বিশেষ প্রতিনিধি ॥
মতলব (দঃ) উপজেলার ১২৩ নং দিঘলদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদ ইয়াসমিন দিপ্তির আচরনে স্কুলের সকল ছাত্র-ছাত্রীরা আতংকে ও ভয়ে স্কুল আসা ছেড়ে দিয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
জানা যায়, গত ১০ অক্টোবর বিদ্যালয়ের ৪র্থ শ্রেণির ছাত্রী জুথি আক্তার শ্রেণিকক্ষে খেলা করতে থাকে। এ সময় প্রধান শিক্ষিকা ফরিদ ইয়াসমিন দিপ্তি জুথিকে ডেকে এনে কেন দুষ্টমী করছে বলে জিজ্ঞাসা করে এবং বেদম পিটাতে থাকে। ছোট্ট কোমলমতি শিশু জুথি আক্তার শিক্ষিকার অমানবিক পিটুনি সহ্য করতে না পেরে অজ্ঞান হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় শিক্ষিকা তাৎক্ষনিক চলে আসে। ক্লাশের শিক্ষার্থীরা চিৎকার দিলে অন্য শিক্ষিকাগণ এসে জুথি আক্তারকে প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে জ্ঞান ফিরে আনে। তারা জুথির গায়ে বেশ কিছু আঘাতের চিহ্ন দেখতে পায়। স্কুল ছুটি হলে জুথি বাসায় চলে যায়। জুথির গায়ে আঘাতের চিহ্ন দেখে মা জীবনী বেগম কান্নাকাটি করে এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গদেরকে ঘটনাটি অবহিত করে। ঘটনাটি নিয়ে এলাকায় গুঞ্জন শুরু হলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা ফরিদ ইয়াসমিন দিপ্তির স্বামী জসিম উদ্দিন জুথিদের বাড়ি গিয়ে জুথির হাতে পাঁচশত টাকা দিয়ে চিকিৎসা করাতে বলে। এ সময় ঘটনাটি নিয়ে যেন আর বাড়াবাড়ি না করে তা বলে জুথির মাকে হুমকি ধমকি দেয়। তিনি জুথিকে স্কুল থেকে বের করে দিবেন বলেও জুথির মাকে হুশিয়ার করে দেন।
পরে জুথির মা উপজেলা শিক্ষা অফিসারের কাছে তার মেয়ে জুথিকে নিয়ে যায়। ঘটনা শুনে ও দেখে ওই প্রধান শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নিবেন বলে জানান। পরবর্তীতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল হক ঘটনাটি শুনে জুথিকে ডেকে আনেন এবং তার পিঠে আঘাতের দাগগুলো দেখেন। এ সময় তিনি উপজেলা ভারপ্রাপ্ত শিক্ষা অফিসার জুলফিকার আলী জনি ও এ.টি.ও মোখলেছুর রহমানকে বিষয়টি তদন্ত করে রিপোর্ট তৈরি করতে বলেন। রিপোর্ট অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ শহীদুল হক জানান। এদিকে ঘটনাটি ধামাচাপা দেবার জন্য প্রধান শিক্ষিকা ফরিদ ইয়াসমিন দিপ্তি সর্বাত্মক চেষ্টা করছেন বলে জানা গেছে।
এলাকাবাসী জানান, প্রধান শিক্ষিকার এহেন কর্মকা- খুবই দুঃখজনক। এ রকম উগ্র শিক্ষিকার বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতে বহু কোমলমতি শিশুরা অত্যাচারিত হবে। তাই তারা প্রধান শিক্ষিকার উপযুক্ত বিচার দাবী করেন।
এদিকে এলকাবাসী সূত্রে জানা যায়, উক্ত প্রধান শিক্ষিকা ২০১৬ সালে মারুফ নামের ৫ম শ্রেণি পড়–য়া এক ছাত্রকে শ্রেণিকক্ষে পিটিয়ে জখম করে। প্রধান শিক্ষিকার অত্যাচারে ছাত্রটি ভমি করে দিলেও তার উপর দিয়ে পিটাতে থাকেন। প্রধান শিক্ষিকার এত রাগ যে তিনি একবার রেগে গেলে তা থামাতে পারেন না। এছাড়া শিক্ষিকা খুবই রাগান্বিত অবস্থায় থাকেন। শিক্ষার্থীদের সব সময়ই বকা ঝকা করেন। এতে শিক্ষার্থীদের মধ্যে এক ধরনের ভয়ভীতি কাজ করে। যার ফলে অনেকে বিদ্যালয়ে আসাই বন্ধ করে দেন। খোজ নিয়ে জানা গেছে, ওই বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণির ছাত্রী সামিয়া আক্তার প্রধান শিক্ষিকার ভয়ে বিদ্যালয়ে আসা বন্ধ করে দিয়েছেন।
ঘটনার ব্যাপারে এ প্রতিবেদন ওই বিদ্যালয়ে গেলে প্রধান শিক্ষিকা আচ করতে পেরে জুথিকে বিদ্যালয়ে আসতে বারন করেন এবং ঘটনার ব্যাপারে চুপ থাকতে বলেন। পরে প্রধান শিক্ষিকাকে জিজ্ঞাসা করলে তিনি জুথিকে পিটানোর ঘটনাটি স্বীকার করেন। এ সময় তার স্বামী জসিম উদ্দিন উপস্থিত হয়ে সংবাদ পরিবেশন না করার ব্যাপারে হুমকি ধমকি দেন।
এ ব্যাপারে জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার খোরশেদ আলমের সাথে কথা হলে তিনি বলেন, আমি ঘটনাটি সম্পর্কে অবহিত নই। আপনাদের মাধ্যমে জেনেছি। তবে ঘটনা সত্যতা যাচাই করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।