প্রতিনিধি
ছেলে আমার মস্ত মানুষ/মস্ত অফিসার/মস্ত ফ্ল্যাটে যায় না দেখা এ পাড় ওপাড়/নানান রকম জিনিস আর আসবাব দামি দামি/সবচেয়ে কম দামি ছিলাম একমাত্র আমি/ছেলে আমার, আমার প্রতি অগাধ সংগম/ আমার এ ঠিকানা তাই বিদ্যাশ্রম—–। নচিকেতার এই জনপ্রিয় গানটির কথার মতো আমিরেন্নেছা (৭৫) নামে এক অসহায় বৃদ্ধা মার ঠাঁই কোন বিদ্যাশ্রমে না হলেও তার নিষ্ঠুর ছেলের অবজ্ঞা আর অবহেলায় তার ঠাঁই হয়েছে তারই কন্যা সন্তানের নিকট। হাসপাতালের বেডে শুয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে এমনই এক নিষ্ঠুর সন্তানের কথা জানালেন স্বামীহারা আমিরেন্নেছা। চাঁদপুর সদর উপজেলার ৮নং বাগাদী ইউনিয়ন নানুপুর গ্রামের বেপারী বাড়ির মৃত নুরুজ্জামান বেপারীর স্ত্রী হতভাগ্য আমিরেন্নেছা। তিনি এক ছেলে এক মেয়ের জননী। ছেলে মোস্তফা মিয়া বেপারী আর মেয়ে মোসাম্মৎ আম্বিয়া বেগম।
গত প্রায় ৮ বছর পূর্বে আমিরেন্নেছার স্বামী মারা যান। তারপর থেকেই আমিরেন্নেছার জীবনে নেমে আসে দুঃখের কালো ছায়া। তার ছেলে মোস্তফা বেপারী পরিবার পরিজন নিয়ে ঢাকায় থাকেন। তিনি একটি ওয়ার্কসপে কর্মরত। বাবা মারা যাবার পর থেকে মোস্তফা বেপারী তার মায়ের কোনো খোঁজ খবর নেননি। আমিরেন্নেছা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে ছেলের প্রতি অভিযোগ করে বলেন, ‘আমার স্বামী মারা যাবার পর থেকে আমার ছেলে আমাকে কোনো খাওন-খোরাক দেয়নি। সে আমার সাথে প্রতারণা করে আমার স্বামীর জমিটুকুও লিখে নিয়ে যায়। গত ৭ মাস পূর্বে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে আমার মেয়ের স্বামীর বাড়িতে রেখে সে ঢাকা চলে যায়। তিনি হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে বলেন, ‘বাবা তোমরা আমার স্বামীর ভিটে মাটিটুকু তার কাছ থেকে উদ্ধার করে দাও। যে ছেলে তার গর্ভধারিণী মায়ের কথা ভুলে গেছে, মায়ের সাথে প্রতারণা করে আমার মেয়েকে ঠকিয়ে তার নামে জমি লিখে নিয়েছে এবং যে তার মায়ের অসুস্থতার কথা শুনে একবারও দেখতে আসেনি-সে নিষ্ঠুর সন্তানকে আমি পরিচয় দিতে চাই না।
বৃদ্ধা আমিরেন্নেছার মেয়ে আম্বিয়া বেগম জানান, আমার মা গত ৮ জানুয়ারি অসুস্থ হয়ে পড়লে আমরা তাকে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে এনে ভর্তি করাই। পরে তার অবস্থার অবনতি দেখে ডাক্তার তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্যে ঢাকায় প্রেরণ করেন। আমাদের সামর্থ্য না থাকায় অর্থ সঙ্কটে ঢাকা না নিয়ে কুমিল্লায় সিটিস্ক্যান করানোর পর তার হৃদরোগ ধরা পড়ে। বর্তমানে তিনি চাঁদপুর মেডিকেল সেন্টারে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। মায়ের অসুস্থতার কথা মোস্তফা বেপারীকে জানালে তিনি কোনো পাত্তা দেননি এমনকি তার কিছু করার নেই বলে জানিয়ে দেয়। আজ ক’দিন ধরে মায়ের এমন গুরুতর অসুস্থতার কথা জানাতে তার মোবাইল নম্বরে বার বার ফোন দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেননি। আম্বিয়া বেগম আরো বলেন, দীর্ঘ ৭/৮ মাস ধরে আমরা মাকে দেখাশুনা করে আসছি। বর্তমানে আমার স্বামীর কোনো কর্ম না থাকায় মায়ের চিকিৎসার খরচ চালাতে আমাদের খুবই কষ্ট হচ্ছে। অথচ আমার ভাই মোস্তফা বেপারী মাকে ধোঁকা দিয়ে বাবার সব জমি তার দুই ছেলে এবং স্ত্রীর নামে লিখে নিয়েছে। এদিকে বৃদ্ধা আমিরেন্নেছা বাকি জীবনে সুন্দরভাবে বাঁচার জন্যে তার স্বামীর জমিটুকু ফিরে পেতে এবং নিষ্ঠুর ছেলের বিচারের জন্য প্রশাসনের সুদৃষ্টি কামনা করছেন।