প্রতিনিধি
নিজের দোষ ঢাকতে বালাই ছুঁড়ে অন্যকে বিপদে ফেলেছেন এক প্রবাসীর স্ত্রী। আর এতে জেল খাটছেন মসজিদের এক মুয়াজ্জিন। ঘটনাটি গত ২১ ডিসেম্বর রোববার দিবাগত রাত ৪টায় শাহ্রাস্তি উপজেলার চিতোষী পশ্চিম ইউনিয়নের পাথৈর গ্রামে ঘটে।
জানা যায়, ওই গ্রামের দক্ষিণপাড়া খন্দকার বাড়ির প্রবাসী আহসানের স্ত্রী খোদেজা বেগমের ঘরে ঘটনার দিন সিঁদ কেটে চুরি হয়। এ ঘটনায় খোদেজার ছোট ভাই একই গ্রামের মধ্যপাড়া মিয়াজী বাড়ির আবুল কালামের পুত্র মহিন বাদী হয়ে শাহ্রাস্তি মডেল থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন। অভিযোগের আলোকে থানার এসআই বেলায়েত ও এএসআই সুমন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ওই গ্রামের খন্দকার বাড়ির মৃত ফজিল উদ্দিনের পুত্র স্থানীয় বাইতুল মামুর জামে মসজিদের খণ্ডকালীন মুয়াজ্জিন মোহাম্মদ আলী (৪৮) ও একই গ্রামের মৃত নূর মোহাম্মদের পুত্র শহিদ উল্যাহ (৪৩)কে আটক করে থানায় নিয়ে আসেন। ওই সময় তারা মাঠ শ্রমিকের কাজ করছিলেন। আটকের দিন রাতেই বাদীর অভিযোগটি মামলায় রূপ নেয় এবং পরদিন সকালে আটককৃতদের কোর্ট হাজতে প্রেরণ করে শাহ্রাস্তি মডেল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় ওই গ্রামে প্রতিবাদ দানা বেঁধে ওঠে। গ্রামের সকল বয়সী ও শ্রেণীর মানুষের মধ্যে নিন্দার ঝড় ওঠে।
এ ব্যাপারে ওই গ্রামের মৃত আঃ লতিফের পুত্র মফিজুর রহমান (৭৫) জানান, চুরির ঘটনাটি কতটা সত্য জানি না। তবে মামলার ১নং আসামী মোহাম্মদ আলী একজন সৎ লোক ও ধর্মপরায়ণ ব্যক্তি। তিনি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মসজিদে আদায়সহ মসজিদের খণ্ডকালীন মুয়াজ্জিনের দায়িত্ব পালন করতেন। তিনি কখনই এ ধরনের ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িত নন। তাকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে ফাঁসানো হয়েছে। মৃত আবদুস সাত্তার বেপারীর পুত্র আবুল হাশেম (৭২) বলেন, মোহাম্মদ আলী মুয়াজ্জিনের কাজ ছাড়াও মাঝে মধ্যে ইমামতির দায়িত্ব পালন করতেন। তার পেছনে এ গ্রামের শত শত মুসল্লি নামাজ আদায় করতেন। তাকে চুরির ঘটনায় জড়িত করে আহসানের স্ত্রী খোদেজা বেগম তার অপকর্ম ঢাকার অপচেষ্টা করেছেন। পুরো গ্রামবাসীর সাথে আমি এ ঘটনার প্রতিবাদ এবং অনতিবিলম্বে মোহাম্মদ আলীর বেকসুর খালাস কামনা করি। আবু তাহেরের স্ত্রী হাছিনা আক্তার (৩৫) জানান, মোহাম্মদ আলী একজন নিরীহ লোক। তিনি এ গ্রামের সবার স্নেহ ও শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি। খোদেজার চলাফেরায় অসঙ্গতি থাকায় তিনি তাকে ডাক-দোহাই দিতেন। তাকে সামাজিকভাবে ঘায়েল করার জন্য খোদেজা ও তার ভাই মহিন এ পরিকল্পনা করে। চুরির বিষয়টি আদৌ সত্য নয়। পরিকল্পিতভাবে মোহাম্মদ আলী ও শহিদ উল্যাকে ফাঁসানো হয়েছে। প্রবাসীর স্ত্রী খোদেজা বেগমের শাশুড়ি রজ্জবের নেছা (৭২) বলেন, আমার ছোট ছেলে আহসান ১১ বছর যাবৎ সৌদিতে প্রবাস জীবন কাটাচ্ছে। একই গ্রামে ছেলেকে বিয়ে করাই। পুত্রবধূ খোদেজা কখনই আমার বাধ্য ছিলো না। সে তার মনমতো যেখানে-সেখানে আসা যাওয়া করে। এ ব্যাপারে গ্রামের লোকজনের চোখে অপকর্ম ধরা পড়ে তার। চুরির ঘটনাটি পরিকল্পিত। মোহাম্মদ আলী একটি ভালো ছেলে। আমার ছেলেদের তুলনায় সে অনেক ভালো। এ চুরির ঘটনায় তাকে ফাঁসানো হয়েছে। মসজিদের ইমাম হাফেজ মোঃ ছালে আহাম্মদ বলেন, ঘটনার দিন ফজরের নামাজ আমার সাথে মসজিদে আদায় করেন মোহাম্মদ আলী। তিনিই সেদিন ফজরের আযান দেন। অথচ সিঁদ কাটার ঘটনায় জড়িয়ে আজ যারা তাকে জেল খাটাচ্ছে তারা আদতেই মানুষ নয়। আর যারা এমন ঘটনায় ইন্দন অথবা সহযোগিতা করেছেন তারাও এ পাপের শরীক হবেন।
মামলার বাদী মহিন বলেন, ঘটনার দিন রাতে আমি আমার বোনের ঘরে ঘুমোই। ভোর রাতে মামলায় দেয়া আসামীদের সিঁদ কেটে চুরি করতে দেখি। তিনি তাদের কঠোর শাস্তি দাবি করেন। এলাকাবাসী তাদের বক্তব্যে বলেন, শাক দিয়ে মাছ ঢাকার চেষ্টা করছেন খোদেজা বেগম। দশ দিন চোরের আর এক দিন গৃহস্তের।