্নাই সড়কের পাশে নারায়ণপুর আল-বারাকা মডেল স্কুল সংলগ্ন খোলা মাঠে চলছে এ আলু রপ্তানী প্রক্রিয়াজাত কার্যক্রম। তিনি এ রপ্তানী কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন গ্রীনটেক্স কোম্পানীর স্থানীয় এজেন্ট হিসেবে।
মোঃ আব্দুল মতিনের সাথে আলাপ করে জানা যায়, তিনি সপ্তাহে ২৮ টন আলু কার্টুনে প্রক্রিয়াজাত করে চট্টগ্রামে পৌঁছান। স্থানীয় কৃষকদের কাছ থেকে তিনি প্রতি মণ আলু ২শ� টাকা থেকে ৩৫০ টাকা পর্যন্ত দামে ক্রয় করে থাকেন। এ আলু মোঃ আব্দুল মতিন গ্রীনটেক্স কোম্পানীর মাধ্যমে মালয়েশিয়ার কুয়ালালামপুরের বিডি গোল্ড কোম্পানীর নিকট রপ্তানী করে থাকে। এ উদ্যোগের ফলে স্থানীয় আলু চাষীদের চোখে মুখে আশার ঝিলিক ফুটে উঠেছে। স্থানীয় কৃষক মোঃ মুজিবুর রহমান জানান, আলু এমন একটা ফসল যা যথাসময়ে কোল্ড স্টোরে পৌঁছাতে না পারলে নষ্ট হবার উপক্রম হয়। অনেক সময় কোল্ড স্টোরে আলু রাখলেও কৃষক ন্যায্য দাম থেকে বঞ্চিত হয়। তাই এ ধরনের রপ্তানী কার্যক্রম কৃষকদের ফসল উৎপাদনে আরও উৎসাহ যোগাবে।
আব্দুল মতিন আরও জানান, তিনি সমাজসেবা অধিদপ্তরে সমাজসেবা অফিসার হিসেবে চাকুরি করতেন। সেখান থেকে অবসর গ্রহণ করে গত দু� বছর যাবৎ এ কাজের সাথে জড়িত রয়েছেন। গত বছর তিনি রংপুর, বগুড়া অঞ্চল থেকে মালয়েশিয়ায় আলু রপ্তানি করেছেন। নিজের এলাকার টানে এবং এখানকার আলু রংপুর, বগুড়ার আলু থেকে উন্নত মানের হওয়ায় তিনি এখন নিজ এলাকা মতলবের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আলু সংগ্রহ করে তা বিদেশে রপ্তানী করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন। খোলা আকাশের নিচে তার এ রপ্তানী প্রক্রিয়াকরণ কাজ চলে অত্যন্ত সুচারুরূপে। ভালো মানে কার্টুন, বেল্ট, টেপ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি দিয়ে প্রায় ২৫-২৬ জন লোকের প্রচেষ্টায় দৈনিক ৫ কেজি করে ১২শ� প্যাকেট করা যায় বলে মোঃ আব্দুল মতিন জানান। এতে প্রতি শ্রমিক দৈনিক পেয়ে থাকে খাওয়াসহ নগদ ৫শ� টাকা। ব্যক্তি উদ্যোগে এ কাজটি কিছু সময়ের জন্য হলেও স্থানীয় কর্মসংস্থানের সুযোগ করে দিয়েছে। মোঃ আব্দুল মতিনকে এ কাজে সার্বক্ষণিক সহযোগিতা করে যাচ্ছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী মোঃ দুলাল বেপারী।
মোঃ আব্দুল মতিন আরও জানান, তার কাজকে আরও গতিশীল করার জন্য প্রশাসনিক সহযোগিতা প্রয়োজন। স্থানীয় পর্যায়ে উদ্যোক্তাদের সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সহযোগিতা করলে আরও বিভিন্ন কৃষিজাত ফসল বিদেশে রপ্তানী করা সম্ভব।