প্রতিনিধি
* প্রথম শ্রেণি পেয়েছে ২৪৩ জন * পাসের হার ৯৩.৬৮ ভাগ * সর্বোচ্চ প্রথম শ্রেণি পেয়েছে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ * আমরা অত্যন্ত আনন্দিত, গর্বিত : অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা
২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের মাস্টার্স পরীক্ষার চূড়ান্ত ফলাফলে চাঁদপুর সরকারি কলেজ ঈর্ষণীয় ফলাফল অর্জন করেছে। কলেজের অফিস সূত্রে জানা যায়, এবারের ফলাফল স্মরণকালের সর্বশ্রেষ্ঠ ফলাফল। এর আগে এ কলেজ থেকে মাস্টার্সে এতো ভালো ফলাফল কখনো হয়নি।
এ বছর এ কলেজের ১৬টি বিভাগ থেকে ১ হাজার ৩০ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষা দেয়। যার মধ্যে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ২শ’ ৪৩ জন এবং ২য় শ্রেণী পেয়েছে ৭শ’ ১৬ জন। তৃতীয় শ্রেণী পেয়েছে মাত্র ৬ জন। পরীক্ষায় অনুত্তীর্ণ ৬৫ জন। গড় পাসের হার ৯৩.৬৮ ভাগ। শুধু তাই নয়, সারাদেশের মাস্টার্সের ফলাফলে প্রথম শ্রেণীতে প্রথম হয়েছেন এ কলেজের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী শাহাদাৎ হোসেন। এ কলেজ থেকে ১৬টি বিভাগের মধ্যে সবচে’ বেশি প্রথম শ্রেণী অর্জন করে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ। এ বিভাগ থেকে ১শ’ ৫০ জন পরীক্ষা দিয়ে ৯১ জন প্রথম শ্রেণী পেয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ৫৫ জন। উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৪ জন। ব্যবস্থাপনা বিভাগ থেকে এ বছর পরীক্ষার্থী ছিলো ১৩৭ জন, যার মধ্যে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ৪৮ জন, ২য় শ্রেণী পেয়েছে ৮৫ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৪ জন।
বিভাগওয়ারী ফলাফলের দিক দিয়ে ৩য় সর্বোচ্চ প্রথম শ্রেণী পেয়েছে সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এ বিভাগ থেকে ৩৯ জন শিক্ষার্থী প্রথম শ্রেণী পেয়েছে। দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ৭১ জন। উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৫ জন। মোট পরীক্ষার্থী ছিলো ১১৫ জন। বাংলা বিভাগ থেকে ৬৫ জন পরীক্ষা দিয়ে ১ম শ্রেণী পেয়েছে ৮ জন, ২য় শ্রেণী ৫০ জন, ৩য় শ্রেণী ২ জন। উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৫ জন। ইংরেজি বিভাগ থেকে ৮৩ জন পরীক্ষা দিলেও এ বিভাগ থেকে কেউ প্রথম শ্রেণী পায়নি। দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ৬৯ জন। তৃতীয় শ্রেণী পেয়েছে ১ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ জন।
ইসলাম শিক্ষা বিভাগ থেকে ২৯ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ১৯ জন, ২য় শ্রেণী ৯ জন এবং অনুত্তীর্ণ হয়েছে ১ জন। ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি বিভাগের ৫৩ জনের মধ্যে ১ম শ্রেণী পেয়েছে ৩ জন, ২য় শ্রেণী ৫০ জন। রসায়ন বিভাগ থেকে ২২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ৭ জন, ২য় শ্রেণী পেয়েছে ১৪ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ১ জন। রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের পরীক্ষার্থী ছিলো ২শ� ৩ জন, প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ১২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ১৮২ জন, তৃতীয় শ্রেণী পেয়েছে ১ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৮ জন।
অর্থনীতি বিভাগ থেকে ৭৫ জন পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ৬ জন, ২য় শ্রেণী পেয়েছে ৫৪ জন, তৃতীয় শ্রেণী পেয়েছে ২ জন এবং অনুত্তীর্ণ হয়েছে ১৩ জন। দর্শন বিভাগ থেকে ৩ জন পরীক্ষা দিয়ে ৩ জন পরীক্ষার্থীই দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে। ইতিহাস বিভাগ থেকে ৩২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ২ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ২৭ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৩ জন। ভূগোল বিভাগ থেকে ৩৭ জন পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ২ জন, ২য় শ্রেণী পেয়েছে ৩২ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ৩ জন। গণিত বিভাগের ১২ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ৪ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ৭ জন। অনুত্তীর্ণ হয়েছে ১ জন। উদ্ভিদবিদ্যা বিভাগের ১১ জন পরীক্ষার্থীর মধ্যে ১ম শ্রেণী পেয়েছে ১ জন, দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ৬ জন, উত্তীর্ণ হতে পারেনি ৪ জন। প্রাণিবিদ্যা বিভাগ থেকে ৩ জন পরীক্ষা দিয়ে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে ১ জন এবং দ্বিতীয় শ্রেণী পেয়েছে ২ জন।
ফলাফল জানার পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় চাঁদপুর সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মিহির লাল সাহা বলেন, এবারের ফলাফলে আমরা অত্যন্ত আনন্দিত। আমরা গর্ববোধ করছি। আমরা আমাদের শিক্ষকদের নিয়ে সার্বিক চেষ্টা করেছিলাম ভালো ফলাফল অর্জন করতে। শিক্ষার্থীদের আন্তরিকতায় আমরা সে ফলাফল অর্জন করতে সমর্থ হয়েছি। এ বছর আমরা কলেজ প্রতিষ্ঠার পর থেকে সেরা সাফল্য পেয়েছি। এ ফলাফল আমাদের বর্তমান শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত ও অনুপ্রাণিত করবে। তিনি আগামীতেও এ ধারা অব্যাহত থাকবে বলে আশা ব্যক্ত করেন।
কলেজের উপাধ্যক্ষ ড. এএসএম দেলওয়ার হোসেন বলেন, এবার আমাদের ফলাফল অত্যন্ত ভালো হয়েছে। ২৪৩ জন পরীক্ষার্থী এ কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণী পেয়েছে। যারা অনুত্তীর্ণ হয়েছে তারা মূলতঃ পরীক্ষা দিতে আসেনি। বাংলা বিভাগের মতো কঠিন বিষয়ে ৮ জন প্রথম শ্রেণী প্রাপ্তিই প্রমাণ করে এবারের ফলাফল এ কলেজের জন্য গৌরবজনক। তিনি বর্তমানে যারা এ কলেজে পড়াশোনা করছে তারা এ ফলাফল দেখে উৎসাহিত হবে বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।
কলেজের শিক্ষক পরিষদ সম্পাদক মোহাম্মদ ওয়াহিদুজ্জামান বলেন, মাস্টার্সের এবারের ফলাফল আমরা যে ধারাবাহিকভাবে এগিয়ে চলছি তারই স্বাক্ষর বহন করে। অধ্যক্ষ, উপাধ্যক্ষ, শিক্ষকমণ্ডলী, অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সমন্বিত প্রচেষ্টাই এ ফলাফল অর্জন করতে সহায়তা করেছে। তিনি এ ফলাফল আগামীতেও অব্যাহত থাকবে বলে আশা প্রকাশ করেন।
উল্লেখ্য, ২০১০-১১ শিক্ষাবর্ষের এ পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ২০১৪ সালের জুনে। এর ফলাফল প্রকাশিত হয় ১১ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে।