নিজস্ব প্রতিবেদক: আজ ঐতিহাসিক ৩ এপ্রিল। ১৯৭১ সালের এই দিনে চাঁদপুরের ৪ কৃতী সন্তান কালাম-খালেক-সুশীল-শঙ্কর পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করার জন্যে বোমা তৈরির সময় বোমা বিস্ফোরণে চাঁদপুরে প্রথম শহীদ হন। সে হিসেবে শোকাতুর চাঁদপুরবাসীর কাছে এ দিনটি অবিস্মরণীয়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ভাষণ শেষে সারা দেশের ন্যায় চাঁদপুরেও স¡াধীনতা আন্দোলনের জন্যে ব্যাপক প্রস্তুতি নেয়া হয়। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চের কালো রাত্রিতে বর্বর পাক হানাদার বাহিনী ঘুমন্ত নিরন্ত্র মানুষের ওপর হত্যালীলা চালায় রাজধানী ঢাকায়। বর্বরোচিত লোমহর্ষক ঘটনা তাৎণিক ছড়িয়ে পড়ে সারাদেশে। এরপর থেকে স¡াধীনতা আন্দোলন তীব্র থেকে তীব্রতর হতে থাকে এবং বাঙালিরা সংঘবদ্ধ হয়ে পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করতে প্রতিরোধ গড়ে তোলার পরিকলনা নেয়। দল মত নির্বিশেষে ছাত্র-জনতা এক হয়ে প্রতিরোধের দুর্গ তৈরির পরিকলনায় মেতে ওঠে। এরই মধ্যে পাক হানাদার বাহিনী দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রবেশ করে হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে। তখনো পাক হানাদার বাহিনী চাঁদপুরে প্রবেশ করেনি। তবে নদী ও সড়ক পথে যে কোনো সময় প্রবেশ করতে পারে এ আশঙ্কায় চাঁদপুর মহকুমা শহর ও শহরতলীতে চলতে থাকে ব্যাপক প্রস্তুতি। পাক হানাদার বাহিনীর অস্ত্র বা প্রতিরোধ ব্যবস্থা ছিলো একেবারেই নগণ্য। এ ভেবে সিদ্ধান্ত নেয়া হয় শক্তিশালী বোমা তৈরি করে পাক হানাদার বাহিনীকে মোকাবেলা করতে হবে। সে সিদ্ধান্তনুযায়ী চাঁদপুর সরকারি কলেজের মেধাবী ছাত্র কালাম-খালেক-সুশীলসহ আনোয়ার হোসেন আরিফ নেমে পড়েন বোমা তৈরির কাজে। এদেরকে সহযোগিতার জন্যে এগিয়ে আসলেন চাঁদপুর সরকারি কলেজের রসায়ন ও পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের শিকগণ। ওই ৪ ছাত্রের সহযোগী হিসেবে যোগ দেন রাজশাহী বিশ¡বিদ্যালয়ের ছাত্র দ্বিজেন্দ্র লাল রায়। বোমা তৈরির স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হয় চাঁদপুর ট্রাক রোডের পাওয়ার হাউজের উত্তর পাশের (বর্তমানে গড়ে ওঠা মুক্তিসৌধ স্থান) পোদ্দার বাড়ির চৌচালা টিনশেড ঘরটি। ছোট ওই টিনশেড ঘরে প্রতিদিন ৫/৬ যুবক কী করছে তা’ জানার আগ্রহ নিয়ে লুকিয়ে লুকিয়ে এদের কর্মকাণ্ড দেখছিলেন ওই এলাকার স্কুল ছাত্র শঙ্কর। শঙ্করের আগ্রহ দেখে বোমা তৈরির কাজে থাকা ওই ৫ যুবক তাকেও এই কাজের সহযোগিতার জন্যে নিয়ে নেয়। ১৯৭১ সালের ৩ এপ্রিল বিকেল সাড়ে ৪টায় বিকট শব্দে পুরো মহকুমা শহর চাঁদপুর প্রকম্পিত হয়ে ওঠে। বিকট শব্দ শুনে লোকজন এদিক-সেদিক ছুটাছুটি করতে থাকে। চাঁদপুরবাসীর ধারণা জন্মেছিলো যে, পাক-হানাদার বাহিনী চাঁদপুর প্রবেশ করেছে। এই ভেবে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে ওঠে শহরবাসী। হানাদার বাহিনীর প্রতিরোধকারী ছাত্র সংগঠন নেতৃবৃন্দ ভাবলেন সম্ভবত বোমা তেরি করে পরীা চালানো হচ্ছে। এ ভেবে নেতাদের কেউ কেউ ছুটে এলেন সেই পোদ্দার বাড়ির কাছে। এসেই হতবাক হয়ে গেলেন। যে টিনের ঘরটিতে গত ক’দিন যাবত বোমা তৈরির কাজ চলছিলো সেই ঘরটির নিশানাটুকুও খুঁজে পাওয়া যায়নি। সে সময় ঘরের ভিটায় পড়ে রয়েছে দগ্ধ হওয়া ৫টি লাশ। ওই ৫ জনের মধ্যে শুধু আনোয়ার হোসেন আরিফের কোনোভাবে জ্ঞান রয়েছে। লোকজন দগ হওয়া মুমূর্ষ আরিফ হোসেনকে তাৎণিক এনে সরকারি হাসপাতালে ভর্তি করে। মুহূর্তেই এ দুঃসংবাদটি ছড়িয়ে পড়ে পুরো চাঁদপুরে। এদিনে হাসপাতালের চিকিৎসকদের অক−ান্ত পরিশ্রমে আনোয়ার হোসেন আরিফ প্রাণে বেঁচে গিয়ে যুদ্ধের ক’মাস আত্মগোপন থাকার পর মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেন। ১৯৭১ সালে ৩ এপ্রিল বোমা বিস্ফোরণে শহীদ কালাম-খালেক-সুশীল-শঙ্করের লাশ নিয়ে ছাত্র-জনতা শপথ নেন, তাদের জীবনের বিনিময়ে হলেও এ দেশের স¡াধীনতা ছিনিয়ে আনবো। ৯ মাস মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ পাক হানাদার মুক্ত হয়ে বিজয় লাভ করে এবং স¡াধীনতা সংগামে চাঁদপুরের প্রথম শহীদ হিসেবে কালাম-খালেক-সুশীল-শঙ্করের নাম লিপিবদ্ধ হয়। বোমা বিস্ফোরণে নিহত ও আহত আরিফ ছিলেন সে সময়কার ছাত্র ইউনিয়ন কর্মী। এ উপলে কালাম-খালেক-সুশীল-শঙ্কর স্মৃতি সংসদ চাঁদপুরের উদ্যোগে বিভিন্ন কর্মসূচী গ্রহন করা হয়েছে।
শিরোনাম:
শুক্রবার , ৪ অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিষ্টাব্দ , ১৯ আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
আরও সংবাদ
বিশ্ব ইজতেমায় ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ মালয়েশিয়ান ইবিট লিও
টঙ্গীর তুরাগ তীরে বিশ্ব ইজতেমায় অংশ নেন, মালয়েশিয়ার ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’ ইবিট লিও। বিশ্ব... বিস্তারিত
পেঁয়াজের দাম বাড়ল কেজিতে ২০-৩০ টাকা
দেশে আগাম জাতের মুড়িকাটা পেঁয়াজ এরই মধ্যে ঘরে তুলেছেন কৃষক। মূল মৌসুমের পেঁয়াজ বাজারে আসতে... বিস্তারিত
রমজান মাসে প্রাথমিকে ক্লাশ ১০ দিন, মাধ্যমিকে ১৫…
আগামী রমজান মাসের প্রথম ১০ দিন দেশের সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলো খোলা রাখার সিদ্ধান্ত... বিস্তারিত
পরকীয়ায় নাশ সংসার
দেশে বিয়ের হার বৃদ্ধির পাশাপাশি বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাকও বেড়েছে। বিবাহবিচ্ছেদের প্রধান দুটি... বিস্তারিত
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।