ফাহিম শাহরিন কৌশিক খান
মাদকের স্বর্গরাজ্য এখন চাঁদপুর নামে দিনদিন খ্যাতি অর্জন করেছে। ইয়াবা, ফেন্সিডিল, গাঁজা, প্যাথিডিনসহ বিভিন্ন মাদক চাঁদপুর জেলা হয়ে অন্যান্য অঞ্চলে পাচার হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসন মাদকসহ বিভিন্ন মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করে মামলা দিয়ে জেল হাজতে পাঠানোর পরেও তারা বেরিয়ে এসে পুনরায় মাদক ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। মূলতঃ ইয়াবা, ফেন্সিডিল আমদানির গডফাদাররা অন্তরালে থেকে তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাওয়ার কারণে চাঁদপুর থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মোঃ ইসমাইল হোসেন ও পুলিশ সুপার মোঃ আমির জাফর মাদকের বিরুদ্ধে জিহাদ ঘোষণা করার পরেও এখনো চাঁদপুর থেকে মাদক নির্মূল করা যাচ্ছে না। ডিবি পুলিশ ও মডেল থানা পুলিশ সম্প্রতিকালে যে সকল মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করেছে তাদেরকে রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মীরা ও গডফাদাররা বিভিন্ন তদবির করে ছাড়িয়ে নিতে চেষ্টা করে। মাদক ব্যবসায়ীরা টেকনাফ ও কক্সবাজার এলাকা থেকে ইয়াবা এবং কুমিল্লা সীমান্ত এলাকা থেকে ফেন্সিডিল, প্যাথিডিন, হিরোয়িনসহ বিভিন্ন মাদক বিভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে চাঁদপুরে এনে দেদারচ্ছে বিক্রি করছে। মাদক ব্যবসায়ীরা বর্তমানে মহিলা ও যুবতী মেয়েদেরকে মাদক বহনের জন্য ব্যবহার করছে। তারা ইয়াবা নিজেদের শরীরের গোপন স্থানে বেঁধে আনার কারণে পুলিশ প্রশাসন তাদেরকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হচ্ছেনা। ডিবি পুলিশ ও মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তর সম্প্রতিকালে গাঁজা, ফেন্সিডিল, ইয়াবাসহ বেশ ক’জন মহিলা এবং যুবতীদের গ্রেফতার করার পরেও তারা বেরিয়ে এসে পুনরায় তাদের মাদক বহনের কাজ চালিয়ে যাচ্ছে।
একটি সূত্র জানায়, চাঁদপুরের ইয়াবা পাচারকারি মূল হোতা বালিয়ার বোরকা রিপন ও ফেন্সিডিলের গডফাদার পশ্চিম সকদীর দেলোয়ার হোসেন দেলুকে কিছু দিন পূর্বে চাঁদপুর মডেল থানার উপ-পরিদর্শক ফিরোজ, সহকারি পরিদর্শক নন্দন সরকার সঙ্গীয় পুলিশ ফোর্স নিয়ে ১২কেজি গাঁজাসহ পশ্চিম সকদী থেকে আটক করে। তারা জেল হাজতে থেকে তাদের ব্যবসা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে চালিয়ে যাচ্ছে। ইয়াবা সম্রাট বালিয়ার বোরকা রিপন চাঁদপুর জেলা কারাগারে থাকাবস্থায় কারাগারের ভেতরে ইয়াবা বিক্রিকালে ৫৩পিচ ইয়াবাসহ আটক করে কারারক্ষীরা। তাকে বর্তমানে জেল সুপারের নির্দেশে সেলে আটকে রাখা হয়েছে। ইয়াবা ও ফেন্সিডিল সম্রাটরা এভাবেই আটকের পরেও তাদের বানিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে। এছাড়া চাঁদপুরের জেলার কচুয়া, শাহ্রাস্তি, হাজীগঞ্জ, মতলব উত্তর, ফরিদগঞ্জে দেদারচ্ছে ইয়াবা ও ফেন্সিডিল বিক্রি হচ্ছে। চাঁদপুর সদরের মধ্যে মহমায়া, বাবুরহাট, মুন্সিরহাট, সেনের দিঘির পাড়, ওয়্যারলেছ বাজার, বাগাদী চৌরাস্তা, পশ্চিম সকদী, নানুপুর, বাস স্ট্যাণ্ড, ব্যাংক কলোনী, তালতলা, ইচলী, ঢালীরঘাট, নতুনবাজার, জামতলা, বড়স্টেশন এলাকায় বিভিন্ন মাদক বিক্রি হচ্ছে।
শহরের মধ্যে মাদক বিক্রির খ্যতিমান অঞ্চল হচ্ছে পুরাণবাজার। আর পুরাণবাজারের সিনেমা হল এলাকায়, পুরাতন ফায়ার সার্ভিস, হরিসভা রোড, রনাগল, বাবুর্চিঘাট, বালিয়া, ফরক্কাবাদ এলাকায় দেদারচ্ছে ইয়াবা বিক্রি হচ্ছে। পুরাণবাজার পুলিশ ফাঁড়ি ও মডেল থানা পুলিশ এসব এলাকা থেকে বেশ ক’জন মাদক ব্যবসায়ীদের হাতে-নাতে মাদকসহ আটক করার পরেও কিছু দিন জেল হাজতে থেকে বেরিয়ে এসে পুনরায় তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। এতে করে চাঁদপুরের যুবসমাজ দিনদিন ধ্বংসের দিকে ধাবিত হচ্ছে। সূত্রটি আরো জানায়, ডিবি পুলিশ যে সকল মাদক ব্যবসায়ীদের আটক করছে, তাদের কাছ থেকে মাসোহারা নেয়ার কন্ট্রাক করার কারণে পরবর্তীতে তাদেরকে আর গ্রেফতার করছে না। তাই মাদক ব্যবসায়ীরা গ্রেফতার হওয়ার পরেও তাদের ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে। প্রকৃত গডফাদারদের আটক করতে না পারার কারণে চাঁদপুর থেকে মাদক নির্মূল করা সম্ভব হচ্ছে না। মাদকের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে প্রকৃত মাদক ব্যবসায়ীদের নাম তুলে ধরা হবে।
শিরোনাম:
সোমবার , ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ২৮ মাঘ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।