মুহাম্মদ জাকির হোসেন, মতলব দক্ষিণ (চাঁদপুর)
মেয়েটির উচ্চতা আড়াই ফুট। অস্বাভাবিক এই উচ্চতা পদে পদে বাধা দেয় তাকে। পোশাক পরতে, গোসল করতে এমনকি স্বচ্ছন্দে হাঁটাচলাতেও বাধা। আত্মীয়, পাড়া-পড়শিরা তাকে দেখে হতাশ হয়। কিন্তু ভেঙে পড়েননি মা। বোঝা মনে করেননি মেয়েকে। পরম মমতায় তাকে কোলে তুলে নিয়েছেন। হেঁটেছেন আলোর পথে। মায়ের সেই পথচলা আজও থামেনি। তাঁর মেয়েটি আজ কলেজে পড়ে। মা আজও মেয়েকে কোলে নিয়ে কলেজে যাওয়া-আসা করেন।
মেয়েও কম যায় না। ছোট্টটি থেকেই পড়ার প্রতি দারুণ ঝোঁক। ২০১২ সালে এসএসসিতে জিপিএ-৪ দশমিক ১৯ পেয়েছে। প্রতিদিন মায়ের কোলে চড়ে ও অটোরিকশায় বাড়ি থেকে ১৫ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে কলেজে আসে। সে উপজেলা সদরের মতলব ডিগ্রি কলেজের দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগের ছাত্রী। নাম তার জান্নাত আক্তার (১৮)।উপাদী ইউনিয়নের লেজাকান্দি গ্রামে। আর মায়ের নাম নাজমা বেগম।
গত ৩১ আগস্ট বেলা ১১টায় জান্নাতের সঙ্গে দেখা হয় কলেজের বারান্দায়। তখন সে মায়ের কোলে ছিল। এত কষ্ট করে কলেজে আসার কারণ জানতে চাইলে সে বলে, ‘যত কষ্টই হোক লেখাপড়া করে নিজের পায়ে দাঁড়াতে চাই। ইচ্ছা আছে বিএ পর্যন্ত পড়ব। মায়ের মুখে হাসি ফুটাব।’
মতলব ডিগ্রি কলেজের উপাধ্যক্ষ আসাদুর রহমান বলেন, যেসব শিক্ষার্থীর শারীরিক সমস্যা নেই তারাই ঠিকমতো ক্লাসে আসে না। শারীরিক বাধা সত্ত্বেও জান্নাত যেভাবে মায়ের কোলে চড়ে ক্লাসে আসে, তা অবশ্যই প্রশংসনীয়।
নাজমা বেগম বললেন, ‘ও শুধু নিজে খাইতে পারে। বাকি সবকিছু কইরা দিতে হয় আমার। আমার কোলে চইড়া প্রাইমারি, হাইস্কুলের পড়া শেষ করছে। বাড়িতেও আমার কোলে বইসাই পড়ে। পরীক্ষাও দিছে আমার কোলে বইসাই। শরীরের দুর্বলতায় বেশিক্ষণ বইসা থাকতে পারে না। পড়ার দিকে ওর খুব ঝোঁক। এ জন্য কোলে কইরা কলেজে নিয়া আই।’
নাজমা আরও জানান, জান্নাতের বাবা বৃদ্ধ, অসুস্থ। তিন ভাইবোনের মধ্যে জান্নাত মেঝো। তার বড় ভাই রাসেল মাহমুদ চাকরি খুঁজছে। ছোট ভাই মোজাম্মেল হক অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে। নিজেদের জমিজমা বলতে কিছু নেই।
শিরোনাম:
শনিবার , ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৩ ফাল্গুন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।