স্টাফ রিপোর্টার ॥ তথ্য প্রযুক্তির অপব্যবহার, অভিভাকদের নজদারী না থাকা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকা ও সাইকোলজিক্যাল সমস্যার কারণে অপ্রাপ্ত বয়স্ক কিশোর ও কিশোরী সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে পড়ছে। এধরণের প্রভাবে গত কয়কদিনে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন স্কুল পড়ুয়া প্রায় ৩০জন কিশোরী প্রেমের টানে ঘর ছেড়েছেন বলে চাঁদপুর সদর মডেল থানা পুলিশ জানিয়েছে। সন্তানদের প্রতি অভিভাকদের আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়ে এগিয়ে আসার কথা জানালেন চিকিৎসক ও আইনজীবী।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, সম্প্রতি সময়ে চাঁদপুর শহরের বালিকা বিদ্যালয় গুলোর সপ্তম ও অষ্টম শ্রেনীতে পড়ুয়া ছাত্রী নিখোঁজ হওয়ার অভিযোগ তাদের অভিবাবকগন চাঁদপুর সদর মডেল থানায় সাধারণ ডায়রী (জিডি) করেছেন। এ সকল জিডির সূত্র ধরে এবং সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের সাথে কথা বলে পুলিশ অধিকাংশ স্কুল পড়ুয়া কিশোরীদের উদ্ধার করে অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তর করতে সক্ষম হয়েছেন।
মডেল থানা পুলিশ সূত্রে জানা যায়, নিখোঁজ হওয়া বা প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে যাওয়া অধিকাংশ কিশোরী শহরের নামকরা বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের এবং শহরের আশপাশের উচ্চ বিদ্যালয়ের ছাত্রী। শুধু তাই নয়, এদের মধ্যে বেশকজন রয়েছে ভিন্ন জেলা থেকে চাঁদপুরে স্বজনদের বাড়িতে বেড়াতে এসেও প্রেমিকের হাত ধরে পলায়ন করেন। তবে এ সকল কিশোরীদের অধিকাংশই সপ্তম ও অষ্টম শ্রেণীর পড়ুয়া ছাত্রী।
চাঁদপুর সদর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুর রশিদের এই বিষয়ে বলেন, আমার চাকুরী জীবনে এমন ঘটনা আমি শুনিনি এবং দেখিনি। এক সপ্তাহে এতো সংখ্যক কিশোরী একটা সময়ে এ ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়েচে। এ বিষয়ে অভিভাবকদের পক্ষ থেকে থানায় সাধারণ ডায়রী করার সাথে সাথেই পুলিশ কর্মকর্তারা মাঠে নেমেছেন। অধিকাংশ উদ্ধার করে সংশ্লিষ্ট অভিভাবকদের কাছে হস্তান্তরও করা হয়।
ওসি বলেন, তবে আশ্চর্যের বিষয় হচ্ছে, উদ্ধার হওয়ার পর কোনো অভিবাবকই এ সকল বিষয়ে আইনগত ব্যবস্থাগ্রহণে রাজি হননি। এটাই এখন বড় ধরনের সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
চাঁদপুর জেলা ও দায়রা জজ আদালতের নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুানালের সাবেক স্পেশাল পিপি অ্যাডভোকেট হাবিবুর রহমান তালকুদার বলেন, ঘটনাটি আমি অবগত। বর্তমানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় অবসর সময়ে কিশোর বয়সের শিক্ষার্থীরা নেট নির্ভর হয়ে পড়েছে। ঘর বন্দিতে তারা এখন ইন্টারনেট আসক্তিতে রয়েছে। ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে বিভিন্ন সাইকো টাইপের এ্যাপসের মাধ্যমে তারা আকর্ষিত হয়ে অপরাধমূলক কাজে জড়িয়ে যাচ্ছে। এসব সফটওয়ারের মাধ্যমে তাদেরকে নানা অপরাধ ও প্রতিবাদী কাজে উৎসাহ দিচ্ছে। যার কারণে তারা গভীরভাবে কোন চিন্তা ও সিদ্ধান্ত নিতে না পেরে আবেগের মধ্যে রয়েছে। বিশেষ করে টিকটক নামে যে মাধ্যমটি এটি অনুসরণ করে ওইরূপ ধারণ করার চেষ্টা করছে। অভিভাবকদের আরো সতর্ক ও সচেতন না হলে বড় ধরনের বিপদের সম্মুখিন হতে হবে।
চাঁদপুরের সিভিল সার্জন ডাঃ মো. সাখাওয়াত উল্লাহ বলেন, পরিবারের সম্পর্ক ছিন্ন করে প্রেমের টানে ঘর ছেড়ে দেয়া শুধামাত্র একটি কারণে নয়, অনেক কারণ থাকতে পারে। এরমধ্যে করোনাকালীন সময়ে স্কুল ও কলেজ বন্ধ থাকা। মোবাইল আসক্তি হতে পারে। সাইকোলজিক্যাল সমস্যা হতে পারে। কিশোর-কিশোরীদেরকে অভিভাবক সময় দিতে হবে। ইন্টারনেটে ক্লাশ ছাড়া ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য সময় নির্ধারণ করে দিতে হবে। বাকী সময় তারা মোবাইলে কি ব্যবহার করছে তার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে।