মিজান লিটন
মতলব দক্ষিণ উপজেলার উপাদী উত্তর ইউনিয়নের উপাদী গ্রামে ৮ মাসের অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীকে এসিড নিক্ষেপে ঝলসে দিয়েছে পাষণ্ড স্বামী। মঙ্গলবার ভোর রাতে এ ঘটনাটি ঘটে। বর্তমানে সে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট চাঁদপুর জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি রয়েছে।
জানা যায়, দু’বছর আগে মতলব উত্তর উপজেলার দুর্গাপুর গ্রামের কুণ্ডল মজুমদারের মেয়ে লাকীর সাথে উপাদী গ্রামের পল্লী চিকিৎসক বিষ্ণু আচার্যের বিয়ে হয়। এটি ছিলো বিষ্ণুর দ্বিতীয় বিয়ে। বিয়ের পর লাকী অন্তঃসত্ত্বা অবস্থায় ১০ মাস বয়সী গর্ভের সন্তানের মৃত্যু হয়। পুনরায় অন্তঃসত্ত্বা হয় লাকী। এ নিয়ে গত আড়াই মাস আগে একই গ্রামে বসবাসরত লাকীর খালা মাধবীর কাছে গিয়ে বিষ্ণু বলে, লাকীকে যেন তার মায়ের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। এর জন্য ২০ হাজার টাকাও দিতে চায়। এলাকার অনেক নারী জানান, লাকীর গর্ভে মেয়ে সন্তান হবে জেনেই বিষ্ণু সে সন্তান নষ্ট করার জন্য তার স্ত্রীকে চাপ দেয়। আর এর জন্যই নিজের স্ত্রীকে এসিড নিক্ষেপ করেছে বলে জানান লাকীর খালার বাড়ির লোকজন।
বিষ্ণুর বাড়িতে গিয়ে এ ব্যাপারে তার কাজে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টায় আমি কীর্ত্তণ শুনে ঘরে আসলে সে (লাকী) দরজা খুলে দেয়। তারপর ভাত খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। সকালে আমার বড় ভাই রতন ফোন দিয়ে বলে,’কিরে তোর বৌ কই? আমি তাকে বলি মনে হয় বাইরে ঘরের কাজ করছে। সে তখন বলে, তুই নাকি তোর বৌকে এসিড দিয়ে জ্বালিয়ে দিয়েছিস্। তখন আমি বলি আমি তো কিছুই জানি না।’ বিষ্ণু আরো জানান, সকালে তার স্ত্রী বাড়ির পাশেই তার খালার বাড়িতে যায়। মনে হয় সেখানেই গরম পানি বা আগুনে তার এ অবস্থা হয়েছে।
মাধবীর পুত্রবধূ তুলসী রাণী বলেন, ঘটনার দিন ভোরে লাকী বাঁচাও বাঁচাও বলে চিৎকার দিতে দিতে বাড়িতে এসে উঠে। পরে তাকে আমার শ্বশুর-শাশুড়ি, স্থানীয় মেম্বারসহ হাসপাতালে পাঠায়। লাকীর খালা মাধবী জানান, তার বোনের মেয়ের অবস্থা ভাল নয়। মুখ থেকে তলপেট পর্যন্ত ঝলসে গেছে। সে আট মাসের অন্তঃসত্ত্বা। এলাকার প্রাণ বল্লব জানান, ফজর নামাজের সময় আমি মাছ ধরতে খালের দিকে যাচ্ছিলাম। তখন দেখি সে (লাকী) দৌড়ে আসছে। আমাকে দেখে বলে ‘আমারে বাঁচান’। এ সময় নামাজ পড়তে আসা বহু মানুষও এ অবস্থায় তাকে দেখেছে।
হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় লাকী জানান, মঙ্গলবার রাতে তার স্বামী কীর্ত্তণ শুনে ঘরে আসে। পরে ঘরে দুজনেই শুয়ে পড়ি। ঘুমন্ত অবস্থায় ভোর রাতে শরীরে জ্বালাপোড়া শুরু করলে ডাক চিৎকার দিতে থাকি। এ সময় আমার স্বামী আমার পাশে ছিল কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি। সবাই গভীর ঘুমে ছিলো। পরে উপায়ন্তর না পেয়ে দৌড়ে আমার খালার বাড়িতে চলে আসি। লাকীর খালা মাধবী জানান, সে খুবই সহজ সরল মেয়ে। আমিই তাকে তার (বিষ্ণু) সাথে বিয়ে দিই। ঘটনার দেড় মাস আগে বিষ্ণু আমাকে এসে বলে লাকীকে তার বাপের বাড়ি নিয়ে যেতে। তাকে আর ভাত খাওয়াবো না। এর জন্য ২০ হাজার টাকাও দিতে চেয়েছিল।
লাকীর বিষয়টি নিয়ে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালের চিকিৎসক ডাঃ মাহমুদুন নবী মাসুম জানান, সে (লাকী) মানসিকভাবে এ মুহূর্তে সঠিক কথা বলতে পারছে না। তার শরীর ঠিক কি কারণে ঝলসে গেছে তা আগামীকাল (আজ) ফরেনসিক রিপোর্টে বুঝা যাবে।
এদিকে ঘটনার দিন সকালে বিষয়টি জানাজানি হলে এলাকার লোকজন তাকে (বিষ্ণু)কে আটক করে মতলব দক্ষিণ থানা পুলিশকে খবর দেয়। পরে থানার এসআই মোর্শেদুল আলম ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে বিষ্ণুকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়। এ ব্যাপারে এসআই মোর্শেদুল আলম বলেন, রোগীর পক্ষের কোনো লোক না থাকায় এবং বিষ্ণুর বাড়ির লোকদের কথার ভিত্তিতে তাকে (বিষ্ণু) ছেড়ে দিয়েছি। তবে লিখিত কোনো অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেয়া হবে।