মাহবুব আলম লাভলু; মতলব উত্তর : দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সংস্কার কাজ শেষ ও শুরু না করার আগেই প্রকল্প এলাকায় পানি সেচের উদ্বোধন করেছেন কর্তৃপক্ষ। ১৫ জানুয়ারী পানি সেচের উদ্বোধন করা হয়। পানি সেচের উদ্বোধন অল্প সময়ের জন্য পাস্প এলাকায় সীমাবদ্ধ থাকা ছাড়া বোরো আবাদের কৃষকের জন্য এখন পানি সেচ দেয়া হচ্ছে না। ২৯ জানুয়ারী পর্যন্ত ক্যানেল গুলোতে পানি দেয়া হয়নি। কৃষকরা পানি সেচের এ উদ্বোধনকে বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ডের স্থানীয় কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কৃষকের সাথে প্রতারনা অভিযোগ এনেছেন।
জানা যায়, মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের সেচ ক্যানেল গুলো সংস্কারের জন্য বর্তমানে ১কোটি ৪২ লাখ টাকার কাজ চলার কথা। তার মধ্যে টেন্ডারের মাধ্যমে ৮টি গ্র�পে ৬২ লাখ টাকার ও ৩০টি পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে ৮০লাখ টাকা সংস্কার কাজ চলার কথা। টেন্ডারকৃত ৮টি গ্র�পের ২টির কাজ কিছুটা চলমান থাকলেও ৬টির কাজ এখনও শুরু এখনও দেখা যাচ্ছে না। পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে ৮০ লাখ টাকা সংস্কার কাজ লক্ষ্য করা গেলেও বেশিভাগই হবে গোজামিলে কাজ। সংস্কার কাজে বরাদ্ধকৃত টাকা ভাগ লুটপাটের আশঙ্কা করছেন প্রকল্পবাসী। সচেতন মহলের সাথে কথা বলে জানা যায়,প্রতিবছর বোরো চাষের সঠিক সময়ে প্রকল্পের ক্যানেল সংস্কারের কথা বলা হয়। সংস্কার কাজের জন্য কোটি কোটি টাকা বরাদ্ধ আনা হয় । সংস্কার কাজে চলে অনিয়ম-দূর্নীতি। কাজের কাজটি কিছুই হয় না। সংস্কার কাজ গুলো যখন শুরু করা হয় তখন কৃষকের পানির দাবীতে ক্যানেল গুলোতে পানি ছেরে সংস্কার কাজ না করেও সংস্কার কাজ শেষ হয়েছে দেখিয়ে বরাদ্ধকৃত টাকা ভাগাভাগির একটা পথ অবলম্বন করে সংশ্লিষ্টরা।
১৫ জানুয়ারী পানি সেচের উদ্বোধন কর হলেও ২৭ জানয়ারী পর্যন্ত কৃষকরা পানি না পাওয়া বোরো চাষীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। কৃষকরা জানান, পানি না পাওয়াতে তার বোরোর আবাদ করতে পারছে না। বীজতলার বয়স বেশি হয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। কৃষিবিদরা জানান, ১৫ নভেম্বর থেকে ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত বোরোর বীজতলা করার উপযুক্ত সময়। ১৫ ডিসেম্বর থেকে জমিতে বোরো ধানের চারা রোপন করতে হয়। ধানের চারার বয়স ২১ দিন থেকে ৪০ দিনের মধ্যে জমিতে রোপন করতে হয়। চারার বয়স ৪০ দিন থেকে বাড়তে থাকলে ক্রমেই ধানের উৎপাদন কমতে থাকবে। এখানে বোরো ধানের চারা বয়স ৪০ পার হয়ে ৭০/৮০ দিন হয়ে গেছে। ফলে উৎপাদন বিপর্যের আশংকা রয়েছে।
এদিকে সেচ প্রকল্পের কর্মকর্তাদের সাথে কথাবলে জানা যায়, কৃষকরা সরিষার আবাদ করায় তারা পানি সেচ দিতে পারছেন না। পানি সেচ দিলে সরিষার জমি নষ্ট হয়ে যাবে। কিন্তু তাদের এ বক্তব্যের ভিন্নমত প্রকাশ করে কৃষিবিদরা জানান, অধিক ধান উৎপাদনের লক্ষ্য নিয়ে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্প নিমার্ন করা হয়েছে। ধানের মধ্যে বোরোর আবাদই প্রধান। সরিষা চাষের জন্য বোরো আবাদে ও উৎপাদনে বিপর্যয় ঘটানো যাবে না। কৃষকরা বোরো ধান আবাদের উপযুক্ত সময়ে পানি সেচ না পাওয়ায় ও পানি সেচ দেয়ার সময় পানি না পাওয়ায় বিকল্প হিসেবে বোরো ধানের জমিতে সরিষার আবাদ করছে। প্রকল্পের পাম্প হাউস থেকে পানি দেয়া হবে ক্যানেলে। প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষকরা পানি নিবে। সরিষা চাষীদের জন্য পানি সেচ বন্ধ রাখার প্রয়োজন নাই। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আব্দুল কাইয়ুম মজুমদার বলেন, কৃষকরা বোরো আবাদের জন্য জমি প্রস্তুত করে রেখেছে। পানি সেচ না পাওয়ার কারনে কৃষকরা বোরোর আবাদ করতে পারছে না। বীজতলার বয়স বৃদ্ধি ও নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নিদ্দিষ্ট সময় বোরোর আবাদ না করতে পারার কারনে কাংখিত উৎপাদন নাও হতে পারে। সরিষার জমির জন্য পানি সেচ বন্ধ রাখার প্রয়োজন নাই। উপজেলা কৃষি অফিস থেকে ডিসেম্বরের শেষের দিকে সেচ সুবিধা দেয়ার কথা বলা হলেও মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের কর্তৃপক্ষ তা মানছেন।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা এসোশিয়সনের সাধারন সম্পাদক আলাউদ্দিন জানান, পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির মাধ্যমে সংস্কার কাজ যথাযথ ভাবে করা হচ্ছে। সহসায় পানি সেচ দেয়া হবে। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের উপ প্রধান সম্প্রসারন কর্মকর্তা আঃ মতিন জানান,কৃষকের বোরো চাষের জন্য পানি সেচ দেয়া প্রয়োজন। পানি ব্যবস্থাপনা এসোশিয়সনের সাথে সিদ্ধান্ত নিয়ে ১৫ জানুয়ারীরতে পানি সেচ দেয়ার জন্য প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী কার্যালয়কে জানাননো হয়েছে। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের এসডি আরিফুজ্জামান জানান, সংস্কার কাজ করতে আরো দুই মাস লাগবে। পানি দেয়ার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি। সংস্কার কাজে কোনো কোনো অনিয়ম হচ্ছে না। তিনি বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর জানতে তার চাঁদপুর অফিসে যেতে বলেন। মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী শহীদুল ইসলাম তালুকদারের মুঠোফোনে কথা বলতে তিনি অন্য অফিসারদের সাথে কথা বলতে বলে মুঠোফোনের লাইন কেটে দেন।
পানি কখন দেওয়া হবে এবং পানি কখন পাওয়া যাবে সে বিষয়টির সমন্বয় কুষি অফিস ও পাউবো’র মধ্যে নেই। সমন্বয় না থাকায় কৃষকরা সঠিক সময় বীজতলা তৈরি ও চারা রোপন করতে পারছে না। উভয়ের সমন্বয়ের মাধ্যমে কৃষকদের সচেতন করা প্রয়োজন ছিল। তাহলে কৃষকরা সঠিক সময়ে বোরোর আবাদ করে উৎপাদন বিপর্যের হাত থেকে রক্ষা পেতো।
শিরোনাম:
বুধবার , ২৩ এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১০ বৈশাখ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।