প্রতিনিধি
মতলব দক্ষিণ উপজেলার আইসিডিডিআরবিতে যে সকল শিশু নির্দিষ্ট সময়ের আগেই জন্ম নেয় বা স্বাভাবিকের চেয়ে কম ওজনের শিশু (আড়াই কেজির কম) জন্ম নেয়, তাদের চিকিৎসায় ‘ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার’ নামে এক ব্যতিক্রম চিকিৎসা পদ্ধতি চালু করা হয়েছে। ২০০৭ সালে এ পদ্ধতি চালু হয়। এ পদ্ধতিতে গত সাত বছরে ৩৭ সপ্তাহের কম সময়ে জন্ম নেয়া ৮শ’ ৯০জন শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। এ পদ্ধতি ইনকিউবেটর (তাপ দেয়ার যন্ত্র) পদ্ধতির মতোই কার্যকর বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা।
এ হাসপাতালের ক্যাঙ্গারু মাদার কেয়ার ইউনিট (কেএমসি) সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালের জুলাই মাসে এটি চালুর পর গত সাত বছরের কিছু বেশি সময়ে মা ও শিশু স্বাস্থ্য (এমসিএইচ) কর্মসূচির আওতায় উপজেলার ৬৭টি গ্রামের ৮শ’ ৯০জন অপরিণত শিশুকে চিকিৎসা দিয়ে সুস্থ করা হয়। চলতি বছর (অক্টোবর পর্যন্ত) সুস্থ করা হয় ৬৩ জন নবজাতক। এছাড়া ২৮ সপ্তাহের কম সময়ে জন্ম নেয়া ১০জন অধিকতর অপরিণত নবজাতককে এখানে চিকিৎসা দিয়ে বাঁচানো হয়। এসব শিশু সাধারণত বাঁচে না। গত ১১ নভেম্বর মঙ্গলবার সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, হাসপাতালের নির্দিষ্ট কক্ষে বেশ কজন নবজাতককে ক্যাঙ্গারু মাতৃসেবা দেয়া হচ্ছে। এ সময় কর্মরত চিকিৎসক ও সেবিকারা (নার্স) শিশুর মাকে করণীয় বিভিন্ন বিষয় বুঝিয়ে দিচ্ছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে কর্মরত একজন সেবিকা জানান, বিনা খরচে ও সহজে অপরিণত নবজাতক এ চিকিৎসায় সুস্থ হয়। গরিব মানুষের শিশুর সুরক্ষায় এটি একটি সহজলভ্য চিকিৎসা। দেশের অন্যান্য হাসপাতালেও এ পদ্ধতি চালু হওয়া দরকার।
হাসপাতালের ক্যাঙ্গারু মাতৃসেবা বিভাগের (ইউনিটের) দায়িত্বপ্রাপ্ত চিকিৎসা কর্মকর্তা সাবিহা সুলতানা জানান, এ পদ্ধতিতে ক্যাঙ্গারু যেভাবে পেটের থলিতে বাচ্চাকে রাখে, সেভাবে নবজাতককে মায়ের বুকে রাখা হয়। অপরিণত নবজাতকের শরীরে এমনিতেই তাপমাত্রা কম থাকে। এতে তাদের মৃত্যুর আশঙ্কাও বেশি থাকে। এ পদ্ধতিতে মায়ের শরীরের স্বাভাবিক তাপমাত্রা নবজাতকের শরীরে প্রবাহিত হয় এবং শিশুর মৃত্যুর ঝুঁকি কমে। এতে মায়ের বুকের দুধপান নিশ্চিত হয় ও সন্তানের সঙ্গে মায়ের বন্ধন দৃঢ় হয়।
উপজেলার চরমুকুন্দি গ্রামের বাসিন্দা শিল্পী আক্তার (২৫) জানান, তার একটি শিশু নির্দিষ্ট সময়ের পূর্বে জন্ম নেয়ার পর এ পদ্ধতিতে চিকিৎসা নিয়ে সুস্থ হয়েছে। জন্মের সময় ওর ওজন আড়াই কেজির অনেক কম ছিল। এ পদ্ধতির চিকিৎসা আরামদায়ক এবং সহজতর।
আইসিডিডিআরবি মতলব হাসপাতালের একাধিক চিকিৎসক বলেন, এটি একটি ব্যতিক্রম, বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি। এ পদ্ধতিতে যে কোনো হাসপাতালে এমনকি বাড়িতেও চিকিৎসা সম্ভব। দু সপ্তাহ থেকে এক মাসের মধ্যে অপরিণত সদ্যজাত শিশু এ পদ্ধতির চিকিৎসায় মৃত্যুর ঝুঁকি থেকে রক্ষা পেয়ে সুস্থ হয়।