কুমিল্লা-২ (তিতাস) জাপা নেতা আমীর হোসেন
মোহাম্মদ আমীর হোসেন। পেশায় মুদি দোকানি। বছরে আয় আড়াই লাখ টাকা। ব্যয় করেন এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। নিজ এলাকা কুমিল্লা জেলার তিতাস উপজেলার কড়িকান্দি গ্রামেও তাঁর খুব একটা পরিচিতি নেই। মুদি দোকান চালান রাজধানী ঢাকার উত্তরায়।
সেই আমীর হোসেনই এখন তিতাসে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। তিনি এখন বেসরকারিভাবে নির্বাচিত সংসদ সদস্য (এমপি)। কুমিল্লা-২ (তিতাস) আসনে তাঁর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী না থাকায় আমীর হোসেন ইতিমধ্যেই বেসরকারিভাবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে গেছেন! আমীর হোসেন এমপি হওয়ার খবরে উপজেলাবাসী তো বটেই তাঁর গ্রাম কড়িকান্দির মানুষও বিস্মিত। তিতাস উপজেলার কড়িকান্দি গ্রামের আবদুল মতিন ভূঁইয়ার ছেলে মো. আমীর হোসেন ভূঁইয়া ১৯৯৪ সালে এসএসসি পাস করে জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। ২০১০ সালে তিতাস উপজেলার জাতীয় পার্টি সভাপতি নির্বাচিত হয়ে পার্টির হাল ধরেন। ব্যবসার কাজে ঢাকায় অবস্থান করায় এলাকায় তেমন কোনো পরিচিতি নেই তাঁর। তার পরও জাতীয় পার্টির রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত থাকার সুবাদে দলের মনোনয়নের জন্য লবিং করেন।
এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কাছ থেকে আরো জানা যায়, আমীর হোসেনের সবচেয়ে বড় ‘যোগ্যতা’ তিনি ছাত্রসমাজ কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতির খালাতো ভাই। একই সঙ্গে তিনি জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের স্ত্রী ও পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার রওশন এরশাদকে মা বলে ডেকেছেন। আর এ কারণেই আওয়ামী লীগ নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমানের মতো তুখোড় প্রার্র্থীকে সরিয়ে আসনটি জাতীয় পার্টির আমীর হোসেনকে ছেড়ে দেওয়া হয়। এ অবস্থায় মুজিবুর রহমান মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করলে একক প্রার্থী হিসেবে থেকে যান তিতাস উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ আমীর হোসেন।
হলফনামা থেকে জানা যায়, আমীর হোসেন এবারের নির্বাচনে আড়াই লাখ টাকা ব্যয় করবেন, যা তাঁর এক বছরের আয়ের সমান। এসএসসি পাস আমীর হোসেন ঢাকার উত্তরার জামান কনফেকশনারির মালিক বলে উল্লেখ করেছেন হলফনামার আয়কর বিবরণীতে। তাঁর কাছে নগদ আছে ১৫ লাখ টাকা। তিনি ১৫ শতাংশ কৃষিজমির মালিক।
এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমীর হোসেন দীর্ঘ সময় প্রবাসে কাটিয়েছেন। প্রবাস থেকে এসে ঢাকায় মুদি দোকান খোলেন (হলফনামায় যেটি কনফেকশনারি হিসেবে উল্লেখ আছে)। হঠাৎ করেই তিনি জাতীয় পার্টির উপজেলা সভাপতি বনে যান। তবে তিনি কখনো সংসদ সদস্য নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন, এমন ধারণা ঘুণাক্ষরেও করেনি এলাকার মানুষ।
কড়িকান্দি গ্রামের বাসিন্দা সমাজসেবক সামছুদ্দিন সাগর মুন্সী বলেন, ‘জাতীয় পার্টির হবু এমপি আমীর হোসেন আমার গ্রামের বাসিন্দা হলেও এলাকায় তেমন পরিচিত নন। তবে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় দশম সংসদের এমপি নির্বাচিত হওয়ায় এখন সবার মুখে মুখে আমীর হোসেনের নাম।’
এ ব্যাপারে তিতাস উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্যসচিব মো. মহসিন ভূঁইয়া বলেন, তিনবারের আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেও বিপুল ভোটে নির্বাচিত হতেন। দলের নির্দেশে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থিতা প্রত্যাহার করায় জাতীয় পার্টির তরুণ নেতা মো. আমীর হোসেন ভূঁইয়া বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় এমপি নির্বাচিত হন। এটাকে বলে ‘ভাগ্যের লিখন’।
তিতাস ও হোমনা উপজেলা আওয়ামী লীগের তিনবারের মনোনীত প্রার্থী অধ্যক্ষ আবদুল মজিদ বলেন, ‘নেত্রী আমাকে মনোনয়ন দিয়েছিলেন। আবার দলের নির্দেশে আমি মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করে নিয়ে জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে ছাড় দিয়েছি। দলের নির্দেশেই সব নেতা-কর্মীকে ছাড় দিতে হয়েছে।’