শওকত আলী ॥
চাঁদপুর জেলাধীন মতলব উপজেলার ৬টি গ্রামের হাজার-হাজার মানুষের ও কোমল মতি শিশু শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের চলাচলের একমাত্র সম্বল এখন বাঁশের সাঁকো। বিগত ৪১ বছর যাবত প্রায় ১শ হাত লম্বা এ সাঁকো দিয়েই জীবনের ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচেছ এলাকা বাসিদের।
মতলব শিকিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর ছাত্রী মৌসুমী আক্তারের সাথে কথা বলতে গিয়ে সে বলেন,
হত্যেক (প্রতিদিন) দিন ঝুঁকি নিয়ে হাঁক্কা (সাঁকো) হার (পার) অইতে অয়, আমাগো ভাই-বোন অনেকেই হার অইতে গিয়ে হড়ে বই খাতা ভিজি যায়, বর্ষা আইলে স্কুলে যাওয়া যায় না, আমগো এখানে কি ব্রিজ হবে স্যার?।
মতলব উত্তর উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ডের শিকিরচর, সর্দারকান্দি, সুগন্ধি, বাহাদুরপুর, কলাকান্দা ও সটাকি গ্রামে ১০০ হাত লম্বা একটি সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে শত শত ছাত্র-ছাত্রী ও হাজার-হাজার ্এলাকা বাসী প্রতিদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করছে।
একটি ব্রীজের অভাবে ৬ গ্রামের কয়েক সহ¯্রাধিক মানুষ চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে। স্বাধীনতার পরও দীর্ঘ ৪১ বছর এ দুর্ভোগের গ্লানি টানছে এ এলাকার কয়েক হাজার মানুষ।
উপজেলার ছেংগারচর পৌরসভার শিকিরচর গ্রামের মোড় থেকে পৌরসভার সর্দারকান্দি (বেধেবহর) ঘাটে এ খালটিতে ব্রিজ না হওয়ায় এ দুর্ভোগের কারণ। ব্রিজ না থাকায় উপজেলার শিকিরচর, সর্দারকান্দি, সুগন্ধি, বাহাদুরপুর,কলাকান্দা ও সটাকি গ্রামের মানুষ দীর্ঘদিন থেকে এই দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। আর এসব গ্রামের শিকিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোসহ, ছেংগারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, শরীফ উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়, কয়েকটি কিন্টারগার্ডেন স্কুল ও মাদ্রাসার শত’শত ছাত্রছাত্রী ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করছে।
স্কুলের ছোট্ট শিক্ষার্থীরা স্কুলে যাতায়াত করতে গিয়ে বই খাতাসহ বাঁশের সাঁকো পারাপার হতে গিয়ে সাঁকো থেকে ছিটকে পড়ে গিয়ে আহত হওয়ার খবরও পাওয়া গেছে। বর্ষাকালে তাদের স্কুল যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়।
সাঁকোটির কাছে গিয়ে দেখা গেছে, ছেংগারচর পৌরসভার শিকিরচর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছেংগারচর মডেল উচ্চ বিদ্যালয়, শরীফ উল্যাহ উচ্চ বিদ্যালয়ের মরণ ফাঁদের মতো একটি বাঁশ দিয়ে সরু বাঁশের সাঁকো দিয়ে পার হচ্ছে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক শিক্ষার্থীরা। একইভাবে ছটাকি বাজার ও ছেংগারচর বাজারে পার হয়ে যাতায়াত করছে ওই এলাকার বাসিন্দারা।
ছেংগারচর পৌর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক মো. আতাউর রহমান ঢালী বলেন, এই ছোট্ট খালটিতে ব্রীজ না হওয়ায় তারা এই চিকন বাঁশের সাঁকো দিয়ে ছেংগারচর বাজারসহ ছটাকী বাজারে ঝুঁকিপূণর্ ভাবে যাতায়াত করতে হচেছ। বর্ষা মৌসুমে এ সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করা অত্যান্ত কস্ট কর হয়ে পড়ে।
তিনি আরো জানান, এ জন্য এ গ্রামগুলোর জেলেরা যে নদীতে মাছ ধরে সে মাছ এবং তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্য বাজারে কিংবা শহরে বাজারজাত করতেও অসুবিধার সৃষ্টি হয়। দীর্ঘ দিন যাবত সাঁকো থাকার পরও এখন পর্যন্ত ব্রীজ নির্মাণ না হওয়ায় তারা দৈনন্দিন কাজে যোগাযোগ করাসহ তাদের উৎপাদিত কৃষিপণ্যও নদীতে শিকারকরা মাছ বাজারজাত করা ও কৃষি উপকরণ শহর থেকে গ্রামে নিয়ে আসা অসম্ভব হয়ে পড়ছে।
ছেংগারচর পৌরসভার ২নং ওয়ার্ড কাউন্সলর আ. সালাম খান বলেন, কয়েকটি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ও প্রাথমিক শিক্ষার্থীরা ১শ’ ফুট লম্বা একটি সরু বাশের সাঁকো দিয়ে শত শত ছাত্র-ছাত্রীরা ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় যাতায়াত করছে। শুস্ক মৌসুমে সাঁকো দিয়ে যাতায়াত করতে পারলেও বর্ষা মৌসুমে বিদ্যালয়ে আসতে পারে না। তাদের দূর্ভোগ আরো বেড়ে যায়।’
তিনি আরো জানান, ‘আমি এবার কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রানমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া ভাইকে বিষয়টি জানানোর পর তিনি এখানে দ্রুত ব্রীজ নির্মাণের নির্দেশ প্রদান করেছেন উপজেলা প্রকৌশলী ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে। আশা করি কোমলমতি শিক্ষার্থীর দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে এ সমস্যার সমাধান হবে।’