চাঁদপুরে জন্মের পর পিতাহারা কিশোরীকে তার আপন মা’ নাজমা বেগম অর্থের লোভে বাল্য বিয়ে দেওয়ার অপরাধে কিশোরী নিজে বাদী হয়ে নববর ওমান প্রবাসী ওবায়দুল হক (৩৮), তার মা ও সৎ পিতা সুরুজ মিয়ার বিরুদ্ধে একটি মামলা দায়ের করে। ঘটনাটি ঘটেছে, শুক্রবার রাতে উয়ারুক তার পিতার বাড়িতে। চাঁদপুর শহরের বাবুরহাট সরকারি শিশু পরিবার (এতিম খানা) সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে জোড়পূর্বক এ বিয়ে দেয়া হয়।
রোববার ওই কিশোরীকে চাঁদপুর আদালতে তার জবান বন্দি রেকর্ড করার পর বিজ্ঞ বিচারক ৩ অপরাধিকে কারাগারে প্রেরনের নির্দেশ দেন এবং কিশোরীকে তার খালার জিম্বায় দেওয়ার আদেশ দেন। বর্তমানে কিশোরী তার খালা রোস্তম দেওয়ানের স্ত্রী রোকেয়া বেগমের হেফাজতে হাজীগঞ্জ উপজেলার বলাখাল দেওয়ান বাড়ীতে রয়েছে । এ ছাড়া আটকককৃত কিশোরীর মা নাজমা বেগম, তার সৎ বাবা সুরুজ মিয়া ও কিশোরীকে ধর্ষনকারী ওবায়দুল হক বর্তমানে চাঁদপুর জেলা কারাগারে রয়েছে । তাদের পক্ষের আইনজীবি তাদের জামিনের জন্য আবেদন করলেও আদালত জামিন মঞ্জুর করেনি। আগামী ৭ ফেব্রুয়ারী তারা পূনরায় জামিনের জন্য আদালতে আবেদন করবেন বলে তাদের আইনজীবি জানান। ৭ ফেব্রুয়ারী জামিন মঞ্জুর না হলে তারা চাঁদপুর জেলা জজ আদালতে পূনরায় জামিনের জন্য আবেদন করবে জানা যায়।
ঘটনার সত্যতা স্বিকার করে নিশ্চিত করে শাহরাস্তি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মিজানুর রহমান বলেন, চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে কিশোরী ডাক্তারী পরীক্ষার শেষে কিশোরীকে তার খালার জিম্বায় দেওয়া হয়েছে।
শনিবার গভীর রাতে কক্সবাজার এলাকার সফল নন্দী (মোজাম্মেল বাড়ি) গ্রামের মৃত আলী আহম্মেদের পুত্র ওবায়দুল হক উয়ারুক ফকির বাড়ির মৃত মনু মিয়ার কিশোরী কন্যার (১২)কে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে ধর্ষন করে। ওই সময় কিশোরী আত্মচিৎকার দিলে বাড়ির পার্শ¦বর্তী লোকজন ছুটে এসে লম্পট ধর্ষনকারী ওবায়দুলের হাত থেকে কিশোরীকে অচেতন অবস্থায় উদ্ধার করে। গভীর রাতেই শাহরাস্তি থানার পুলিশকে খবর দিলে, মডেল অফিসার ইনচার্জ তদন্ত দিলদার আজাদ, এসআই মহিন উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্সসহ পাষন্ড মা নাজমা বেগম, সৎ পিতা সুরুজ মিয়া ও ওবায়দুল হককে আটক করে থানায় নিয়ে যায়। কিশোরীকে শাহরাস্তি স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করে।
কিশোরীর খালা জানান, ওমান প্রবাসী এবায়েদুল হকের সাথে কিশোরীর মা নাজমা বেগমের মোবাইল ফোনের মাধ্যমে সম্পর্কের সুত্রপাত ঘটে। তার জের ধরে এবায়েদুল হকের কাছ থেকে মা নাজমা বেগম মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করে। যার প্রেক্ষিতে তার কন্যাকে এবায়েদুল হকের কাছে বিয়ে দিবে মর্মে সিদ্ধান্ত হয়। কয়েকদিন পূর্বে এবায়েদুল হক ওমান থেকে দেশে ফিরে আসলে মা নাজমা বেগম বাবুরহাট সরকারি শিশু পরিবার (এতিম খানা) থেকে তার গ্রামের বাড়ী উয়ারুকে নিয়ে আসে। বয়স কম থাকায় লোভী পাষন্ড মা মনোহরগঞ্জ উপজেলার কেশতলা গ্রামের তার দুর্সম্পর্কের আত্মীয় জালালী হুজুরের বাড়ীতে নিয়ে বিয়ে দেয়। এ ঘটনায় ভিকটিম বাদী হয়ে লম্পট ধর্ষক সহ মা ও সৎ বাবাকে আসামী করে শাহরাস্তি মডেল থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-১২, তাং-২৩/০১/২০১৬ ইং।
শাহরাস্তি মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (তদন্ত) দিলদার আজাদ জানান, আমরা খবর পেয়ে দ্রুত ঘটনাস্থলে পৌঁছে কিশোরীকে উদ্ধার সহ ৩ জনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসি। ওই রাতেই কিশোরীকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য চাঁদপুর সদর হাসপাতালে তাকে পাঠানো হয়। এ বিষয়ে থানায় মামলা হয়েছে। উল্লেখ্য কিশোরীর পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, কিশোরী জন্মের পর তার পিতা ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে মারা যান। ওই কিশোরী একটু বড় হওয়ার পর থেকে চাঁদপুর সদর উপজেলার শিশু সদনে লালিত পালিত হচ্ছিল। সেখান থেকে সে চাঁদপুরের বাবুরহাট স্কুলে সপ্তম শ্রেণিতে পড়াশুনা করত। গত ১৯ জানুয়ারি তার মা নাজমা বেগম তাকে এতিমখানা থেকে বাড়িতে নিয়ে যায়। এরপর তাকে কুমিল্লায় নিয়ে যান তিনি। সেখানে সৎ বাবার সুরুজ মিয়ার সহযোগিতায় তাকে ওবায়দুল হক নামের এক ব্যক্তির সাথে জোড় করে বিয়ে দেওয়া হয়। গত রোববার বিকেলে চাঁদপুরের জেষ্ঠ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বাড়িদ্বারা জবান বন্দি নিয়ে কিশোরীকে তার খালার আবেদনের প্রেক্ষিতে খালার জিম্বায় দেওয়ার আদেশ দেন আদালত ।