চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দুলাল চন্দ্র সূত্রধর এবং বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সমন্বিত উদ্যোগে নবম শ্রেণীতে পড়�য়া মেধাবী ছাত্রী শাহিনা আক্তার বাল্য বিবাহ থেকে রক্ষা পেয়েছে। চাঁদপুর শহরের লেডী দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এ ছাত্রীকে তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে তার বাবা-মা বিয়ে দেয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলো। তবে এ যাত্রা সমন্বিত উদ্যোগে রক্ষা পেয়েছে শাহিনা আক্তার।
লেডী দেহলভী বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ২০১৩ সালে জেএসসিতে জিপিএ-৫ পেয়েছে শাহিনা আক্তার। সে বিজ্ঞান বিভাগে একই বিদ্যালয়ে নবম শ্রেণীতে পড়ছে। ক্লাসে তার রোল নম্বর-১। তার পিতা রুহুল আমিন গাজী এক দিন মজুর। মা খুরশিদা বেগম গৃহিণী। হতদরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও শাহিনা পড়াশোনা করে তার মেধার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছে। চার ভাই ও ২ বোনের মধ্যে শাহিনা ৫ম। তাদের গ্রামের বাড়ি সদর উপজেলার বাগড়া বাজার এলাকায়। কয়েক বছর যাবৎ থাকছে চাঁদপুর শহরের ট্রাক রোডস্থ গাজী সড়ক এলাকায়। শাহীনা জানায়, ট্রাক রোড এলাকার তাদের প্রতিবেশী এবং সম্পর্কে খালাতো ভাই সুলতান বকাউলের ছেলে এরশাদ বকাউলের সাথে তাকে বিবাহ দেয়ার জন্য তার বাবা-মা সিদ্ধান্ত নেয়। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিলো তার গায়ে হলুদ। আজ শুক্রবার তার বিবাহের দিন ধার্য ছিলো। কিন্তু শাহীনা কোনোভাবেই এখন বিয়েতে রাজী ছিলো না। এক রকম জোরপূর্বক তার বাবা-মা তাকে বিয়ে দিচ্ছিলো। শাহীনার ইচ্ছা সে আরো পড়াশোনা করবে। শাহীনা এ বিষয়টি তার স্কুলের শিক্ষকদের জানায়। ঘটনাক্রমে তার স্কুলের এক শিক্ষিকার সাথে গতকাল একটি অনুষ্ঠানে এক সাংবাদিকের কথা হলে শিক্ষিকা শাহীনার বিয়ের বিষয়টি ওই সাংবাদিককে বলেন। সাংবাদিক তাৎক্ষণিক বিষয়টি সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে জানালে তিনি সাথে সাথে স্কুলের প্রধান শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে বলেন। একই সাথে তিনি চাঁদপুর মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তাকে ঘটনাস্থলে গিয়ে বিয়ে বন্ধ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বলেন। এরপর স্কুলের প্রধান শিক্ষক মোঃ ইলিয়াছ মিয়া শাহীনাদের বাসায় গিয়ে তাকে স্কুলে নিয়ে আসেন। এ সময় জেলা মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের প্রোগ্রাম অফিসার সাজিয়া আফরিনও স্কুলে চলে আসেন। তখন ক�জন সাংবাদিকও উপস্থিত ছিলেন। পরে ইউএনওর পরামর্শ মতে প্রধান শিক্ষক একটি অঙ্গীকারনামা তৈরি করে সেটিতে শাহীনার বাবা, মা, ভাই ও বোনদের স্বাক্ষর রেখে ১৮ বছরের পূর্বে শাহীনাকে বিয়ে দিবে না মর্মে অঙ্গীকার রেখে শাহীনাকে তার বাবার হাতে তুলে দেয়া হয়। ফলে মেধাবী ছাত্রী শাহীনা বাল্য বিবাহ থেকে বেঁচে গেলো।