ফরিদগঞ্জ উপজেলার মধ্য মদনা গ্রামের মোস্তফা গাজীর মেয়ে মুন্নী বেগম হত্যা মামলার ২ বছর পেরিয়ে গেলেও গ্রেফতার হয়নি মামলার ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী স্বামী মোঃ আব্দুল হালিম (৩৭)। মুন্নীর মা পিয়ারা বেগমের অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শেষে ২০১৩ সালের ২৫ জুলাই আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে আদালত এই গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি করে। কিন্তু গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর মুন্নীর ঘাতক স্বামী প্রকাশ্যে দিবালোকে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। পুলিশের রহস্যজনক ভূমিকায় ন্যায় বিচার থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বাদী পক্ষ। একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে বর্তমানে আসামী আব্দুল হালিম ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির জোনাল অফিসের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত আছে। এই মামলার অন্য আসামীরা হলো ঃ আব্দুল হালিমের পিতা মালেক বিশ্বাস ও তার ভাই আবদুল হাকিম।
মামলার অভিযোগের ভিত্তিতে জানা যায়, ২০১২ সালের ২২ ডিসেম্বর শনিবার ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার ঘাটুরায় পল্লীবিদ্যুতের এফটাইপটু ভবনের কোয়ার্টার বাসায় মুন্নী বেগমকে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে মুন্নীর স্বামী আব্দুল হালিম। মূলত সরূপা নামের এক নারীর সাথে পরকীয়ার জেরে আব্দুল হালিম মুন্নীকে হত্যা করে। মুন্নীকে হত্যার কয়েক মাসের মধ্যে সরূপাকে বিয়ে করে হালিম। উল্লেখ্য, আব্দুল হালিম যশোরের শর্শা উপজেলার শালকোনা গ্রামের মালেক বিশ্বাসের ছেলে। কর্মসূত্রে সে ব্রাক্ষণ বাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা পল্লীবিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান হিসেবে কর্মরত ছিলো। হত্যাকা-ের ৬ বছর পূর্বে মুন্নি বেগমের সাথে পারিবারিকভাবে বিয়ে হয় আব্দুল হালিমের।
নিহত মুন্নী বেগমের একমাত্র সন্তান সুহানের বয়স এখন সাড়ে ৪ বছর। মায়ের মৃত্যুর সময় শিশু সুহানের বয়স ছিলো আড়াই বছর। সে কাছ থেকে দেখেছে তার পাষ- বাবা কিভাবে তার মাকে হত্যা করেছে। মুন্নী বেগমকে হত্যার পর এবার হালিম চেষ্টা করছে জোর করে শিশুটিকেও নিয়ে যেতে। কারণ, সে আদালতে হত্যাকা-ের ঘটনার সাক্ষী দিয়েছে আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে। কিন্তু শিশুটি কোনোভাবেই যেতে রাজি নয়। সুহান তার নানা-নানীর সাথে থাকতে চায় বলে জানায় এ প্রতিনিধিকে। গতকাল ফরিদগঞ্জের মদনা গ্রামের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, শিশু সুহান মায়ের সাথে তোলা ছবি বুকে আঁকড়ে ধরে আছে। এসময় মুন্নীর মা পিয়ারা বেগম ও শিশু সুহান কান্নাজড়িত কণ্ঠে বর্ননা করেন কি নির্মমভাবে মুন্নী বেগমকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর বিচারের নামে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলো তাদের নিয়ে কি ধরনের প্রহসনের খেলায় মেতেছে। তারা এ হত্যাকা-ের সুষ্ঠু বিচার দাবি করে।
এ সর্ম্পকে আব্দুল হালিমের বক্তব্য নেয়ার জন্য তার ব্যবহৃত একাধিক মোবাইল নাম্বারে চেষ্টা করেও বক্তব্য পাওয়া যায়নি। সংশ্লিষ্ট থানা পুলিশ জানায়, হালিমকে খুঁজে পাওয়া যচ্ছে না। তাই তাকে গ্রেফতার করা সম্ভব হচ্ছে না।
এ সর্ম্পকে হালিমের কর্মস্থল ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার নবীনগর উপজেলা পল্লীবিদ্যুত সমিতির জোনাল অফিসের ডিজিএম এ প্রতিনিধিকে বলেন, আব্দুল হালিম নামে কোন লাইনম্যান আমাদের অফিসে কাজ করে না। আপনি প্রয়োজনে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এজিএম-এর সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
এ সর্ম্পকে পল্লীবিদ্যুৎ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার এজিএম আজিজুর রহমান বলেন, আমাদের নবীনগর জোনাল অফিসে আব্দুল হালিম নামে একজন লাইনম্যান কর্মরত আছে। আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারি আছে জানানো হলে তিনি বলেন, আইনী ব্যবস্থা নেয়ার ক্ষেত্রে যে কোন সহযোগিতা করতে তিনি প্রস্তুত।
তৎকালীন মামলার আইনজীবি দোলনারা বেগম এ প্রতিনিধিকে জানান, ইতোমধ্যে আদালত আব্দুল হালিমকে গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছে। কিন্তু পুলিশ তাকে গ্রেফতার করছে না। এসর্ম্পকে মামলার পিপি ভালো বলতে পারবে।
মামলার সরকারি কৌশলী বাশার এ প্রতিনিধিকে জানান, আব্দুল হালিমের বিরুদ্ধে ওয়ারেন্ট হওয়ার পর তাকে পল্লীবিদ্যুতের চাকুরী থেকে অব্যাহতি দেয় কর্তৃপক্ষ। এরপর থেকে আসামী পলাতক রয়েছে। বর্তমানে পল্লী বিদ্যুতে কর্মরত আছে এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আসামীর অবস্থান সনাক্ত করা গেলে তাকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে। ওই মামলার তৎকালীন তদন্ত কর্মকর্তা এস আই তৌফিক বলেন, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট আনুসারে মুন্নী বেগমকে ফাঁসিতে ঝুঁলিয়ে হত্যা করা হয়েছিলো। ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, ওয়ারেন্টভূক্ত আসামী আব্দুল হালিমের অবস্থান সনাক্ত করা গেলে তাকে গ্রেফতারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
– See more at: https://www.chandpur-barta.com/last-page/2015/02/20/27805#sthash.cLM0YbTN.dpuf
শিরোনাম:
সোমবার , ১৯ মে, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৫ জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।