চাঁদপুরের মতলব উত্তর উপজেলার মেঘনা ধনাগোদা সেচ প্রকল্প বেড়িবাঁধে অর্ধশতাধিক ঝুঁকিপূর্ণ সুড়ঙ্গ ও ছোট বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। ফলে এই বর্ষা মৌসুমে আতঙ্ক নিয়ে বসবাস করতে হচ্ছে সেচ প্রকল্পের ভিতরে বসবাসকারী মতলব উত্তর উপজেলার মানুষকে। অনেকে রাত জেগে পাহারাও দিচ্ছেন বেড়িবাঁধ।
দীর্ঘদিন থেকে বাঁধের এ দুরবস্থা ও ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকলেও পাউবো কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা ও দায়ীত্বহীনতায় এর সংস্কার কাজ না হওয়ায় চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে স্থানীয় জনসাধারণের মাঝে।
সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, গালিমখাঁ-বাংলাবাজার থেকে কালীপুর পর্যন্ত মূল বাঁধের অন্তত অর্ধশত স্থানে ছোট বড় সুড়ঙ্গ বা খাদের সৃষ্টি হয়েছে। ধনাগোদা, তালতলী, রায়েরকান্দি, নবীপুর, লালপুর, গোপালকান্দি বরাবর বাঁধে এইসব গভীর খাদ বা সুড়ঙ্গ দেখা দিয়েছে। বর্ষা মৌসুম হওয়ায় এবং সারাদেশে বন্যার প্রাদুর্ভাব থাকায় বাঁধের বাইরে এমনিতেই পানির চাপ বেশি। এসব সুড়ঙ্গ হওয়ায় পানি বাড়লে মূল বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে এবং হতে পারে বড় ধরনের বিপর্যয়। আবার বাঁধের উপর দিয়ে যান চলাচল করায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।
১৯৮৭-৮৮ অর্থ বছরে দেশের এই বৃহত্তম সেচ প্রকল্প নির্মাণ হলেও ১৯৮৭ সালেই হিজলাকান্দি দিয়ে প্রথমবার এবং ১৯৮৮ সালে নন্দলালপুর দিয়ে মতলব উত্তর উপজেলা রক্ষা বাঁধ ভেঙে গেলে সেচ প্রকল্পের অনেক ক্ষতি হয়। সে সময় মানবেতর জীবনযাপন করতে হয়েছে ৫ লাখ মানুষকে এবং ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে কোটি কোটি টাকার সম্পদ। তারপর থেকে আজ পর্যন্ত মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধ অক্ষত অবস্থায় রয়েছে। সেচ প্রকল্পের বেড়িবাঁধের একদিকে প্রমত্তা মেঘনা অন্যদিকে গোমতী ও ধনাগোদা নদী। তিনটি নদীর মোহনায় এমনিতেই প্রতিবছর ঝুঁকির মুখে থাকে বাঁধ।
এবার সারাদেশে বন্যা হওয়ায় পানির চাপ বেশি। তাই আতঙ্ক দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মাঝে। সেচ প্রকল্পে যে স্থানে বড় বড় গর্ত বা সুড়ঙ্গ দেখা দিয়েছে সেখানে ঘন করে গাছ লাগিয়ে বনায়ন তৈরি করা হয়েছে। ফলে গাছের শিকড় মাটি আলগা করে দিয়েছে। গাছের শিকড়ের ফাঁক দিয়ে পানি প্রবাহিত হলে বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করছে স্থানীয় বাসিন্দারা।
সেচ প্রকল্পে বসবাসকারী তালতলী গ্রামের কয়েকজনের সাথে আলাপকালে তারা বলেন, এবারে বাঁধের অবস্থা খুব খারাপ। জরুরিভাবে বাঁধ সংস্কার করা প্রয়োজন। বাঁধ ছুটে গেলে বড় ধরণের ঝুঁকির মুখে পড়তে হতে পারে আমাদের মতো সাধারণ জনগণকে।
বুধবার (২৩ আগস্ট) ধনাগোদা তালতলী এলাকায় বেড়িবাঁধ চুইয়ে ভিতরে পানি প্রবেশের খবর পেয়ে তাৎক্ষণিক উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার ওই এলাকা পরিদর্শন করেন। স্থানীয়দের সহায়তায় বাঁধের ক্ষতিগ্রস্ত স্থানে ইটের খোয়া, বালি দিয়ে সাময়িকভাবে পানি চুইয়ে বন্ধ করেন। দুরাবস্থা দেখে সেচ প্রকল্পের পাউবো কর্তৃপক্ষের প্রতি চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
বেড়ি বাঁধের বিভিন্ন স্থানে সুড়ঙ্গ রয়েছে বলে স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন। বিভিন্ন ইউনিয়নের লোকজন এ সকল স্থানের মেরামত করছেন বলেও জানা যায়।
বাগানবাড়ী ইউপি সদস্য নজরুল ইসলাম জানান, বাগানবাড়ি ইউনিয়নের বিভিন্ন স্থানে বেড়িবাঁধে সুড়ঙ্গ থাকায় আমরা আতঙ্কে রয়েছি। স্থানীয় লোকজন দল বেঁধে রাত জেগে বাঁধ পাহারা দেয়ার ব্যবস্থা করেছি।
বাগানবাড়ী ইউপি চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা নান্নু মিয়া বলেন, আমার ইউনিয়ন থেকে শ্রীরায়েরচর ব্রীজ থেকে বেলতলী পর্যন্ত রাস্তায় অর্ধশত সুড়ঙ্গ রয়েছে। বাঁধ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানি যে ভাবে বাড়ছে তাতে বাঁধবাসী আতঙ্কে রয়েছে। এলাকার মানুষ স্বেচ্ছায় বাঁধ রক্ষায় রাত-দিন কাজ করছে। বাঁধে গাছ লাগানো বা বনায়ন ঠিক নয়। কারণ গাছের শিকড় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করে।
এ ব্যাপারে মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের পানি ব্যবস্থাপনা ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সরকার মোঃ আলাউদ্দিন বলেন, বেড়িবাঁধে ক্ষতিগ্রস্ত স্থান তাৎক্ষণিক মেরামতের ব্যবস্থা কর হচ্ছে। জনগণকে সতর্ক করার জন্য মাইকিং করা হচ্ছে। তবে সেচ প্রকল্পে বসবাসকারী জনগণকে আতঙ্কিত না হওয়ার জন্য তিনি আশ্বস্ত করেন।
মেঘনা-ধনাগোদা সেচ প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী আতাউর রহমান বলেন, আমরা সার্বক্ষণিক কাজ করে যাচ্ছি। বাঁধে সুড়ঙ্গ হওয়ার বিষয়ে আমার কাছে কোন তথ্য নেই। তবে আমি প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিচ্ছি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাঁধে গাছ লাগানো বা বনায়ন ঠিক নয়। কারণ গাছের শিকড় বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত করে। বিভিন্ন কারণে বনায়নের জন্য অনুমতি দিতে হয়। তবে আমরা শ্রীঘ্রই গাছ কেটে ফেলবো।