বিশেষ প্রতিনিধি :নৈসর্গিক রূপ, কল্পচিত্রণ, মানুষের বিচিত্র চিন্তা-চেতনা ভাষাবদ্ধ করা দুরূহ বিষয়। আর পৃথিবীর গণিতশাস্ত্র, ব্যাকরণ, নীতিহীন রাজনীতি, রাষ্ট্র পরিচালনা সম্ভবত কঠিনতর কাজ। কিন্তু মানুষের হৃদয় যে এক বিশাল ক্যানভাস। আর এই হৃদয়, মা-মাটি-মানুষ নিয়েই আমার জন্মভ‚মি বাংলাদেশ। বাংলাদেশের চাঁদপুর জেলার (১৯৭১-এ তৎকালীন মহকুমা) হাজীগঞ্জ থানার ১ নং রাজারগাঁও ইউনিয়নে কৃষক পরিবারেই আমি জন্মেছি ১৯৪৭ সালে, মেঘনা পাড়ের সন্তান হিসেবে। এই বাংলাদেশের (জন্ম) স্বাধীনতা সংগ্রাম এবং মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস, বাঙালি জাতির জন্য সবচাইতে গর্বিত এবং বিশাল গৌরবোজ্জ্বল ক্যানভাস। ‘মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুর’ নিয়ে আমাকে কিছু লেখার কথা বলা হয়েছে অনেকবার। কিন্তু লিখতে পারিনি রাজনৈতিক প্রতিক‚লতার কারণে আরো বিভিন্ন কারণে। এবার জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কমান্ডার, জেলা প্রশাসনসহ অনেকেই বলেছেন একটু কিছু লিখতে, তাই তাদের সম্মানে অত্যন্ত স্বল্পবৃত্তে লিখছি মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের কিছু কথা।
মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরের মুক্তিযোদ্ধাদের থাকা-খাওয়া সার্বিক ব্যবস্থাপনার দায়িত্বে ছিলেন তৎকালীন আওয়ামী লীগ নেতা শ্রদ্ধাভাজন আব্দুর রব মিয়া, আব্দুল করিম পাটওয়ারী এমপিএ, এডভোকেট সিরাজুল ইসলাম এমপিএ, রাজা মিঞা পাটওয়ারী এমপিএ, গোলাম মোর্শেদ ফারুকী এমপিএ, ফ্লাইট ল্যা. (অব.) এবি সিদ্দিক এমপিএ, ডা. আব্দুস সাত্তার এমপিএ। এমএনএদের মধ্যে শ্রদ্ধাভাজন মিজানুর রহমান চৌধুরী, এমএনএ, নাওজোয়ান ওয়ালিউল্লাহ এমএনএ, এডভোকেট এম এ আউয়াল এমএনএ, অধ্যাপক হাফেজ হাবিবুর রহমান এমএনএ (অধ্যাপক হাফেজ হাবিবুর রহমান সাহেব পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর কাছে আটক হয়ে যান) প্রাথমিক পর্যায় থেকে সর্বদলীয় সংগ্রাম পরিষদের দায়িত্ব শেষ পর্যন্ত যারা পালন করেছেন তাদের মধ্যে আরো আছেন এড. আবু জাফর মাঈন উদ্দিন, অধ্যাপক রিয়াছত আলী মোল্লা, বাবু জীবন কানাই চক্রবর্তী স্যার, আবদুর রব বিএসসি, সুজায়েত আলী মুন্সি, মোহাম্মদ ওয়ারিশ পাটওয়ারী বিএম, কলিম উল্লাহ ভূঁইয়া, খোরশেদ আলম ডাক্তার, আব্দুল মান্নান বিএসসি, আলী আহাম্মদ চেয়ারম্যান, আবুল ফারাহ, আব্দুল কাদের মাস্টার, হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী, মনির উল্লাহ বিএসসি, চারণ কবি শামসুল হক, আলতাব হোসেন শেখ, বাবু রণজিৎ রায় চৌধুরী (বলাই বাবু), তোফাজ্জল হায়দার চৌধুরী (নসু চৌধুরী), ডাক্তার বদরুন নাহার, ডা. চন্দ্র মোহন লোধ, আব্দুর রব পাটওয়ারীসহ আরো অনেক নাম। এদের মধ্যে আবার অনেকেই সরাসরি অস্ত্র হাতে নিয়ে যুদ্ধ করেছেন, আবার অনেকেই ভারত চলে গেছেন।
আমাদের চাঁদপুরের মুক্তিযুদ্ধে : বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ইপিআর, নেভি, এয়াফোর্স, পুলিশ আনসার সমন্বয়ে গঠিত বাহিনীকে নিয়ন্ত্রণ করতেন যথাক্রমে তৎকালীন (১) সুবেদার (আনসারি ক্যাপ্টেন) জহিরুল হক পাঠান, টি জে, (২) এয়ারফোর্স থেকে আর্মিতে কনভার্টেড হয়ে আসা ইয়াং লেফটেন্যান্ট এম এ ওয়াদুদ (যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার), (৩) নেভির পেটি অফিসার জয়নাল আবেদীন চৌধুরী (নেভির পেটি অফিসার জয়নাল আবেদীন চৌধুরী অনৈতিক কাজের কারণে যুদ্ধ চলাকালীন সেপ্টে¤^র মাসের দিকে তিনি ২ নং সেক্টরে ক্লোজড হন) এরা সরাসরি ২ নং সেক্টরের অধীনেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। তেমনি আবার ছাত্র-যুবকদের নিয়ে সংগঠিত মুক্তিযোদ্ধা এফ এফ বাহিনী ছিল। যারা সরাসরি ২ নং সেক্টরের অধীনে মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। এই এফ এফ বাহিনীর অধিনায়কদের মধ্যে অনেকেই ছিলেন তৎকালীন ছাত্রনেতা খালেকুজ্জামান ভূঁইয়া, খান মোহাম্মদ বেলায়েত হোসেন খান, আনোয়ার হোসেন মজুমদার, আবুল কালাম আজাদ পাটওয়ারী (স্বাধীন বাংলা ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের প্রথম সারির কর্মী), শাহ মোঃ মহিউদ্দিন দুলু, মজিবুর রহমান মজুমদার, বেলায়েত হোসেন পাটওয়ারী, আবদুর রশিদ পাঠান, মিয়া মোঃ জাহাঙ্গীর, (মিয়া মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর অনৈতিক কাজের কারণে ২ নং সেক্টর ক্লোজড হন), কবির আহম্মেদ খান, আবদুর রব, শাহ মোঃ মামদুদ হোসেন জমদূত, নারায়ণ চন্দ্র দাস, বহরীর রতন, ফরহাদ হোসেন রতন, আবুল খায়ের, আবুল খায়ের তরফদার, মজিবুর রহমান আর্টিলারী, শহীদ উল্লাহ তপাদার। এ ছাড়া বিএলএফের চাঁদপুরের কমান্ডে ছিলেন : রবিউল আউয়াল কিরণ, খোরশেদ আলম বাচ্চু, আবদুর মমিন খান মাখন, জহিরউদ্দিন মোঃ বাবর, শহীদ জাবেদ, ওহিদুর রহমান, আব্দুল খালেক, হানিফ পাটওয়ারী, মোহাম্মদ হাতেম আলী, সৈয়দ আবেদ মনসুর, মোহন সিরাজ। ছাত্র ইউনিয়নের স্পেশাল গেরিলা মুক্তিযোদ্ধা ফজলুল হক সরকার, আবদুর রহমানসহ অনেকেই মুক্তিযুদ্ধ করেছেন।
এ ছাড়াও নৌকমান্ডো মমিন উল্লাহ পাটওয়ারী, শাহজাহান কবিরসহ অনেকেই যুদ্ধ করেছেন। এর বাইরেও সেকশন কমান্ডার, প্লাটুন কমান্ডার, কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে অনেক মুক্তিযোদ্ধা মুক্তিযুদ্ধ করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের কথা লিখতে হলে অবশ্যই মুক্তিযুদ্ধের একটু আগের কথা আমাদের লিখতে হবে। যেমন : মুক্তিযুদ্ধ আমরা করেছি একটি স্বাধীন সার্বভৌম, অসাম্প্রদায়িক রাষ্ট্রের জন্য। কিন্তু জাতীয় স্বাধীনতা রাষ্ট্রীয় সাফল্যই হচ্ছে বিশাল অর্জন। এ বিশাল অর্জনের জন্য নেতৃত্ব দেয়া জাতীয় জীবনে দূর দৃষ্টি সম্পন্ন নেতার দরকার হয়, তেমনি আদর্শবান ও একজন দেশপ্রেমিক জীবন উৎসর্গকারী জাতীয় নেতার অত্যাবশ্যক হয়ে ওঠে পৃথিবীর যতোগুলো দেশ স্বাধীন হয়েছে তাদের প্রত্যেকের জন্যই। যেমন- লেনিন, আব্রাহাম লিংকন, মাও-সে-তুঙ, মহাত্মা গান্ধী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ফ্রিদেল ক্যাস্ট্রো, ড. সুকর্ন, হো-চি-মিন, আলেন্দে, ক্যান্ট, মার্টিন লুথার কিং, বাঁগস হেগেল, কোঁথে, মিল, কার্ল মার্কস, গৌর্কি, চেগুয়েভারা, এঙ্গেলস এরা পৃথিবীতে প্রত্যেকেই নিজ নিজ দেশের জন্য, জাতির জন্য সংকল্পবদ্ধ হয়ে আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়ে নিজের জীবন বিসর্জন দিয়ে দেশ ও জাতির চিন্তা করেছেন, দেশ ও জাতির কল্যাণ করেছেন। তখনই কেবলমাত্র তিনি জাতীয় নেতাতে পরিণত হয়েছেন। আশ্চর্যজনক হলেও সত্য যে, শত শত কোটি মানুষের মধ্যে কতোজনই হয়েছে এরকম বরেণ্য ব্যক্তিত্ব, যাদের ব্যক্তি নামের গুণে দেশটিকে সমগ্র পৃথিবী চিনে ও জানে এবং সম্মান করে। পৃথিবীর বরেণ্য ব্যক্তিদের অনেকেই নিজ নিজ দেশের স্বাধীনতা অর্জনে দেশসেবায় শিল্প-সাহিত্যে বিজ্ঞানে পরিচিত ব্যক্তিত্ব এবং উজ্জ্বল নক্ষত্র। অথচ এসব পৃথিবী বরেণ্য ব্যক্তিত্ব প্রচণ্ডভাবে আত্মবিশ্বাসে অটল ছিলেন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধের জাগানিয়া স্মৃতির গানগুলো বাঙালিকে আজো ১৯৭১-এ যেমনিভাবে ফিরিয়ে নিয়ে যায়, তেমনি আবার ৫০-৬০ দশকের গানগুলোও মানুষের মনকে আজো আলোড়িত করে।
৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের প্রেরণা শক্তি হতেই আমাদের ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের ২ নং ব্যাটালিয়নের (তৎকালীন গাজীপুরে অবস্থিত) সৈনিকেরা তৎকালীন ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর কে এম সফিউল্লার নেতৃত্বে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বিরুদ্ধে বিদ্রোহের সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছিল ১৯ মার্চ ১৯৭১-এ জয়দেবপুরে। অবশেষে ২৫ মার্চ রাত ১২টা ০১ মিনিটের মধ্যেই বাঙালি জাতি পাকিস্তান হানাদার বাহিনী কর্তৃক আক্রান্ত হলে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা দিতে বাধ্য হন। মুক্তিযুদ্ধে চাঁদপুরে যেমন হাজার হাজার জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধার জন্মভূমি, তেমনি আবার কিছু অসভ্য পাকিস্তানিদের দালাল হিসেবে অগ্নিসংযোগ, হত্যা, ধর্ষণ, লুটপাট, রাহাজানিতে ব্যস্ত ছিল। তাদের মধ্যে অন্যতম : রাজাকার কমান্ডার লোকমান হোসেন বাচ্চু টোরাগর, আব্দুল বারি টোরাগর, রাজাকার কমান্ডার বাচ্চু মিয়া বেপারি, রাজাকার কমান্ডার ভিপি হারুন অর রশিদ, রাজাকার কমান্ডার আব্দুর রাজ্জাক, রাজাকার কমান্ডার শাহ মোহাম্মদ আলম শাহজাদা। আলবদর কমান্ডার মওলানা সেফায়েত উল্লা, মুসলিম মওলানা, শহীদ উল্লাহ, ইমরান হোসেন, ইলিয়াস আহম্মেদ প্রমুখ। এছাড়া পাকিস্তানিদের সার্বিক সহযোগিতা নামে অশান্তির নামে শান্তি কমিটিতে যারা ছিলেন তারা হচ্ছেন : পাকিস্তানিদের দালাল মওলানা আব্দুল মান্নান, মওলানা আব্দুর রহিম, মওলানা হাবিবুল্লাহ, ক্বারি মোঃ আব্দুর রহিম, আব্দুস সালাম মোক্তার, হাবিবুল্লা চোকদার, লতিফ খন্দকার, মীর আব্দুর রাজ্জাক, নাছির উদ্দিন ভূঁইয়া, আনোয়ার হোসেন মিঞা, কেরামত আলী মিয়া, আলী আহম্মদ (গাজাঘরের আলী আহম্মদ) সহ অনেক অনেক দালাল ছিল। অনেক শত শত বাধাবিপত্তি সত্তে¡ও মেঘনা পাড়ের শ্রেষ্ঠ সন্তানরা জাতীয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা পাকিস্তানি মেজর জেনারেল আব্দুর রহিমের সেনাবাহিনীকে হিট এন্ড রান পলিসির মাধ্যমে সর্বদা ব্যস্ত রেখেছিল। এমনকি অনেক বেশি সময়েই সম্মুখ যুদ্ধ হয়েছে ৩৮-৩৯টির মতো। যে সমস্ত গ্রামে, স্থানে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে আমরা মুক্তিযোদ্ধারা যুদ্ধ করেছি এবং যুদ্ধগুলো সংঘটিত হয়েছিল যেসব স্থানে, ঐসব স্থানের এবং গ্রামের নাম অনুযায়ী আমি মাত্র কয়েকটি যুদ্ধের নাম উল্লেখ করছি।
১. চাষী আলী যুদ্ধ, ২. পাইকপাড়ার যুদ্ধ, ৩. কালির বাজারের যুদ্ধ, ৪. গল্লাক বাজারের যুদ্ধ, ৫. রূপসার যুদ্ধ, ৬. রঘুনাথপুর বাজারের যুদ্ধ, ৭. লাকমারার যুদ্ধ, ৮. বলাখালের যুদ্ধ, ৯. মহাময়াবাজারের পূর্বদিকের জমজমিয়া ব্রিজ ডেমোলেশান এন্ড ফায়ারের যুদ্ধ, ১০. কালিয়াতলার যুদ্ধ, ১১. পানিয়ালার যুদ্ধ, ১২. উঘারিয়ার যুদ্ধ, ১৩. সূচীপাড়ার যুদ্ধ, ১৪. ঠাকুর বাজারের যুদ্ধ, ১৫. নরিংপুরের যুদ্ধ, ১৬. গন্ধবপুরের যুদ্ধ, ১৭. বাবুরহাটের যুদ্ধ, ১৮. গোয়ালমারীর যুদ্ধ, ১৯. ঘোগার যুদ্ধ, ২০. ফুলচোয়ার যুদ্ধ, ২১. নাগদার যুদ্ধ, ২২. চেঙ্গাচরের যুদ্ধ, ২৩. কচুয়া থানা আক্রমণের যুদ্ধ, ২৪. মহনপুরের যুদ্ধ, ২৫. গজারিয়া মতলবের মাঝামাঝি মধ্যনদীতে যুদ্ধ, ২৬. চরাচ্ছরের যুদ্ধ, ২৭. মেহের স্টেশনের যুদ্ধ, ২৮. মেহার কালীবাড়ীর যুদ্ধ, ২৯. পুরানবাজারের যুদ্ধ, ৩০. অবশেষ ত্রিমুখী আক্রমণে চাঁদপুরের যুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর পতন ঘটে ১৯৭১ ইংরেজি সালের ৭ ডিসে¤^র রাতভর যুদ্ধ চলে অগ্রাভিজানের ভিত্তিতে অবশেষে ভোর ৫টায় অর্থাৎ ৮ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে চাঁদপুর পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত হয়। অবশেষে যুদ্ধে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের পূর্বাঞ্চলে সেনাবাহিনী অধিনায়ক লে. জেনারেল আমির আবদুল্লা খাঁন নিয়াজি ৯৩ হাজার হানাদার পাকিস্তানি সেনা সদস্যসহ (সঙ্গে বাঙালি ৩৮ জন আর্মি অফিসার লে./ক্যাপ্টেন র্যাঙ্কের যারা যুদ্ধাপরাধী) বিকেল ৪-৩১ (চারটা একত্রিশ ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং আমাদের বাংলাদেশ মুক্তিবাহিনীর কাছে) অর্থাৎ যৌথ/মিত্র বাহিনীর কাছ নিঃশর্তভাবে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। ১৯৭১-এর ১৬ ডিসেম্বর থেকেই বিজয়ের গৌরব নিয়ে আমরা বাঙালিরা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ বীরের জাতি হিসেবে গৌরবগাথা ইতিহাস নিয়ে আজো বেঁচে আছি। অমর হয়ে থাকবে বাঙালির মহান মুক্তিযুদ্ধের বিজয়ের গৌরবের ঐতিহাসিক কাহিনী।
এখানে একটি কথা অবশ্যই উল্লেখ করা প্রয়োজন, আমাদের চাঁদপুরের মেঘনা পাড়ের বাঙালি মা ও বোনেরা, বাবা-ভাইরা আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদেরকে সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছেন। এ ছাড়াও পাকিস্তান হানাদার বাহিনী এখানে হাজার হাজার ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়েছে, সম্পদ লুটপাট করেছে এমনকি হাজার হাজার নারী ধর্ষণ করেছে এবং প্রায় ৭০/৮০ হাজার মানুষ হত্যা করেছে এর জন্য দায়ী যেমনই পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী তেমনই বাঙালি রাজাকার, আলবদর, আলশামস ও শান্তি কমিটির লোকেরা। সুতরাং এসব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হওয়া দরকার। মুক্তিযোদ্ধারা জাতীয় বীর, এরা কারো করুণার পাত্র নয়, কিন্তু আমাদের দেশের জলদস্যু, ভ‚মিদস্যু, জাল টাকার ব্যবসায়ী, কালো টাকার মালিক, গলির গুন্ডা-মাস্তান, মাইগ্রেটেড পলিটিসিয়ান্স এ সকল অসভ্য ব্যক্তিদের কারণে এবং রাজনৈতিক দলগুলোর নমিনেশন বাণিজ্যের কারণে, অদূরদর্শিতার কারণে গত ৪০ বছরেও চাঁদপুর থেকে-চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধ করা কোনো মুক্তিযোদ্ধা আজো জাতীয় সংসদ সদস্য হয়নি।
চাঁদপুরে মুক্তিযুদ্ধ করা মুক্তিযোদ্ধারা কেউ ভবিষ্যতে জাতীয় জাতীয় সংসদ সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কেন্দ্রীয় নেতা হবে কিনা জানি না। সকল রাজনৈতিক দল থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বহিষ্কার চাই, মুক্তিযোদ্ধাদের জাতীয় সংসদের মনোনয়ন চাই, জাতীয় রাজনীতিতে এবং জেলার রাজনীতিতে মুক্তিযোদ্ধাদের যথাযথ সম্মানজনক অব¯স্থান চাই। চাঁদপুরসহ সমগ্র বাংলাদেশের মানুষের কল্যাণ চাই। আমি একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এবং আমরা সকল মুক্তিযোদ্ধারাই মহান মুক্তিযুদ্ধে সোভিয়েত ইউনিয়ন এবং ভারতের অবদানকে আজো শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করি। আমাদের নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস বিকৃতিকারীদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবার আহবান করছি। নতুন প্রজন্মই আবারো নতুন করে স্লোগান ধরতে- ১. বাংলাদেশের আজব চিজ-জিয়ার কাঁধে শাহ আজিজ। ২. বাংলাদেশের পাপাচার খালেদা জিয়ার সাথে যুদ্ধাপরাধী আর রাজাকার। আমাদের ৫৬ হাজার বর্গমাইলের মধ্যে যে কোনো যুদ্ধাপরাধীদের প্রশ্রয়দাতাকে নতুন প্রজন্মই পারে উত্তম-মাধ্যম দিয়ে ঘৃণা-থু-থু দিয়ে শিক্ষা দিতে, প্রত্যাখ্যান করতে। আমাদের মুক্তিযোদ্ধাদের রক্তেভেজা মাটিতে ৩০ লাখ শহীদের রক্তেভেজা মাটিতে প্রায় ৪ (চার) লাখ ধর্ষিত মা-বোনের মাটিতে কোনো যুদ্ধাপরাধীকে প্রশ্রয়দানকারীকে তাদের রাজনৈতিক দলকে সমর্থন না করার জন্য সবিনয় অনুরোধ করছি সকল সাংবাদিক, সুশীল সমাজ, বুদ্ধিজীবী ও নতুন প্রজন্মকে। সঙ্গে সঙ্গে অনুরোধ করছি ঘৃণা করুন মাইগ্রেটেড রাজনীতিবিদ আর পরজীবীদের, এরা না ঘরকা-না-ঘাটকা। অমর হোক আমার দেশ, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত জন্মভ‚মি বাংলাদেশ। জয় বাংলা। জয় বঙ্গবন্ধু ।