চাঁদপুর নিউজ রিপোর্ট
মোবাইল ফোনে চাল তুলে হোটেল মালিকের গুলিতে নিহত কিশোর রিয়াদের জন্য মিলাদের আয়োজন করেন প্রতিবেশীরা। শুক্রবার সকালে কুরআন শরীফ তিলাওয়াত এবং দুপুরে মিলাদের আয়োজন করা হয়।
পেটের দায়ে রাজধানীর ঘরোয়া হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টে কাজ করতে আসা রিয়াদকে চুরির অভিযোগে হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল মঙ্গলবার রাতে গুলি করে হত্যা করেন।
রিয়াদের এমন মৃত্যুতে চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার হাড়িয়াইন গ্রামের প্রতিবেশীদের মধ্যে চাপা কান্না ও ক্ষোভ বিরাজ করছে। দুই সন্তানের মধ্যে ছোট ছেলেকে হারিয়ে চার দিন ধরে খাওয়া-দাওয়া ছেড়ে বিলাপ করছেন মা রোকেয়া বেগম।
বৃহস্পতিবার পারিবারিক কবরস্থানে দাফন শেষে রিয়াদের রুহের মাগফিরাত কামনায় মুঠোয় মুঠোয় চাল তুলে শুক্রবার মিলাদের আয়োজন করেন প্রতিবেশীরা।
দেড় শতাংশ বসতভিটা আর দুই সন্তান ছাড়া রিয়াদের মায়ের আর কোনো সম্বল নেই। বিয়ের সাত বছরের মাথায় স্বামীর মৃত্যুর হয়। এরপর ১৭ বছর ধরে নানা কষ্টে দুই ছেলেকে বুকে আগলে রাখেন মা রোকেয়া বেগম।
চাঁদপুর নিউজকে শুক্রবার তিনি বলেন, ‘আমার কপালে কেন সুখ সয় না? আমার এই সুখ কেন কাইড়া নিল? আমার বাবারে কেন মারছিল? তার আগে আমারে মারত। ওই জানোয়ার আমাকেও মারুক!’
বিলাপ করতে করতে তিনি বলেন, ‘পরের বাড়িতে কাজ করেছি। যাকাতের কাপড় পড়েছি। এভাবে কষ্ট করে ছেলেকে (রিয়াদ) ষষ্ঠ শ্রেণীতে ভর্তি করেছিলাম। কিন্তু পড়ালেখার খরচ চালাইতে পারিনাই। তাই হোটেলে দিয়েছি। আর সুখ হইল না। কাইড়া নিলো আমার সুখ। আমি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে দ্রুত বিচার চাই।’
রিয়াদ হত্যাকাণ্ডের প্রত্যক্ষদর্শী খালাতো ভাই মাঈনুদ্দিন। শুক্রবার সকালে সে চাঁদপুর নিউজকে বলেন, ‘রিয়াদের সঙ্গে একই হোটেলে চাকরি করতাম। ঘটনার দিন প্রথমে রিয়াদের হাত-পা বেঁধে লাঠি দিয়ে পেটায় মালিক সোহেল। এরপর থুতনিতে (চোয়ালে) গুলি করে। গুলির সঙ্গে সঙ্গে রিয়াদ মাটিতে লুটে পড়ে। মালিক সোহেল রিয়াদকে ধরে গাড়িতে তুলে নেয়। রাতেই সোহেল আমাকে দুই বার ফোন করে বলে, ছিনতাইকারীরা গুলি করেছে বলে সাক্ষী দিতে হবে।’
রিয়াদের বড় ভাই রিপন চাঁদপুর নিউজকে বলেন, ‘হোটেল মালিক সোহেলের ভাই রাসেল আমাকে ফোন করে একা ঢাকায় এসে দেখা করতে বলেছে। ঘটনার রাতে আমাকে সোহেলও হুমকি দিয়েছিল।’
নিহত রিয়াদের চাচী মুন্নী বেগম বলেন, ‘গরীব হওয়ায় গ্রামের সবাই সাহায্য করেছে। তাই ছোট আয়োজনে মিলাদ পড়ানো হয়েছে।’
প্রতিবেশী দাদী ছালেহা বেগম বলেন, ‘স্বামী ও সন্তানহারা রিয়াদের মা। এখন সে একমাত্র ছেলেকে (রিপন) কোথাও চাকরি করতে পাঠাবে না। সন্তানকে নিয়ে স্বামীর বসতভিটায় থাকবে। সরকারের উচিৎ তাগোরে একটু সাহায্য করা।’
ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন মিয়াজী বলেন, ‘রিয়াদের বাবা নেই। গরীব পরিবারটির সাহায্যের প্রয়োজন। রাষ্ট্রীয়ভাবে কিভাবে সাহায্য করা যায়, তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, কিশোর রিয়াদ (১৭) রাজধানীর মতিঝিলের ঘরোয়া হোটেল এ্যান্ড রেস্টুরেন্টের কর্মী ছিল। সে তার সহকর্মীদের সঙ্গে ওই এলাকার স্বামীবাগের ৭৩ নম্বর মিতালী স্কুলের একটি নিমার্ণাধীন বাসায় থাকত। মোবাইল ও দেড় হাজার টাকা চুরির অভিযোগ তুলে রিয়াদকে মঙ্গলবার ওই বাসাতে প্রথমে নির্যাতন এবং পরে গুলি করে হত্যা করে হোটেল মালিক আরিফুল ইসলাম সোহেল।
ওই ঘটনায় রিয়াদের বড় ভাই মোহাম্মদ রিপন বুধবার আরিফুল ইসলাম সোহেলকে আসামি করে ওয়ারী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। তবে এখনো হোটেল মালিক গ্রেফতার হয়নি। তবে জসিম নামে ওই হোটেলের এক কর্মীকে গ্রেফতার করে শুক্রবার রিমান্ডে নিয়েছে পুলিশ।