গত দু’ বছরে চাঁদপুরে জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসনের বেশ কিছু সাফল্যজনক উদ্যেগের অন্যতম হচ্ছে পুরো জেলায় যন্ত্র দানব ট্রাক্টর চলাচল নিষিদ্ধ করা। এতে একদিকে যেমন গত দু’বছরে দানব ট্রাক্টরের থাবায় সাধারণ পথচারি নিহতের সংখ্যা কমে এসেছে অপরদিকে তেমনিভাবে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যায় নির্মিত শহর ও গ্রামের সড়কগুলো বিনষ্টের হাত থেকে রেহাই পেয়েছে। প্রাণহানির ঘটনা রোধ এবং সড়কগুলো বাঁচাতে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক আব্দুস সবুর মন্ডল ও পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার জেলার সকল উপজেলাকে ট্রাক্টর মুক্ত করতে জেহাদ ঘোষণা করেন। সেই মোতাবেক সকল থানার পুলিশ প্রশাসন ট্রাক্টরের বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করেছে। কিন্তু জেলা সদরের ৬নং মৈশাদী ইউনিয়ন এখনও ট্রাক্টর মুক্ত হয়নি। যার ফলে আশিকাটি ইউনিয়ন থেকে শাহতলী বাজার পর্যন্ত যাতায়াতের যে ফিডার সড়কটি রয়েছে তার অবস্থা একেকবারেই করুণ। সৃষ্টি হয়েছে ছোট বড় অনেক গর্তের। প্রতিনিয়তই ঘটছে দূর্ঘটনা। সরু ও ফিডার সড়কটি দিয়ে ট্রাক্টর চলাচলের সময় অন্য কোন গাড়ী চলাচল করতে পারে না। রাস্তা বা সড়কে ট্রাক্টর চলাচলের বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দিলেও সদর উপজেলা ৬নং মৈশাদী ইউনিয়নে এ নির্দেশ সম্পূর্ণরুপে অসাধু ইট ব্যবসায়ীরা উপেক্ষিত করছে।
প্রশাসনের নির্দেশকে সম্মান জানিয়ে জেলার সর্বত্র যখন ট্রাক্টর চলাচল বন্ধ রয়েছে তখন ওই ইউনিয়নে প্রতিদিন প্রায় ২০/৩০টি ট্রাক্টর চলাচল করছে। আর এসব চালকের বয়স ১৬ থেকে ১৮ এর মধ্যে।
খ্ােঁজ নিয়ে জানা যায়, ট্রাক্টর হচ্ছে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এক প্রকার ইঞ্জিল চালিত যান, যা মূলত কৃষিকাজে ব্যবহৃত করার জন্যই তৈরী করা হয়েছে। অথচ চাঁদপুর সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় এই যন্ত্রটির পেছনে বিশালাকৃতির একটি বডি লাগিয়ে তা দিয়ে ইটভাটার ইট সহ ভারী মালামাল বহন করা হচ্ছে। যার ফলে বেপোরোয়া গতির এই যন্ত্র দানবটির চালকরা এর নিয়ন্ত্রন রাখতে না পেরে প্রায়ই মানুষ হতাহতের ঘটনা ঘটাচ্ছিলো। এছাড়াও ট্রাক্টরের উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন এই যানটির চাকায় রাস্তাগুলো নষ্ট হতে থাকে। চাঁদপুরের পুলিশ সুপার শামসুন্নাহার এখানে যোগদান করেই বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরে ট্রাক্টর মালিক ও চালকদের সাথে মতবিনিয় করে সাহসিকতার সাথে জেলার সর্বত্র এই যন্ত্র দানবটি নিষিদ্ধ ঘোষনা করেন। এই বিষয়ে বিভিন্ন সভা সেমিনারে সরকারের মন্ত্রী ও স্থানীয় সংসদ সদস্যদের উপস্থিতিতে পুলিশ সুপার ট্রাক্টরের চলাচলের বিষয়ে জিরো ট্রলারেন্স ঘোষনা করেন। এছাড়াও মোবাইলকোর্টের মাধ্যমে সড়কে চলাচলরত ট্রাক্টর গুলোতে জব্দ করা হয় এবং এর চালকদের শাস্তির আওতায় আনা হয়। এতে করে প্রশাসনের এই নির্দেশকে সম্মান জানিয়ে জেলার প্রায় সকল উপজেলা ও ইউনিয়নগুলোতে ট্রাক্টর চলাচল প্রায় ৯০ভাগ কমে আসে। এতে চাঁদপুরের সচেতন মহল প্রশসনকে সাধুবাদ জানালেও চাঁদপুর সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়নে এই নির্দেশকে শতভাগ উপেক্ষা করা হচ্ছে।
গতকাল ২৫ এপ্রিল মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর উপজেলার মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদের সড়কটির উপর যত্রতত্র ট্রাক্টর থামিয়ে রাখা হয়েছে। এ ব্যাপারে মৈশাদী ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনিরুজ্জামান মানিক পাটওয়ারীর সাথে কথা বললে তিনি জানান, কতিপয় ব্যক্তিরা প্রশাসনের নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে ট্রাক্টর এই সড়কে চলাচল করাচ্ছে। আমরা ইট-ভাটা মালিকদের সাথে একাধিকবার ট্রাক্টর বন্ধের জন্য আলোচনা করেছি। কিন্তু কোন অজ্ঞাত কারণে তা চলাচল করছে আমি বুঝতে পারি না। জেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন যদি এই এলাকায় ট্রাক্টর বন্ধের জন্য অভিযান পরিচালনা করে তাহলে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান হিসেবে আমি ও আমার পরিষদের সদস্যরা সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করবে।
এ বিষয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলার নির্বাহী কর্মকতা উদয়ন দেওয়ান বলেন, চাঁদপুরের জেলা প্রশাসন জেলার সকল রাস্তা ও সড়কে ট্রাক্টর চলাচলে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। কারণ বেপোরোয়া গতির ট্রাক্টর চলাচলে একদিকে যেমনি প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে অন্যদিকে সরকারের কোটি কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত সড়কগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, এ ব্যাপারে আমরা অবগত নই। তবে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়াম্যানরা যদি আমাদের অভিযোগ দেয় তাহলে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে এর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।