মতলব উত্তর: মতলব উত্তরে অসময়ে ব্যাপক হারে মেঘনার ভাঙ্গন দেখা দিয়েছে। উপজেলার জহিরাবাদ, ফরাজীকান্দি ইউনিয়নের প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার বহু ফসলী জমি ও গাছপালা ইতোমধ্যে নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। দিশেহারা হয়ে পড়েছে নদী তীরবর্তী এলাকার কৃষক।
জানা যায়, গত কয়েকদিন ধরে মতলব উত্তর উপজেলার প্রায় ৩ কিলোমিটার এলাকার শত শত বিঘা ফসলি জমি ( মরিচ, তিল, ভুট্টা, ধান, পাট ও গাছপালা) আচমকা মেঘনার ভাঙ্গনে নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। ফলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে এলাকার দুই শতাধিক কৃষক। এছাড়া হুমকির মুখে রয়েছে দেড় শতাধিক পরিবার। এতে জহিরাবাদ ও ফরাজীকান্দির দেড় শতাধিক পরিবারের প্রতিটি মুহূর্ত কাটছে আতঙ্কে।
গত কয়েক দিন ধরে মেঘনার আচমকা ভাঙ্গন ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এভাবে মেঘনার ভাঙ্গন অব্যাহত থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ড ও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এখনো কোনা পদক্ষেপ গ্রহণ করেননি বলে অভিযোগ করেছেন নদী তীরবর্তী মানুষ। তাদের অভিযোগ জহিরাবাদ-জয়পুর এলাকায় নদী শাসন করার জন্য ব্লক বাঁধ নির্মাণ করার জন্য বিভিন্ন সময় দাবি উঠলেও আজ পর্যন্ত কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। গত কয়েক বছরে ওইসব এলাকার কয়েক হাজার বিঘা আবাদি জমি নদীতে বিলীন হয়ে গেছে ।
সোমবার সরেজমিনে জানা যায়, মেঘনার তীরবর্তী কালু বেপারী ৫ বিঘা, নজরুল ১০ বিঘা, কামাল মাঝির ৬ বিঘা, জলিল ও মহসিন দু’ভায়ের ২০ বিঘাসহ ওই এলাকার নদী তীরবর্তী প্রায় শতাধিক বিঘার ফসলী জমি ইতোমধ্যেই নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
স্থানীয়রা জানান, ভাঙ্গন কবলিত এলাকায় জরুরিভাবে বাঁধ নির্মাণ কিংবা ইটÑপাথর ভর্তি বস্তা ফেলে ভাঙ্গন রোধে ব্যবস্থা না হলে জনবহুল নাওভাঙ্গা জয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়সহ জহিরাবাদ ইউনিয়ন ও ফরাজকিান্দি মানচিত্র থেকে মুছে যাবে বলে আশংকা করছেন অভিজ্ঞ মহল।
নাওভাঙ্গা জয়পুর উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আবদুল হান্নান জানান, যে সময়ে অনেকটা নীরব থাকে সে সময়ে এভাবে আচমকা নদী ভাঙ্গন হওয়া অবিশ্বাস্য। কিন্তু গত বছরও এভাবেই ভেঙ্গেছিল এবারো নদী তীরবর্তী বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ভাঙ্গনের এই দৃশ্য সহ্য করার মতো নয়।
ঐ এলাকার মোঃ আমান উল্লাহ বলেন, আমার জীবনে গত দুই বছরের মতো ভাঙ্গন এইভাবে নদীর পাড় ভাঙ্গতে দেখিনি প্রায় ৩ থেকে ৫ কাঠা এলাকা ফাটল ধরে নিমিষেই নদীতে বিলীন চলে যাচ্ছে।
ঐ এলাকার কৃষক নজরুল জানান, আমার এ পর্যন্ত ১০ বিঘা জমি ভেঙ্গে বিলীন হয়েছে। তাছাড়া ঐ এলাকায় প্রায় ৫০ জন ব্যক্তি ভাঙ্গনের শিকার হয়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। তাতে সরকার আমাদের জন্য কি করবে? আমরা তো ধীরে ধীরে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছি। যারা এই কবলে পড়েনি তারা যাতে ভালভাবে বসবাস করতে পারে, ভাঙ্গনের কবল থেকে রক্ষা পায় তাদের সুব্যবস্থা গ্রহণ করুক সরকার। না দেখলে বিশ্বাস করার মতো নয়। পানি উন্নয়ন বোর্ড, স্থানীয় এমপি ও সংশ্লিষ্টরা বিভিন্ন সময়ের দেয়া প্রতিশ্র“তি বাস্তবায়ন করলে আজ আর শত শত কৃষক অসময়ে নদী ভাঙ্গনে সর্বশান্ত হতো না।
জহিরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান আলী আক্কাস বাদল ও জহিরাবাদ ইউনিয়নের চেয়ারম্যান দেলোয়ার হোসেন বলেন, নদী ভাঙ্গনের বিষয়টি স্থানীয় সংসদ সদস্য ও প্রশাসনকে জানানো হয়েছে। তবে নদী ভাঙ্গন রোধে জরুরি পদক্ষেপ না নিলে আরও অনেক জমিসহ অরক্ষিত এলাকা নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে।
এই ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু আলী মোঃ সাজ্জাদ হোসেন বলেন, এই ভয়াবহ ভাঙ্গনের কথাও আমাকে কেউ জানায়নি। আমি সরেজমিনে গিয়ে দেখবো এবং আমার উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবো।
নদীর ভাঙ্গনে গ্রাম, ঘরবাড়ি, বাজার, স্কুল, মসজিদ, মন্দির, ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। উপজেলার কয়েকটি গ্রামের কয়েকশ’ পরিবার নদী ভাঙ্গনে হুমকির মুখে রয়েছে। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে এখানকার মানচিত্র অনেকটা পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে। নদীর পাড় সংলগ্ন বসবাসকারী কয়েকশ’ পরিবার বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়ে অনেক আগেই অন্যত্র পাড়ি জমিয়েছে। প্রতিদিনই নদীর পাড় ভেঙ্গে পড়ার শব্দে এখানকার মানুষ আতংকিত হয়ে উঠে। গত ১০ বছরে এ অঞ্চলের শতাধিক পরিবার বসতভিটা ও ফসলি জমি হারিয়েছে নদী ভাঙ্গনের কারণে। নদী ভাঙ্গন রোধ করা না হলে মানুষ আরো ভয়াবহ ক্ষতির সম্মুখীন হবে। এলাকার বহু বিত্তবানও ভিটেমাটি হারিয়ে রাস্তায় নেমেছেন।
তারা বলেন, সরকার আসছে, সরকার যাচ্ছে; কিন্তু এ অঞ্চলের মানুষের ভাগ্যের তেমন কোন পরিবর্তন হয়নি। এদিকে নদীর নাব্যতা হারানোর কারণে শুষ্ক মৌসুমে নদীতে চর জেগে উঠে। ফলে নৌ-চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
শিরোনাম:
রবিবার , ২০ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ৭ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।