ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি
ভয়াবহ মাদকের ছোবলে আক্রান্ত ফরিদগঞ্জ উপজেলা। উপজেলার প্রতিটি পাড়া মহল্লায় মাদকসেবীর সংখ্যা বাড়ছে আশঙ্কাজনকভাবে। একইভাবে বাড়ছে ব্যবসায়ীর সংখ্যা। সে হিসেবে গত ক’বছরে পুলিশের সাঁড়াশি অভিযানে মাদকসেবী, মাদক ব্যবসায়ীদের আটক ও ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে সাজা প্রদান করলেও সচেতন মানুষের কথা মূলত এসব অভিযান ও সাজার কারণে সমাজে নামমাত্রই প্রভাব পড়ছে। বিভিন্ন রুট দিয়ে গাঁজা, ইয়াবাসহ নানা ধরনের মাদকদ্রব্যের সহজ লভ্যতার কারণে ক্রমশই বাড়ছে নানা অপরাধ প্রবণতা। শুধু তাই নয়, মাদকের এ সহজ লভ্যতাকে কাজে লাগিয়ে ইদানিং প্রতিপক্ষকে রাজনৈতিক ও সামাজিকভাবে অপদস্থ করার অপচেষ্টা শুরু হয়েছে। এ রকম বেশ ক’টি ঘটনা ঘটেছে একটি ঘটনা ঘটে কয়েক মাস পূর্বে ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার হাসপাতাল সংলগ্ন এলাকায়।
হাসপাতাল সংলগ্ন জনৈক রফিক পাটওয়ারীর দোকানে কৌশলে একটি চক্র গাঁজার প্যাকেট রেখে পুলিশ ও সাংবাদিকদের সংবাদ দেয়। পরবর্তীতে পুলিশ কয়েক দফা অভিযান চালিয়ে গলদঘর্ম হয়ে পুনরায় তথ্য দাতাকে ফোন করে গাঁজার অবস্থান নিশ্চিত হয়ে তা উদ্ধার করে। ঘটনা নিয়ে প্রশ্ন করা হলে রফিক পাটওয়ারী বলেন, ঘটনার কিছু দিন পুর্বে তিনিসহ এলাকার কিছু উদ্যোমী তরুণ মাদকমুক্ত সমাজ এবং সামাজিকভাবে এর বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তোলার লক্ষ্যে ‘বড়ালি সচেতন যুব সংঘ’ নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। এ সংগঠনের মাধ্যমে তারা হাসপাতালের ভেতরে, বাইরে এবং পুরো এলাকায় গণসচেতনতা তোলার লক্ষ্যে কাজ শুরু করতেই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে মাদক ব্যবসায়ী ও সেবীরা । তারাই তার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে গাঁজা রেখে নাটক মঞ্চস্থ করে পুলিশ ও সংবাদকর্মীদের সংবাদ দেয়। ওই সময় ঘটনাস্থলে যাওয়া সংবাদকর্মী ও পুলিশ বিভাগের ক�জন কর্মকর্তার কাছে এটি একটি পরিকল্পিত নাটক বলে প্রতীয়মান হয়েছে। সর্বশেষ গত ১৭ অক্টোবর দুপুরে গোবিন্দপুর দক্ষিণ ইউনিয়ন ছাত্রদলের সভাপতি ও উপজেলা ছাত্রদলের অপেক্ষমান কমিটির পদের দাবিদার ফজলুর রহমানের বাসার সামনে থাকা মোটর সাইকেল থেকে ইয়াবা উদ্ধারের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে। মাদক উদ্ধারকারী থানার এসআই অলক বড়ুয়া উদ্ধারের পর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ঘটনাটি বুঝতে বাকি নেই এটি একটি সাজানো নাটক। পুলিশের ধারণা ফজলুর রহমানকে ফাঁসাতে মাদক নিয়ে এ আয়োজন করে তার প্রতিপক্ষরা। ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ নাজমুল হকও বিষয়টি সম্পূর্ণ নাটক হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন, একজন মাদক ব্যবসায়ী বা সেবী যাই হোক না কেনো সে কখনোই এসব মাদকদ্রব্য এভাবে সামনে রাখবে না। তিনি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে তারা নানাভাবে বিশ্লেষণ করছেন। মাদকের ছড়াছড়িতে এখন সবকিছুই সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। এর জন্য সামাজিক আন্দোলন ও প্রতিরোধই পারে সমাজকে কলুষমুক্ত করতে। তিনি বলেন, পুলিশ এবং প্রশাসন মাদকের ব্যাপারে পূর্বের যে কোনো সময়ের তুলনায় এখন আরো বেশ কঠোর ।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রদল নেতা ফজলুর রহমান বলেন, রাজনৈতিক কারণে তাকে ফাঁসাতে এই মাদক নিয়ে নাটক তৈরি করা হয়েছে। তিনি বলেন, যে কোনো সময় ফরিদগঞ্জ উপজেলা ছাত্রদলের নতুন কমিটির ঘোষণা আসতে পারে। একটি চক্র চাচ্ছে না আমি সেই কমিটিতে গুরুত্বপূর্ণ পদে আসীন হই। মূলতঃ তারাই এ ঘটনার জন্মদাতা। তিনি বলেন, মুখে জিয়ার সৈনিক বললেও ২০০৮ সালের নির্বাচনে যারা আওয়ামী লীগের হয়ে নৌকার ভোট চেয়েছেন, সরকার দলীয় লোকদের সাথে সখ্যতা রেখে টেন্ডারবাজিসহ নানা অপকর্মে জড়িত ছিল তারাই পরিকল্পিতভাবে তাকে ফাঁসানোর ঘৃণ্য এ পথে পা দিয়েছে। তিনি বলেন, ২০০৩ সাল থেকে শহীদ জিয়ার আদর্শের সৈনিক হিসেব নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছি। আন্দোলন-সংগ্রামে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেও কখনো পদের জন্য নোংরা পথে পা দেইনি।
এদিকে মাদকের অপব্যবহার নিয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, এক দেড় বছর পূর্বে হাজীগঞ্জে এ ধরনের একটি ঘটনা তার চোখে পড়ে। মাদকের তথ্য দাতার সুস্পষ্ট তথ্য এবং পরবর্তীতে ওই স্থানেই মাদক পাওয়ার বিষয়টি তাকে নিশ্চিত করেছে এটি সাজানো নাটক। তিনি বলেন, প্রতি একশ’টি মাদকদ্রব্য উদ্ধারের ঘটনার ক্ষেত্রে অন্তত কমপক্ষে ৫/৬টি সাজানো নাটক বলে তার কাছে মনে হয়। এ ক্ষেত্রে জাল টাকার মতো অবশ্য পুলিশের কিছু করার থাকে না। পুলিশ মাদকদ্রব্য যার কাছে থাকবে তাকেই আটক করবে।
কয়েকজন সচেতন ব্যক্তি মাদক নিয়ে এ ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরে বলেন, আগে শোনা যেতো পুলিশ, ডিবি পুলিশ এবং সর্বশেষ র্যাবের বিরুদ্ধে নাটক সাজানোর নানা অভিযোগ যা পত্রিকান্তরে প্রকাশিত হয়েছে। কিন্তু রাজনৈতিক বা সামাজিকভাবে হেনস্তা করার অপচেষ্টা আমাদেরকে ভাবিয়ে তুলেছে। তারা বলেন, পূর্ব শত্রুতার জের বা রাজনৈতিকভাবে মাদকের অপব্যবহার রোধে প্রয়োজন সামাজিক আন্দোলন এবং দলমত নির্বিশেষে সকলের মাদক বিরোধী অবস্থান। নইলে সেদিন বেশি দূরে নয়, প্রতিপক্ষ সে যেই হোক না কেনো তাকে ফাঁসাতে মাদকের মতো নীল ছোবলের আশ্রয় নিবে অপরাধীরা।