চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলায় গ্রাহকদের কাছ থেকে অবৈধভাবে আমানত প্রায় ৫০লক্ষাধিক টাকা সংগ্রহ করে উধাও হয়ে গেছেন ‘বিজয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি’ নামের একটি প্রতিষ্ঠানের সভাপতি জিয়াউদ্দিন। আমানত হারিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন শতাধিক গ্রাহক। সমিতির পরিচালক আল সাঈদ আমিন সমিতির আর্থিক হিসাব ফেইজবুকে প্রকাশ করায় সভাপতি জিয়াউদ্দিন ঢাকায় সাইবার ক্রাইমে মামলা করে। ওই মামলায় আল সাঈদ আমিন আটক হয়। এ নিয়ে এলাকায় জিয়াউদ্দিনের বিরুদ্ধে গ্রাহক ও এলাকাবাসী ফুসে উঠেছে।
ভুক্তভোগী গ্রাহক ও উপজেলা সমবায় কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১২ সালে উপজেলা সমবায় কার্যালয় থেকে প্রতিষ্ঠানটি নিবন্ধন নেয়। প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা কমিটির চেয়ারম্যান নির্বাচিত করা হয় উপজেলার ফরাজীকান্দি নয়াকান্দি গ্রামের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক রমজান আলীর ছেলে জিয়াউদ্দিনকে। ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের ইসলামিয়া মার্কেটের (পশ্চিম গলি) একটি ভবন ভাড়া নিয়ে চালু করা হয় প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম। এরপর প্রতিষ্ঠানটি বিভিন্ন মেয়াদি স্কিমের নামে গ্রাহকদের কাছ থেকে আমানত সংগ্রহ শুরু করে। শতাধিক গ্রাহকের কাছ থেকে প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহের পর প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে তালা দিয়ে সভাপতি জিয়াউদ্দিন উধাও হয়ে যান।
বিজয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির ব্যবস্থাপক মাহফুজ মিয়া জানান, সমিতির সভাপতি জিয়াউদ্দিন দায়িত্বে থাকাকালীন আমি ম্যানেজার হিসেবে ছিলাম। ওই সময় সভাপতি জিয়াউদ্দিনের লেনদেনে অনেক গড়মিল থাকায় এ ব্যাপারে প্রতিবাদ করলে আমাকে চাকুরিচ্যুত করা হয়।
প্রতারণার শিকার আল-আমিন ও মোঃ সজিব’সহ বেশ কয়েকজন গ্রাহক বলেন, লাখে প্রতি মাসে দুই হাজার টাকা মুনাফা দেওয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি আমানত সংগ্রহ করে এবং তিন বছরে দ্বিগুণ লাভ দেওয়ার কথা বলে প্রতিষ্ঠানটি ডিপিএস স্কিম চালু করে। অধিক মুনাফার লোভ দেখানোয় তাঁরা আকৃষ্ট হন এবং আমানত জমা দেন। এখন তাঁরা সবই হারিয়েছেন।
প্রতারণার শিকার এক নারী গ্রাহক বলেন, তিনি ওই প্রতিষ্ঠানে দুই লাখ টাকা জমা দেন। ওই টাকা খোয়া যাওয়ায় এখন তাঁর সংসার ভেঙে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতারণার শিকার আরও বেশ কয়েকজন নারী তাঁদের সাংসারিক অশান্তির কথা জানান। টাকা হারানোর কারণে একজনকে তাঁর স্বামী বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
পরে গ্রাহকদের টাকা ফেরত দেয়ার ব্যাপারে স্থানীয় গন্যমান্য ও রাজনৈতিক ব্যক্তিদের উদ্যোগে কয়েক দফা শালিস বৈঠকের দিন তারিখ ধার্য্য করা হলেও সভাপতি জিয়াউদ্দিন হাজির হয়নি।
গ্রাহকরা বিজয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি পরিচালক আল সাঈদ আমিন সহ বিভিন্ন পরিচালকদের বাড়ি ধর্ণা দিলেও কোন সুরাহা হয়নি। এক পর্যায়ে বিজয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি পরিচালক আল সাঈদ আমিন নিজ উদ্যোগে সমিতি পুনরায় চালু করার চেষ্টা করে, এ সময় অডিট করা হলে ৪৩ লক্ষাধিক টাকার একটি গড়মিল পরিলক্ষিত হয়। পূর্বের টাকার জন্য গ্রাহকরা অফিসে আসা-যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা সৃষ্টি হওয়ায় সেও অফিসের কাজকর্ম বন্ধ করে দেন।
বিজয় সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতি সভাপতি জিয়াউদ্দিনের আর্থিক হিসাব বিভিন্ন পরিচালক ও গ্রাহকরা ‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইজবুক’সহ বিভিন্ন ইন্টারনেটে প্রকাশ করে। ফেইজবুকে প্রকাশ করাকে কেন্দ্র করে জিয়াউদ্দিন সাইবার ক্রাইম এ মামলা করে আল সাঈদ আমিনের বিরুদ্ধে। ওই মামলায় আল সাঈদ আমিন আটক হয় বলে অভিভাবকরা জানান।
অভিযোগের ব্যাপারে মুঠোফোনে প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি কোনো কথা বলতে রাজি হননি। উপজেলা সমবায় কর্মকর্তা দেলোয়ার হোসেন বলেন, প্রতিষ্ঠানটি সম্পূর্ণ অবৈধভাবে আমানাত সংগ্রহ করেছে। আমি এ উপজেলায় যোগদানের পূর্বে এ ঘটনা ঘটেছে।