যুক্তরাষ্ট্রে ছেলেমেয়ে নিয়ে ভালই আছেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী বিউটি কুইন খ্যাত শাবানা। ঢাকাই চলচ্চিত্রের স্বর্ণালী যুগের নায়িকা শাবানা যুক্তরাষ্ট্রের নিউজার্সি অঙ্গরাজ্যে দীর্ঘ এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বসবাস করছেন।
শাবানার এক ঘনিষ্ঠ সুত্র জানায়, বাংলাদেশের পাবনার মেয়ে মহানায়িকা সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে অন্যান্য ভক্তের মত তিনিও ভীষণভাবে মর্মাহত। কারন এক সময় সুচিত্রা সেনের অভিনয় অন্যান্য অভিনেতা- অভিনেত্রীর মত তাকেও অনুপ্রেরনা যুগেয়েছিল। সুচিত্রা সেনের অসাধারণ অভিনয় তাকেও এক সময় উজ্জীবিত করে তোলে। তাই সুচিত্রা সেনের মৃত্যুতে তিনি ভীষণ মর্মাহত। নিউজার্সিতে তার দেখা পাওয়া সাধারণ মানুষের পক্ষে তো বটেই, কোনো সাংবাদিকের পক্ষেও প্রায় অসম্ভব। স্বামী, ২ মেয়ে ও ১ ছেলেকে নিয়ে তিনি এখন সুখেই আছেন। এক সময়ের জনপ্রিয় মেধাবী অভিনেত্রী, বিউটি কুইন খ্যাত শাবানা এখন আর পর্দায় নেই। কিন্তু দর্শকদের হৃদয়ে ঠিকই আছেন তিনি।
উল্লেখ্য, মাত্র নয় বছর বয়সে ১৯৬২ সালে নতুন সুর ছবিতে ছোট্ট মেয়ের চরিত্রে অভিনয়ের মধ্য দিয়ে শাবানার চলচ্চিত্রে আগমন। তার পৈতৃক বাড়ি চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার ডাবুয়া গ্রামে। তার বাবা ফয়েজ চৌধুরী চিত্র পরিচালক ছিলেন। শাবানা রত্না নামে ‘নতুন সুর’ ছবিতে অভিনয়ের পর তালাশ, সাগর, ভাইয়া সহ আরও কয়েকটি ছবিতে অভিনয় করেন।
১৯৬৬ সাল থেকে নতুন পরিচয়ে সবার সামনে আসেন বিউটি কুইন শাবানা। কারন সে বছরই বনবাসে রূপবান-এ সুলতানা জামানের কন্যা সোনাভানের চরিত্রে নায়িকা হিসাবে অভিনয় করে দর্শকদের মন জয় করেন তিনি। এরপর ‘চকোরি এবং জংলি মেয়ে’ ছবি দুটিতে প্রধান নায়িকার ভূমিকায় অভিনয় করার পর আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। শাবানা তার অভিনয়ের প্রথম দিকের কথা সম্পর্কে একবার বলেছিলেন, ‘১৯৬৭ সালে চকোরি রিলিজের পর থেকে আমার খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ল ঢাকার বাইরে লাহোর ও করাচীতে। ১৯৬৮ সালে নায়িকা হিসেবে চাঁদ আওর চাঁদনি, ভাগ্যচক্র এবং কুলিতে, ১৯৬৯ সালে দাগ, মুক্তি, ১৯৭০ সালে পায়েল, সমাপ্তি, ছদ্মবেশী, বাবুল, মধুর মিলন ও একই অঙ্গে এত রূপ এ অভিনয় করলাম। রাজ্জাক-সুচন্দা জুটির অসম্ভব জনপ্রিয়তার সময় কাজী জহিরের ‘মধুমিলন’ এর অভিনয় দেখে দর্শকরা প্রশংসা শুরু করল আমাকে নিয়ে। দ্বৈত অনুরাগের সংঘাত ও পরিণতির উপর ভিত্তি করে নির্মিত এ ছবি দর্শকের মাঝে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। আমার তো মনে হয় ‘মধুমিলন’ ছবিতে সম্ভবত প্রথম হৃদয়ষ্পর্শী অভিনয় দেখাতে সক্ষম হয়েছিলাম। স্বাধীনতার পর আবার ছবি নির্মাণ শুরু হল। শাবানা আগের জনপ্রিয়তা নিয়ে ১৯৭২ সালেই ৮টি ছবির নায়িকা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক ছবি ‘ওরা এগার জন’ আর কাজী জহিরের ‘অবুঝ মন’ করে সারা বাংলাদেশের দর্শকরা জেনে গেল শাবানার তুলনা হয় না। ঢাকার চলচিত্রে শাবানা একাই একশ।
শাবানা মোট ১০ বার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৭৭ সালে তিনি প্রথম এই পুরস্কার পান ‘জননী’ সিনেমার জন্য। এরপর ১৯৮০, ১৯৮২, ১৯৮৩, ১৯৮৪, ১৯৮৯, ১৯৯০, ১৯৯১, ১৯৯৩ এবং ১৯৯৪ সালে তিনি জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন। তার অন্যান্য পুরস্কারের মধ্যে আছে ১৯৮২ সালে নাট্য নিকেতন পুরস্কার, ১৯৮২ ও ১৯৮৭ সালে বাচসাস পুরস্কার, ১৯৮৪ সালে আর্ট ফোরাম পুরস্কার ও সায়েন্স ক্লাব পুরস্কার, ১৯৮৫ সালে ললিতকলা একাডেমি পুরস্কার, ১৯৮৭ সালে কামরুল হাসান পুরস্কার, ১৯৮৮ সালে নাট্যসভা পুরস্কার, ১৯৮৯ সালে কথম একাডেমী পুরস্কার, ১৯৯১ সালে প্রযোজক সমিতি পুরস্কার এবং জাতীয় যুব সংগঠন পুরস্কার। শাবানা ১৯৭৩ সালে ওয়াহিদ সাদিককে বিয়ে করেন। ১৯৯৭ সালে শাবানা দীর্ঘ ৩৪ বছর কাজ শেষে হঠাৎ চলচ্চিত্র অঙ্গন থেকে বিদায় নেয়ার ঘোষণা দেন। এরপর তিনি আর নতুন কোন ছবিতে অভিনয় করেননি। ২০০০ সালে তিনি সপরিবারে যুক্তরাষ্ট্রে চলে যান। এককালের ঢাকার চলচ্চিত্রের বিউটি কুইন খ্যাত শাবানা এখন পরিপূর্ণভাবে ইসলাম ধর্মের অনুসারী হয়ে জীবন যাপন করছেন।
শিরোনাম:
বুধবার , ২৬ মার্চ, ২০২৫ খ্রিষ্টাব্দ , ১২ চৈত্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
এই ওয়েবসাইটের যে কোনো লেখা বা ছবি পুনঃপ্রকাশের ক্ষেত্রে ঋন স্বীকার বাঞ্চনীয় ।