শাহরাস্তি প্রতিনিধি
গত ১০ নভেম্বর শাহরাস্তি উপজেলার ভোলদিঘি কামিল মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মাওঃ মোঃ দেলোয়ার হোসেন মাদ্রাসার ৯ম শ্রেণীর ছাত্র রাশেদ মাদ্রাসায় ১০ মিনিট দেরিতে উপস্থিত হওয়ার অপরাধে তাকে বেদম মারধর করে রক্তাক্ত করে। সংবাদটি জানার পর স্থানীয় সাংবাদিক ও পুলিশ মাদ্রাসায় উপস্থিত হয়। সকলের সামনেই মাদ্রাসা অধ্যক্ষ তাকে চড় মারার কথা স্বীকার করেন। এরপর ১১ নভেম্বর এ বিষয়ে স্থানীয় বিভিন্ন পত্রিকায় সংবাদ ছাপা হয়। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পর ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন উঠেপড়ে লাগেন।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, মাদ্রাসা অধ্যক্ষ তার লোকজন দিয়ে অর্থ ও হুমকি-ধমকির বিনিময়ে আহত ছাত্র রাশেদের মা রহিমা বেগম থেকে একটি লিখিত রাখেন। এতে সম্পূর্ণ ঘটনাটি মিথ্যা ও বানোয়াট হিসেবে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে ছাত্রকে মারধরের ঘটনার বিষয়ে শাহ্রাস্তি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ওই অধ্যক্ষের কাছে কারণ দর্শানোর নোটিস প্রেরণ করেন। এরপর অধ্যক্ষ প্রতি পদে পদে মিথ্যার আশ্রয় নিতে থাকেন। গত ১৩ নভেম্বর আহত ছাত্রের মা রহিমা বেগম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার বরাবরে একটি আবেদন করেন। আবেদনে উল্লেখ করা হয়, ঘটনার দিন পত্রিকায় উল্লেখিত ঘটনা ঘটেনি। তিনি হুজুরের নিকট দোয়া চাইতে গিয়েছিলেন। পত্রিকায় হুজুরের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। আবেদনপত্রে রহিমা বেগম উল্লেখ করেন, বিষয়টি আমরা অভিভাবক, শিক্ষক মিলে সুষ্ঠু সমাধান করেছি। আবেদনপত্রের শেষ দিকে তিনি অনুরোধ করে বলেন, বিষয়টি নিয়ে আর যেনো কোনো বাড়াবাড়ি না হয় এবং অধ্যক্ষ হুজুরের বিরুদ্ধে যেনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া না হয়। এর বিহিত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে মহোদয়ের মর্জি হয়।
সচেতন মহলের প্রশ্ন, ১০ নভেম্বর মাদ্রাসায় যদি কোনো সমস্যা না হয়, তাহলে অভিভাবক-শিক্ষক দিয়ে কি সমাধান করা হয়েছে। যদি কোনো সমস্যাই না হয় তাহলে আহত ছাত্রের মা রহিমা বেগম তার আবেদনপত্রে অধ্যক্ষ হুজুরের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট আবেদন জানাবেন কেনো?
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এটিএম কাউছার হোসেন জানান, অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেন এখনও নোটিসের জবাব দেননি। বিষয়টির ব্যাপারে প্রয়োজনে তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছে প্রতিবেদন জমা দেয়া হবে।
এদিকে উক্ত ঘটনার সংবাদ সংগ্রহ করেছেন শাহ্রাস্তি প্রেসক্লাবের এমন ৭/৮জন সংবাদকর্মী ওই দিন অধ্যক্ষ দেলোয়ার হোসেনের স্বীকারোক্তি, আহত ছাত্র রাশেদ, তার মা রহিমা বেগম, মাদ্রাসার পরিচ্ছন্নকর্মী মোঃ আলী আজমসহ প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য রেকর্ড রয়েছে। এছাড়াও রক্ত মাখা বইয়ের চিত্র ধারণ করে সাংবাদিকরা।
এ ব্যাপারে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান জানান, ওই দিনের ঘটনাটি সত্য। ওনার বিরুদ্ধে আরও অভিযোগ রয়েছে। মাদ্রাসার স্বার্থে সবাইকে শান্ত থাকতে বলেছি।
স্থানীয় অনেকেই প্রশ্ন করে বলেন, হুজুর হয়ে তিনি কীভাবে মিথ্যার আশ্রয় নিতে পারেন। তবে তিনি যতই কৌশল করুক না কেন, সত্য সবাই জানে। অর্থ দিয়ে সবসময় মুখ বন্ধ করা যায়না। এলাকাবাসী উক্ত ঘটনাসহ মাদ্রাসার উন্নয়নে বিভিন্ন দুর্নীতির বিচার দাবি করেছেন।