মেয়েকে কলেজে ভর্তি করার জন্য টাকা প্রয়োজন। বাসায় বসে থাকলে তো এ টাকা জোগাড় করা সম্ভব নয়। তাই গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হয়েছিলেন রাজশাহীর ট্রাক চালক সাইদুর রহমান। কিন্তু তার ট্রাকে পেট্রোল বোমা ছোড়ে দুর্বিত্তরা, এতে শরীরের ২৮ ভাগ পুড়ে যাওয়া সাইদুর এখন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে কাতরাচ্ছেন।
দগ্ধ পিতার বীভৎস চেহারা মেনে নিতে পারছে না মেয়ে সাথী। কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য বাবার কাছে টাকা চাওয়ায় নিজেকে অপরাধী মনে করে ক্ষোভে-কষ্টে অসুস্থ হয়ে পড়েছে সে।
সোমবার রাত ৯টার দিকে নগরীর রাজপাড়া থানার মোল্লাপাড়া এলাকায় হরতালকারীদের পেট্রোল বোমায় ঝলসে যান ট্রাক চালক সাইদুর রহমান। এ সময় দগ্ধ হন তার সহকারী শহিদুল ইসলাম বিশুও। শরীরের ২০ ভাগ পুড়ে যাওয়া বিশুও চিকিৎসাধীন রয়েছেন রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ণ ইউনিটে।
সাইদুরের স্ত্রী লাল বানু জানান, রাজশাহী কোর্ট ডিগ্রি কলেজে ভর্তি হওয়ার জন্য এক সপ্তাহ আগে ২৫০ টাকা দিয়ে ফরম তুলে আবেদনপত্র জামা দেন সাথী। ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে এক হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে ভর্তি হতে হবে। কিন্তু সেই টাকা ছিল না। এমনিতেই গত এক মাস ধরে গাড়ি বন্ধ থাকায় সংসারে টানাপোড়েন চলছিল।
তিনি বলেন, হরতাল-অবরোধে গাড়ি বের করতে রাজি হচ্ছিলেন না ট্রাকের মালিক। মেয়ের ভর্তির কথা বলে শহরের ভেতরে বালুর খ্যাপ মারার জন্য মালিককে রাজি করান সাইদুর। বিকালে ট্রাক নিয়ে বের হয়ে নগরীর নবগঙ্গা বালু ঘাট থেকে নওদাপাড়া পর্যন্ত দ্বিতীয় খ্যাপ মারার সময় মোল্লাপাড়ায় কয়েকজন যুবক ট্রাকে পেট্রোল বোমা মারে।
বোমায় ট্রাকের সামনের কাঁচ ভেঙে আগুন ধরে যায়। ট্রাক থামিয়ে নামতে নামতেই ঝলসে যান সাইদুর ও সহকারী বিশু।
লাল বানু বলেন, বাবার এ চেহারা সহ্য করতে পারছে না সাথী। ভর্তির জন্য টাকা চাওয়ায় বাবার এ অবস্থা হয়েছে মনে করে ক্ষোভে-কষ্টে সে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। প্রথম দিন হাসপাতালে আসলেও আর আসেনি।
তিন ছেলে-মেয়ের মধ্যে সাথী সবার বড়। মেজ ছেলে রাসেল সার্ভে ইন্সস্টিটিউটে পড়ে। আর ছোট ছেলে পড়ে তৃতীয় শ্রেণিতে। সংসারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি স্বামীর এ অবস্থায় অন্ধকার দেখছেন লাল বানু।
স্বামীর চিকিৎসা, এনজিওর ঋণের কিস্তি, ছেলে-মেয়ের লেখাপড়া আর সংসারের খরচের কথা ভেবে দিশেহারা হয়ে পড়েছেন তিনি।