মতলবের পেয়ারীখোলায় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে সরকারি জলাশয় দখল নিয়ে গতকাল ১০ জানুয়ারি শুক্রবার দুপুরে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয়েছে। এতে বসতবাড়ি ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনাও ঘটেছে। সংঘর্ষে একই পরিবারের ৩ জনসহ আহত হয়েছে ৫জন। আহতদের মধ্যে শাহআলম হাজী (৩৮) কে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গুরুতর অবস্থায় ভর্তি করা হয়েছে।
জানা যায়, এ দিন উপজেলার নায়েরগাঁও উত্তর ইউনিয়নের পেয়ারীখোলা ও নাউজান গ্রামের মধ্যে দফায় দফায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। পেয়ারীখোলা গ্রামের বক্স আলী হাজী বাড়ি সংলগ্ন পশ্চিম পাশে সরকারি জলাশয় নিয়ে দীর্ঘ দিন যাবৎ হাজী বাড়ির সাথে নাউজান গ্রামের বেপারী বাড়ির বিরোধ চলে আসছে। উক্ত জলাশয়টি স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ সালিস করে দুই বাড়ির মধ্যে ভোগ দখলের জন্য সমবণ্টন করে দেন। সমঝোতা হওয়ার কয়েক বছর অতিবাহিত হওয়ার পর তৃতীয় একটি পক্ষ কামরুল মোল্লা নামক স্থানীয় প্রভাবশালী ব্যক্তি ওই জলাশয়টি জবরদখল করার চেষ্টা করে। এ নিয়ে সৃষ্টি হয় দুই গ্রামবাসীর মধ্যে বিরোধ। এদিকে জলাশয়টি যেনো কেউ জোরপূর্বক দখল করতে না পারে সেজন্য পেয়ারীখোলা হাজী বাড়ির মোশাররফ হোসেন বাদী হয়ে আদালতে মামলা করলে আদালত দুই পক্ষকে স্থিতাবস্থায় থাকার জন্য নিষেধাজ্ঞা জারি করেন।
মতলব দক্ষিণ থানার এসআই মোর্শেদুল আলম ভূঁইয়া ঘটনাস্থলে গিয়ে আদালতের এ নিষেধাজ্ঞা জারি করার পরও নাউজানের প্রভাবশালী কামরুল জোরপূর্বক হাজী বাড়ির ফসলি জমির মাটি কেটে জলাশয়ের পাড় তৈরি করছেন। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গকে অবহিত করার পরও কামরুল প্রভাব খাটিয়ে এ জলাশয় দখলের জন্য চেষ্টা করছে বলে হাজী বাড়ির লোকজন অভিযোগ করছে।
এ দিকে পেয়ারীখোলা গ্রামের বক্স আলী হাজী বাড়ির পক্ষে জলাশয়ের জন্য কাজ করায় ঐ বাড়ির সিএনজি স্কুটার চালক শাহআলমসহ তার চাচা জাহাঙ্গির, চাচাত ভাই আব্দুল আলিম মেম্বার ও জেঠাত ভাই জুলহাসকে ঘটনার কয়েকদিন পূর্ব থেকেই প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে বলে তারা সাংবাদিকদের জানান। গত বুধবার সকালে নাউজান গ্রামের লোকজন কামরুলের নেতৃত্বে পেয়ারীখোলার জাহাঙ্গির হাজীর বসতঘরে হামলা, ভাংচুর, লুটপাট করে ও পাক ঘরে অগ্নিসংযোগ করেছে এবং তাদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, পাসপোর্ট, ভিসা নিয়ে গেছে বলেও তারা সাংবাদিকদের জানান।
এদিকে গতকাল শুক্রবার জুমার নামাজের সময় পূর্ব পরিকল্পিতভাবে কামরুলের নেতৃত্বে দুদ মিয়া বেপারীর ছেলে খোরশেদ বেপারী, খোরশেদ বেপারীর ছেলে মামুন, চাঁন মিয়া বেপারীর ছেলে মতিন বেপারী, মতিন বেপারীর ছেলে সুমন বেপারী ও শাহীন বেপারীসহ অর্ধ শতাধিক লোক মুখোশ পরে শাহআলম হাজীর বসত ঘরে গিয়ে ঘরের আসবাবপত্রসহ সবকিছু ভেঙ্গে তছনছ করে। তখন শাহআলম এগিয়ে আসলে তার মাথায় আঘাত করে তাকে রক্তাক্ত যখম করা হয়। শাহআলমের স্ত্রী রূপালী (২৫) ও কন্যা শান্তা (১৩)কেও বেদম মারধর করা হয়। সন্ত্রাসীরা তাদের ঘরে থাকা দেড় লাখ টাকা, মোবাইল সেট ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট করেছে বলেও শাহআলমের পরিবার সাংবাদিকের জানায়। এ ঘটনা নিয়ে দুই গ্রামবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলার প্রস্তুতি চলছে বলেও ক্ষতিগ্রস্তরা জানায়।