শরীফুল ইসলাম ॥
মাদকের ভয়াল থাবা পড়েছে পুরো চাঁদপুরজুড়ে। মাদক ব্যবসায়ীদের ভয়াবহ থাবায় দিন দিন বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে চাঁদপুরের যুবসমাজ। বাসাবাড়ি, অলিগলিসহ বিভিন্ন স্থানে মাদকের সহজলভ্যতায় আসক্তের সংখ্যাও বাড়ছে ক্রমাগতভাবে। তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে না গিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা বুঁদ হয়ে থাকছে মাদকের স্পটেÑ যারা জাতির কাছে অভিশাপে পরিণত হচ্ছে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে জাতির নেতৃত্ব দেওয়ার মতো আর কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদিকে বিভিন্ন স্পটে মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তাদের অলিখিত চুক্তি রয়েছে। সপ্তাহ হিসেবে নিয়মিত টাকা পেলেই তাঁরা অভিযান পরিচালনা করেন না। তবে কখনো কখনো পেমেন্ট দিতে বিলম্ব হলেই তাঁরা অভিযানে আসেন। এক মাদক ব্যবসায়ী বলেন, তাঁদের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের পরিচালকের পর্যন্ত সুসম্পর্ক রয়েছে। জানা গেছে, আমাদের দেশে মূলত কোনো মাদকের চাষ হয় না। তবুও সহজলভ্য মাদকের মধ্যে রয়েছে গাঁজা, ফেনসিডিল, হেরোইন, পেথিডিন, বাংলা মদ ও ইয়াবা ট্যাবলেট উল্লেখযোগ্য। যে কোনো পান দোকান থেকে শুরু করে অভিজাত বিভিন্ন হোটেল, এমনকি জেলখানাতেও সহজেই মিলছে বিভিন্ন ধরনের মাদকদ্রব্য পাওয়া যায়।। আর মাদক সেবনের তালিকায় রয়েছে ফুটপাথের টোকাই থেকে শিল্পপতি এবং নিরক্ষর থেকে উচ্চশিক্ষিতদের অনেকেই। মাদকের এ অবৈধ ব্যবসা নিয়ন্ত্রণে ব্যবহার করা হচ্ছে দামি গাড়ি এবং নারীদের। মাঝেমধ্যে মাদকের বড় চালানও ধরা পড়ে; কিন্তু আড়ালে থাকা এসব মাদক সম্রাট-সম্রাজ্ঞীর অধিকাংশই থাকেন ধরাছোঁয়ার বাইরে। আবার যাঁরা গ্রেফতার হন, তাঁরা আবার জামিনে এসে ফিরে যান সেই পুরনো ব্যবসায়। অল্প পুঁজি, কম ঝুঁঁকি, স্বল্প সময়ে ধনী হওয়ার সুযোগ ও বহনে সহজলভ্য বলেই ইদানীং ইয়াবা ব্যবসা বেশি করছেন মাদক বিক্রেতারা। থানা পুলিশের কথিত সোর্স, সুন্দরী ও স্মার্ট তরুণী, এমনকি গৃহবধূরাও জড়িয়ে পড়ছেন অবৈধ মাদক ব্যবসার সঙ্গে। এ কারণে চিহ্নিত স্পট তো আছেই,চাঁদপুরের অলিগলিতেও সহজেই ছড়িয়ে পড়ছে এসব মাদক। বিত্তশালী পরিবারের সন্তানরাও মাদকের অর্থের জোগান দিতে প্রথমে মিথ্যা কথা বলা থেকে শুরু করে মা-বাবার কাছ থেকে পয়সা নেয়। এক সময় ওই সন্তানও ছিনতাই কিংবা অন্যান্য অপরাধে জড়িয়ে পড়তে বাধ্য হচ্ছে মাদকের জন্য। মাদক বিক্রেতাদের আবার প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মাদত দিচ্ছেন স্থানীয় রাজনৈতিক নেতারা। এছাড়া পুলিশ, র্যাব ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণের কিছু অসাধু কর্মকর্তার মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে রয়েছে গোপন সখ্য। দেশের দুই-তৃতীয়াংশ অপরাধের সঙ্গে মাদকের প্রত্যক্ষ এবং পরোক্ষ যোগসূত্র রয়েছে। অকালে ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে যুবসমাজ। আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগের অভাব, আদালতের দীর্ঘসূত্রতা, আবার কখনো কখনো আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে মাদক মামলায় গ্রেফতার করা ব্যক্তিরা অনেক ক্ষেত্রে পার পেয়ে যাচ্ছেন। মাদকদ্রব্যের ব্যবহার রোধ করতে হলে সামাজিক মূল্যবোধ ও সামাজিক জনসচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এমনকি উঠতি বয়সী স্কুলগামী কোমলমতি শিশুরাও জড়িয়ে পড়ছে নেশার বেড়াজালে। হতাশা, দারিদ্র্য, আবার ধনীর ঘরের সন্তানরা বেহিসেবি টাকা খরচ করতে গিয়ে নেশায় আসক্ত হয়। মাদক এমন একটি মরণ নেশা, যা ধনী-গরিব কোনো পরিবারকেই ছাড় দিচ্ছে না। অনেকে মাদকদ্রব্য বিক্রি কিংবা সরবরাহ করতে গিয়ে নিজেই আসক্ত হয়ে পড়ে। মাদক নিয়ত্রনে শুধু চাঁদপুরবাসীকে নয়, এ যুদ্ধে বাংলাদেশের সবাইকে শামিল হতে হবে। বিশেষ করে জনসচেতনতা বৃদ্ধি এবং মাদক সেবনের কুফল নিয়ে মিডিয়ার প্রচার অনেক ভূমিকা রাখবে। মাদকদ্রব্যের মধ্যে জীবন ধ্বংসকারী ইয়াবা ট্যাবলেটের ব্যবহার মারাত্মক আকার ধারণ করছে, যার কারনে অনেককেই দিতে হচ্ছে প্রান। চাঁদপুরের এখন মাদকের ছোবলের হাত থেকে রেহাই পেতে যুবকরা আত্ম¡হত্যার পথ বেছে নিচ্ছে। প্রথম ঘঁনাটি ঘটে, শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রসা রোড এলাকার মুন্সি বাড়ির শাহাদাত হোসেন বাবু দির্ঘদিন ধরে মাদক দ্রব্য সেবনের সাথে জড়িত হয়। এদিকে বাবুর পরিবার বিষটি জানতে পেরে মাদক সেবন থেকে বিরত থাকতে বলে। এক সময় পরিবারের চাপে পড়ে বাবুকে গলায় ফাস দিয়ে আত্মহত্যা করতে হয়। পরবর্তী ঘঁনাটি ঘটে, গত ২০ অক্টবর বাগাদী ইউনিয়নের সোবহান পুরে রাসেল মিঝি নামের এক যুবক মাদকের হাত থেকে রক্ষা পেতে ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করে। তাই ভয়াল মাদক ছোবলের হাত থেকে রক্ষা করতে চাঁদপুর শহরবাসী ও প্রশাসনসহ সমাজের সকল সচেতন নাগরীককে মাদক নিয়ত্রনে এগিয়ে আসরেত হবে। তাহলেই মাদক স্বর্গরাজ্য থেকে মুক্তি পাবে চাঁদপুরবাসী।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ২১ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
চাঁদপুর নিউজ সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।